‘বঙ্গভ্যাক্স’ ট্রায়ালের জন্য বানর ধরতে গিয়ে গ্লোব বায়োটেক এর পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী লাঞ্ছিত

আপডেট: জুলাই ৪, ২০২১
0
‘বঙ্গভ্যাক্স’ ট্রায়ালের জন্য বানর ধরতে গিয়ে গ্লোব বায়োটেক এর পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী লাঞ্ছিত

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশে উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’-এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য বানর সংগ্রহ করতে গিয়ে জনরোষের শিকার হয়েছেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে। রবিবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

লাঞ্ছনার শিকার গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেড’র মিডিয়া কনসালটেন্ট মো. আনিছুর রহমান জানান, করোনা ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে পুশ করার আগে প্রাণীর দেহে পুশ করে এর কার্যকারিতা যাচাইয়ের প্রয়োজন। সরকারি অনুমতি নিয়ে তারা বানর ধরতে গিয়েছিলেন। বরমী বাজার এলাকা থেকে ১০টি বানর ধরেন তারা। কিন্তু স্থানীয় কিছু মানুষ বানরের জন্য টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এসময় স্থানীয়রা তাদের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সাসহ বানরগুলোও ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, রবিবার সকাল ১০টার দিকে কয়েকজন লোক বরমী বাজারে বানর ধরতে আসেন। তারা খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয়দের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এক এক করে ১৪টি বানর ধরে ফেলে। কিন্তু তাদের সঙ্গে স্থানীয় কোনো প্রশাসনের প্রতিনিধি না থাকায় এলাকাবাসীর সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। পরে তাদেরকে বরমী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীরা আরও জানান, শত শত বছর ধরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারের বাসিন্দারা বানরের নানা অত্যাচার সহ্য করে যত্ন আত্তিসহ খাবার দেন। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকার পরও বানরগুলোকে বরমী বাজারবাসী অভুক্ত রাখেনি। বরমীর বানরই বরমী বাজারের ইতিহাসের অংশ। বানরগুলোকে খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে খঁাচায় বন্দি করে উপরন্তু অজ্ঞান করায় স্থানীয়রা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।

বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, বানর ধরতে আসা লোকদের কেউ লাঞ্ছিত বা তাদের কাছ থেকে কেউ কিছু ছিনিয়ে নেয়নি। এসব মিথ্যা অািভযোগ। বরং নিয়ম নীতি না মেনে স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে সন্দেহপ্রবণ ভাবে তারা বরমীর ঐতিহ্য বানর ধরতে এসেছিলেন।

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান জানান, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড কর্তৃক আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ মানবদেহে প্রয়োগের আগে বানরের দেহে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এজন্য তাদের ৫৬টি বানরের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে গত ২৬ জুন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। তাদেরকে বানর ধরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা গত ২৯ জুন থেকে তিনদিনে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও সাফারি পার্ক থেকে ৩০টি বানর সংগ্রহ করেছেন। বাকি বানর ধরার জন্য রবিবার সকালে স্থানীয় প্রশাসন ও বন কর্মকর্তাদের অবগত না করেই শ্রীপুরের বরমী বাজারে গেলে স্থানীরা তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। এ ঘটনায় পুলিশ তাদের উদ্ধার করলেও বানর ধরে নিয়ে যেতে পারেননি।

শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, স্থানীয় জনতা তাদেরকে পাকড়াও করে বানরগুলো ছেড়ে দেয়। এর মধ্যে অজ্ঞান করায় দুটি বানর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সেগুলোকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বায়োটেক গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস এর আট কর্মকর্তাকে ক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তাদের কাছে থাকা বন মন্ত্রণালয় ও বনবিভাগের অনাপত্তিপত্র তথা কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।