বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদের উদ্যোগে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ টি জেলার সংগঠকদের জন্য অনলাইনে ‘নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সংগঠকদের সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ক ২ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদের সম্পাদক রীনা আহমেদ। আরো উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের বরিশাল শাখার উপ-পরিচালক দিলারা খানম। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রথম অধিবেশনে বাংলার নারী আন্দোলন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বিষয়ে আলোচনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম; বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র এবং সংগঠনের বাস্তব কাজের ধারা সম্পর্কে আলোচনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদের সম্পাদক রীনা আহমেদ; প্রচলিত আইনে নারীর অধিকার এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বাস্তব কাজের ধারা -বিষয়ে আলোচনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির লিগ্যাল এডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাকছুদা আক্তার লাইলী। প্রত্যাশা চয়ন, অনলাইন প্রশিক্ষণ রুল, কোর্স সহায়ক দল গঠন বিষয়ে ফেসিলিটেট করেন কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদ সদস্য সালেহা বানু, মডারেটর ছিলেন সংগঠনের রাঙামাটি জেলা শাখার সহ-সভাপতি মনোয়ারা আক্তার জাহান। প্রথম দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদ সদস্য শাহজাদী শামীমা আফজালী।
২য় দিনের অধিবেশনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আন্দোলনের ধারা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের আন্দোলন বিষয়ে আলোচনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী; নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সিডও সনদ বিষয়ে আলোচনা করেন আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা এবং জেন্ডার ধারণা ও নারীর ক্ষমতায়ন: প্রেক্ষিত বর্তমান নারী আন্দোলন বিষয়ে আলোচনা করেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আইনুন নাহার। আলোচনা শেষে সংগঠন/নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক দলীয় কাজ অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় কাজ ফেসিলিটেট করেন কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদ সদস্য সালেহা বানু ও আফরোজা আরমান। অধিবেশনে মডারেটর ছিলেন সংগঠনের কাউখালী জেলা শাখার সহ-সভাপতি মানবী সরকার। ১১ টি জেলা দলীয় কাজ শেষে সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সহ-সভাপতি গীতা রুদ্র। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। অধিবেশনে বক্তারা করোনার প্রভিঘাত মোকাবেলা করে অনলাইনে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের জন্য জেলার সংগঠকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা বা দূর্বোধ্যতা থাকলে তা দূর করে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং সংশোধনের ও সুযোগ তৈরি করে । একইভাবে পরিবারে – সমাজে দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য সেই দাবির প্রেক্ষিতে স্বচ্ছ ধারণা ও জ্ঞান প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করতে পারলে সংগঠকদের পক্ষে অনেক সাহস ও মনোবল নিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মত প্রকা্শ করেন বক্তারা। সংগঠনকে এগিয়ে নিতে প্রশিক্ষণ থেকে লব্ধ জ্ঞানের পাশাপাশি জেলা সংগঠকদের তৃণমূলে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য তৎপর হতে, তরুণ সংগঠকদের যুক্ত করতে, কাজের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে বক্তারা আহ্বান জানান।
।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন
নারীর অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংগঠনকে কিভাবে তৈরি করা যায় সেলক্ষ্যে আজকের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের অগ্রগতি অনেক হয়েছে, কিন্ত সমাজ এখনো অতটা অগ্রসর হয়নি। নারীর প্রতি সহিংসতায় নানা ধরণের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। আমাদের সমাজ এখনো পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শে পরিচালিত হয়। এই মনোভাব নারীদের অনেকের মাঝেও পরিলক্ষিত হয়। এই সকল অবস্থা মোকাবেলা করে সংগঠনের কাজকে সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠকদের আরো দক্ষ হতে, যৌথভাবে কাজ করতে, কেন্দ্রের সাথে জেলার কাজের সমন্বয় করতে, জেলার পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্ম -পরিকল্পনা গ্রহণ করতে এবং জেলাগুলোেকে নিজে নিজে শক্তিশালী হয়ে ওঠার জন্য এবং বর্তমানের নারী আন্দোলনের যে ক্ষেত্র পরিবর্ন হয়েছে তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সহ-সভাপতি গীতা রুদ্র বলেন সংগঠনের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে সংগঠনের কর্মীদের আরো দক্ষতার সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন সংগঠনকে এগিয়ে নিতে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্বদানকারীদের পদাঙ্ক সবসময়ই অনুসরণ করতে হবে। এসময় তিনি করোনা পরিস্থিতিতে সকলকে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে সুরক্ষিত থেকে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
উক্ত অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে মোট ৬৮ জন অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচি পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদ সদস্য হোমায়রা খাতুন।