অপরিকল্পিত লকডাউনে দেশের নিরন্ন ও বুভুক্ষ মানুষের আহাজারী চলছে আত্মহত্যা করছে– সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স

আপডেট: জুলাই ৬, ২০২১
0

সরকারের অপরিকল্পিত চলমান লকডাউনে বাংলাদেশের জনপদে নিরন্ন ও বুভুক্ষ মানুষের আহাজারীতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দিনমজুর ও নিম্ম আয়ের মানুষ বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি আজ নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

লকডাউনে কাজ না থাকায় ছেলে-মেয়েদের মুখে ভাত তুলে না দিতে পেরে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর মুক্তারপুর এলাকায় নিজ বাড়ীতে দিনমজুর দ্বীন ইসলাম আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। নির্মম ও বেদনাদায়ক এই ঘটনাটি ঘটেছে গত ৪ জুলাই দুপুরে।

অথচ সরকারের মন্ত্রী-কর্মকর্তারা হরহামেশাই বলে যাচ্ছেন-তারা পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন, কেউ না খেয়ে নেই, না খেয়ে মারা যাবে না কেউ, ইত্যাদি ইত্যাদি। মুক্তারপুরে দ্বীন ইসলামের মতো দেশের অগণিত মানুষ এধরণের নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখী। এই দায় কার ? অবশ্যই এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। শুধু তাই নয়, সরকারের অব্যবস্থাপনা, ভ্রান্ত নীতি ও অবহেলা-উদাসীনতায় করোনা চিকিৎসায় যে সংকট দেখা দিয়েছে, অক্সিজেনের অভাবে প্রতিদিনই মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, এই মৃত্যুর দায়ও সরকারকেই নিতে হবে।

সরকারের মন্ত্রীরা তাদের ব্যর্থতা আড়াল করতে প্রতিদিনই বিএনপি’র বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। তারা নাকি দূরবীন দিয়ে বিএনপি-কে খুঁজে পাচ্ছেন না, বিএনপি নাকি মিথ্যাচার করছে। এসব কথা বলে তারা দেশের যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তা থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে ব্যর্থ অপচেষ্টা করছেন, এসব অযৌক্তিক ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ সময়ে জনগণের জীবন নিয়ে চিন্তা না করে মশকরা করছেন, তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ ও মাউথ ল্যাংগুয়েজে সেটাই ফুটে উঠছে। সরকার দেশের ৬৪টি জেলায় করোনার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ কল্পে যাদেরকে দায়িত্ব প্রদান করেছিল এখনও পর্যন্ত তাদের কোন দৃশ্যমান তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি।

সরকারের বাগপটু মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-বিএনপি-কে দূরবীন দিয়ে খোঁজার প্রয়োজন নেই, বিএনপি জনগণের প্রয়োজনে পাশে আছে, বিএনপি-কে না খুঁজে পরিহাস বন্ধ করে জনগণকে বাঁচানোর জন্য টিকা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, খাদ্য, অর্থ নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ান। তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন। আপনাদের ব্যর্থতায় মানুষ প্রতিদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এই মৃত্যুর দায় মাথায় নিয়ে জনগণের কাঠগড়ায় আপনাদেরকে দাঁড়াতেই হবে।

আর মিথ্যাচার বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগ করছে। সবচেয়ে বড় মিথ্যা ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরে। রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অনুগত ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের এক অংশের সহায়তায় দিনের ভোট রাতে করে নির্বাচনকে ব্যর্থ করে দিয়ে যারা জোরপূর্বক ক্ষমতায় আছে, তারাই চরম মিথ্যা ও দুর্নীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মুখে বিএনপি’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ শোভা পায় না। বরং আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে ইতিহাস বিকৃতি এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে চলেছে অবিরাম গতিতে। তারা ইতিহাস ও সত্যকে ভয় পায় বলেই শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে যারপর নাই মিথ্যাচার করছেন। তবে জনগণ সত্য ইতিহাস জানে। আপনাদের মনগড়া ইতিহাস জনগণ বিশ^াস করে না।

লাগামহীন মিথ্যাচার ও জনগণের ভোটের অধিকার খর্বের জন্য আপনারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। জনগণের এই চরম দুঃসময়ে বিএনপি জনগণের পক্ষে কথা বলার কারণে সরকারের লিপ সার্ভিস দেয়া মন্ত্রীরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আবার জেলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। জনগণকে রক্ষা না করে, সারাদিন বিএনপি’র বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অসত্য বয়ান আর জেল-জুলুমের হুমকি দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তারা। বেগম খালেদা জিয়া এখনও মুক্ত নন, তিনি কার্যত: এখনও বন্দী। বিভিন্ন শর্তের বেড়াজালে তাঁর সুচিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বারবার জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে বিএনপি-কে জনগণের পক্ষে কথা বলা থেকে বিরত রাখা যাবে না। এই চরম দুর্দিনেও সরকার বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। ময়মনসিংহ, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে হয়রানী করা হচ্ছে।

বিএনপি বারবার বলেছে-করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে গণটিকা ছাড়া এই মহামারী মোকাবেলা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে লাভবান করার জন্য একটি মাত্র উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে বিপাকে ফেলেছে, জনগণের জীবন-জীবিকা-কে বিপন্ন করে তুলেছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভুল সিদ্ধান্ত, সময় মতো সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ না নেয়া, অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে অক্ষমতা এবং সার্বিক অদক্ষতা ও অযোগ্যতার জন্য পরিস্থিতি আজ লেজে-গোবরে তথা হযবরল অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। আমরা আগেই বলেছি-এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সরকার বারবার সাধারণ ছুটি, বিধি-নিষেধ, কঠোর বিধি-নিষেধ, লকডাউন, সীমিত লকডাউন, কঠিন লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে এসব পদক্ষেপ কার্যকর হচ্ছে না, বরং জনগণের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। আমরা বারবার এও বলেছি যে, রাজনৈতিক ও সামাজিক তথা জনগণকে সম্পৃক্ত করা ছাড়া কোন পদক্ষেপই সফল হয় না।

লকডাউনে সমাজের যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়-অর্থাৎ নিম্ম আয়ের দিন আনে দিন খায় মানুষ, বেকার-কর্মহীন মানুষের দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ছাড়া এসব পদক্ষেপ কার্যকর হয় না। যার ফলে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সম্ভব তো হচ্ছেই না, বরং জনগণের জীবন বিপন্ন হচ্ছে, মানুষের নাভিশ^াস উঠছে। সরকারের ব্যর্থতায় প্রতিদিন মানুষ কাজ হারাচ্ছে, দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে, এমনকি মধ্যবিত্তরাও ব্যবসা-বানিজ্যের স্থবিরতায় তাদের আয় সংকুচিত হচ্ছে। এবারও লকডাউনের আগে আমরা সরকারকে বলেছিলাম-এই শ্রেণীর মানুষের হাতে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা পৌঁছে দিতে। সরকার তা করে নাই। যার ফলে পরিবহন শ্রমিক, দিনমজুর, নিম্ম আয় এবং কর্মহীন-বেকার মানুষের জীবন ধারণ এখন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। মানুষ পরিস্থিতির শিকার হয়ে নিদারুণ কষ্ট করছে। অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে মানবেতর অবস্থায় দিন যাপন করছে। খাদ্য ও অর্থাভাবে ক্ষুধার তাড়নায় লকডাউনে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, অন্যদিকে রাস্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে এবং জরিমানার শিকার হচ্ছে। সবমিলিয়ে মনে হচ্ছে আমরা এক হীরক রাজ্যে বসবাস করছি।

সরকার করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে সহায়তার নামে যে বরাদ্দ দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা জনগণের সাথে তামাশা করা ছাড়া কিছুই নয়। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে কয়বার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা কোন সময় মাথাপিছু ১১ পয়সা, কিংবা ১৪ গ্রাম চাল। বর্তমানেও চলমান লকডাউনে যে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে তা মাথা পিছু ৭ দিনের হিসাবে ১৩ টাকারও কম। এখন বলা হচ্ছে ঈদের আগে দশ কেজি করে চাল দেয়া হবে, তাহলে ঈদের আগ পর্যন্ত এই লকডাউনে মানুষ কি খেয়ে বাঁচবে।

প্রকৃতঅর্থে, এই বরাদ্দও এখন পর্যন্ত ছাড় হয়নি এবং তা জনগণের হাতে পৌঁছে নাই। তাহলে কি এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, গেরস্থের গরু কেতাবেই আছে, গোয়ালে নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গরীবের হক নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা লুটের মহৌৎসব চালাচ্ছে, যা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই তারা জনগণের দুর্দিনে জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার এবং লুটপাট ও দুর্নীতিতে ব্যস্ত।