শ্রীপুরে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দক্ষতায় অল্পের জন্য রক্ষা পেল সরকারের প্রায় আড়াই কোটি টাকা

আপডেট: জুলাই ৪, ২০২১
0

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দক্ষতায় রক্ষা পেল সরকারের প্রায় আড়াই কোটি টাকা। ভ্থয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ওই টাকা ছাড় দেওয়া হলেও অল্পের জন্য ব্যাংকের হিসাব থেকে টাকা তুলে নিতে পারে নি জালিয়াত চক্র। এ ঘটনায় জড়িত উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাসহ ৯জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ মামলার আসামী নারীসহ ৪জনকে কুড়িগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে। রবিবার শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, গত ১৭ জুন শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার স্বাক্ষরকৃত এডভাইসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীর আনুতোষিক ৫টি বিল বাবদ মোট ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯৬০ টাকা পরিশোধের জন্য সোনালী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখায় পাঠানো হয়। শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের কর্মচারী (মাস্টাররোল) তানভীর এ বিলের হার্ডকপি ও সফট কপি ব্যঅংকে নিয়ে আসেন। এডভাইস অনুযায়ী সোনালী ব্যাংকের নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম শাখায় রনজিত কুমারের সঞ্চয়ী হিসাবে বিলের ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, একই শাখায় প্রবাস চন্দ্র রায়ের হিসাব নম্বরে ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা, সুবল চন্দ্রের হিসাব নম্বরে ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমল চন্দ্রের হিসাব নম্বরে ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা ও ফুলমনি রাণীর হিসাব নম্বরে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা পাঠানো হয়। নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট হিসাব নম্বরে টাকা পাঠানোর আগে হিসাবধারীদের পরিচয় এসব এডভাইসের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ব্যাংক থেকে হিসাবরক্ষণ অফিসে ফোন করা হলে হিসবারক্ষণ কর্মকর্তা এসব অ্যাডভাইসের নিশ্চয়তা দেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার নিশ্চয়তা পেয়ে ওই টাকা সোনালী ব্যাংকের নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম শাখায় ওই ব্যক্তিদের হিসাব নম্বরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলে তারা পরদিন সোনালী ব্যাংকের নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম শাখায় যোগাযোগ করে অধিকতর যাচাই করেন। যাচাইকালে জানা যায়, হিসাবধারীরা কৃষক ও গৃহিনী। তারা কোন সরকারি চাকুরিজীবী নন। তাছাড়া দাখিলকৃত বিলগুলোতে অসঙ্গতি ও সমস্যা রয়েছে বলে একটি গোপন তথ্য পেয়ে শ্রীপুরের ব্যাংক কর্মকর্তারা ওই টাকাগুলো ‘নো পেমেন্ট’ এর জন্য সোনালী ব্যাংকের নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম শাখাকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন।

তিনি জানান, এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানা হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক বাদী হয়ে বৃহষ্পতিবার শ্রীপুর থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় শ্রীপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রহমান, কম্পিউটার অপারেটর (মাস্টার রোল কর্মচারী) তানভীর, অডিটর আরিফুল ইসলামসহ সুবিধাভোগী রনজিত কুমার, সুবল চন্দ্র মোহন্ত, কমল চন্দ্র রায়, ফুলমনী রাণী, সিবেন্দ্র চন্দ্র রায় ও শাহানা আক্তারকে আসামী করা হয়েছে। মামলায় সরকারি অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশে অভিযুক্তদের প্রতারকচক্র ও অবৈধ সুবিধাভোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এদের মধ্যে রনজিত কুমার, সুবল চন্দ্র মোহন্ত, কমল চন্দ্র রায়, ফুলমনী রাণীকে কুড়িগ্রাম থেকে শনিবার গ্রেফতার করে পুলিশ।

শ্রীপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রহমান জানান, তঁার স্বাক্ষর স্ক্যান করে অ্যাডভাইস ও বিল প্রস্তুত করে মাস্টার রোলে কর্মরত তঁারই অফিসের কম্পিউটার অপারেটর তানভীর জালিয়াতি করেছে। তিনি ৩০ জুন শ্রীপুর থানায় এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। বিলের হার্ড কপিতেও স্ক্যান করে তঁার স্বাক্ষর বসানো হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। ঘটনা পর থেকে তানভীর পলাতক রয়েছে।

এদিকে, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড উত্তরখান শাখা থেকে ওই টাকা উত্তোলনের জন্য ওই শাখার গ্রাহক শাহেনা আক্তার তার নিজ হিসাবে (নং ০১৩২১০১০০৮৭৪৮) দাখিল করে। কিন্তু ওই টাকা ছাড় দেওয়া হলেও ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দক্ষতায় অল্পের জন্য ব্যাংক থেকে সরকারের প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে পারে নি জালিয়াত চক্র।

এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানার হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রেজাউল হক বলেন, বিধি অনুযায়ী হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে এডভাইস পেলে আমরা টাকা পরিশোধে বাধ্য। মোটা অংকের টাকা হওয়ায় আমরা প্রথমে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি এর নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে আমাদের অনুসন্ধানে এ জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে।
###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
গাজীপুর।