দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন

আপডেট: মার্চ ১১, ২০২১
0

,
* স্থলাভিষিক্ত (ভারপ্রাপ্ত) হলেন এ্যাড,মনিরুজ্জামান বুলবুল

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা :

নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), সাত খুনের মামলা পরিচালনাকারী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও দুদকের মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযুক্ত এ্যাড. এস এম ওয়াজেদ আলী খোকন পদত্যাগ করেছেন।
স্ত্রী ও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হওয়ার কারনে পদ থেকে সরে দাড়ান তিনি।
বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এ্যাড ওয়াজেদ আলী খোকন।

তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত পিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এড. মনিরুজ্জামান বুলবুল। এর আগে তিনি অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

বুধবার দুপুরে এড. মনিরুজ্জামান বুলবুল এ দায়িত্ব গ্রহন করেন।
ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ২০১৫ থেকে আমি এই পদে দায়িত্ব পালন করেছি। এর মধ্যে চাঞ্চল্যকর ৭ খুন, ৫ খুন, স্মর্ণব্যবসায়ী, শিশু হত্যা, নারীহত্যা সহ অসংখ্য মামলায় সাফল্য অর্জন করেছি।
কিন্তু হঠাৎ করেই গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুদক থেকে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়, ১৯৯০ থেকে এ পর্যন্ত আমার স্ত্রীর নামে ২৭ লক্ষ টাকার অধিক সম্পদের তথ্য গোপন করেছি। আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি ৮৫ লক্ষ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছি।
৩১ বছর বিশাল ব্যবধান। জাপানে ছিলাম, ওকালতি পেশা, ৫ বছরের পিপির পেশা। এতদিনে একজন শ্রমিক বা রিক্সাওয়ালারও এর চেয়ে বেশি সম্পদ থাকে। জিনিসটা আমার কাছে খুব বিব্রতকর মনে হলো, আমি জেলা বিচার ব্যবস্থার একজন প্রধান।

আমার যারা অভিভাবক আত্মীয়স্বজন, তারা আমাকে উপদেশ দিলো তদন্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তুমি অবসর নাও। যোগ্য একজনকে দায়িত্ব দাও যোগ্য কাউকে। আমার ৭ জন এডিশনাল পিপির মধ্যে সব কিছু চিন্তা করে মনিরুজ্জামান বুলবুল সাহেবকে যোগ্য মনে করি। তাই আমি তাকে ভারপ্রাপ্ত পিপি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছি।
আমি নিজে যেহেতু বিচার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট, তাই আমি নিজেও বিব্রতবোধ করি। কারণ আমি একটা ভালো চেয়ারে বসে থাকলে তদন্ত কর্মকর্তা বার বার আমাকে স্যারই বলবে। এতে তদন্তে ব্যঘাত ঘটবে। তাই আমি তদন্তের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের দেশে সচরাচর এটা কেউ পালন করে না, আমি একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।

ভারপ্তাপ্ত পিপি বুলবুল বলেন, উনি স্বপদে বহাল থাকলে মামলার তদন্ত ব্যহত হতে পারে উনি এটা ভেবে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিয়েছেন। আমি আশা করি ওয়াজেদ আলী খোকনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে তিনি মুক্তি পাবেন।
স্বপদে ফেরা নিয়ে সাবেক পিপি ওয়াজেদ আলী বলেন, স্বপদে ফেরা বা স্থায়ী পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া মন্ত্রণালয়ের বিষয়। নতুন যিনি আসবেন বা বুলবুল ভাইও যদি আসেন আমার সমস্যা নাই। কারণ আমরা একই ব্যক্তি।
যেসব গুরুত্বপূর্ণ মামলা এখনো কার্যরত আছে সেগুলো সম্পর্কে পিপি ওয়াজেদ বলেন, ২৩টি গুরুত্বপুর্ণ মামলা আছে সেগুলো ১৫ দিনের মধ্যে নতুন পিপির কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সাবেক পিপির পদত্যাগ ও ভারপ্রাপ্ত পিপির দায়িত্ব গ্রহণের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিচার বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এড. এস এম ওয়াজেদ আলী খোকন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি মামলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দায়ের হয়।
কমিশনের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম অ্যাডভোকেট খোকন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এ বিষয়ে দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য ওই সময় বলেছিলেন, মামলায় ওয়াজেদ ও তার স্ত্রী সেলিনা ওয়াজেদ মিনুর বিরুদ্ধে প্রায় দুই কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, ওয়াজেদ আলী দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তার নিজ নামে ও তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে মোট ৮৫ লাখ ৩২ হাজার ৩৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে গোপনকৃত সম্পদসহ মোট ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।

সেলিনা ওয়াজেদ মিনুর বিরুদ্ধে ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ১৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ মোট এক কোটি এক লাখ ৫৬ হাজার ১৭৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে ##