দক্ষিণ সিটির ৯ আদালতের অভিযান; সরকারি নির্দেশনা না মানা ও স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করায় ২২ মামলায় ৬৭ হাজারের অধিক জরিমানা

আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২১
0

সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের আওতায় আরোপিত বিধিনিষেধ তদারকিতে আজ (শনিবার) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন এলাকায় একযোগে ৬ ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাদসিক এর অঞ্চল ১,২,৩,৪,৬ ও ৮ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের (আনিক) পাশাপাশি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতসমূহের নেতৃত্ব দেন।

অভিযানে সরকারি বিধিনিষেধ না মানা, স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করা এবং অনুমোদনবিহীন দোকানপাট খোলা রাখায় মোট ২২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৬৭ হাজার ৩ শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।


ঢাদসিক এর আঞ্চল-১ এর আনিক মেরীনা নাজনীন আজ কলাবাগান, কাঠালবাগান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। আদালত এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের ফুটপাতে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা একটি দোকান দেখতে পেলে তা উঠিয়ে দেয় এবং দোকানের মালামাল গরীবদের মাঝে বিতরন করা হয়। এছাড়াও অভিযানকালে তিনটার পরে খোলা থাকা ৫০টির অধিক দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

অঞ্চল ২ এর আওতাধীন ৯ নং ওয়ার্ডের ফকিরাপুল বাজার এবং ৫ নং ওয়ার্ডের বাসাবো বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় অননুমোদিতভাবে দোকানপাট খোলা রাখা ও রাস্তার উপর অনুমোদনবিহীন দোকানের পসরা সাজিয়ে বসা এবং মাস্ক পরিধান না করায় ১০ জনকে সাময়িকভাবে আটক রাখা হয়। পরবর্তীতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ না করার অঙ্গীকার করায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় আদালত পথচারীসহ প্রায় ৭০ জনকে মাস্ক পরিয়ে দেয়।

অঞ্চল -৩ এর আনিক বাবর আলী মীর বেড়িবাঁধ এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এ সময় ২৫টির অধিক অননুমোদিত দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

অঞ্চল -৪ এর আনিক মো. হায়দর আলী ৩২ নং ওয়ার্ডের নওয়াব ইউছুপ কাঁচাবাজার ও ৩৭ নং ওয়ার্ডে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে অননুমোদিত ২০টির অধিক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

অঞ্চল -৬ এর আনিক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার ৭৪নং ওয়ার্ডের নন্দীপাড়ার বড় বটতলা ও ছোট বটতলা এলাকার মার্কেট এ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় অননুমোদিত প্রায় ১০০ দোকানপাট, কাপড়ের দোকান ও সেলুন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাছাড়া মাস্ক না পরা ও লকডাউনের বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে ঘোরাফেরা করায় প্রায় ৬০ জন ব্যক্তিকে সতর্ক করা হয়।

অঞ্চল-৮ এর আনিক শহিদুল ইসলাম ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন গলিতে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ২০-২৫টি দোকানকে লকডাউন সংক্রান্ত বিধি-বিধান প্রতিপালনের বিষয়ে সতর্ক করা হয়। এছাড়া মাস্কবিহীন পথচারীদের সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে ঢাদসিক এর সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত আজ অঞ্চল-৭ এর মান্ডা এলাকার ৭১ ও ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সরকারি বিধি নিষেধ না মানায় ৮টি মামলা দায়ের ও নগদ ১২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ আজ যা পোস্তগোলা, জুরাইন, শ্যামপুর, কদমতলী, ধোলাইপাড়, মীরহাজারীবাগ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময়ে ধোলাইপাড়ে ওয়ালটন এর দুটি শো-রুমকে ২০ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এছাড়াও সরকারের নির্দেশ অমান্য করে বেলা ৩টার পরে দোকান খোলা রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করায় আরও ৪ মামলসহ মোট ৬ মামলায় ৫১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা কবীর ত্রপা অঞ্চল-১ এর জিগাতলা বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় সরকারি নির্দেশনা না মানায় ৮টি মামলার মাধ্যমে ৪ হাজার ৩ শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

অভিযান প্রসঙ্গে কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান বলেন, “আজ আমরা মান্ডা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। এই এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে মাস্ক ছাড়া লোকজন যত্রতত্র এলাকায়-রাস্তাঘাটে ভিড় করছে, দোকানপাট খোলা রেখে ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালনা করছে। যা সম্পূর্ণ বিধিনিষেধের আওতা পরিপন্থী এবং স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে উপেক্ষিত হওয়ায় আমরা এই এলাকায় আজ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছি। অভিযানে সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করায় চারটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছি। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিধি লঙ্ঘন করায় আরও চারটি মামলায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে।”

অভিযান প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আজ ৬টি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে ধোলাইপাড় এলাকায় অনুনোমোদিতভাবে খোলা রাখায় ওয়ালটন এর দুটি শো-রুমকে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারের নির্দেশ অমান্য করা ও স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করায় আরও ৪ মামলা করা হয়েছে। সবমিলিয়ে আজ মোট ৬ মামলায় ৫১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।”

অভিযানে আনিকদের সাথে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানকালে সব ক’টি আদালতই লকডাউনের নির্দেশনা মেনে চলতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষে মাইকিং করেন। এছাড়াও বিনা প্রয়োজনে অযথা বাড়ির বাইরে বের না হওয়া, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর জোর দেন।