জাতিসংঘের কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উইমেন (সি এস ডব্লিউ) এর ৬৬ তম অধিবেশনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে প্যারালাল ইভেন্ট অনুষ্ঠিত

আপডেট: মার্চ ২১, ২০২২
0

জাতিসংঘের কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উইমেন (সি এস ডব্লিউ) এর ৬৬ তম অধিবেশনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে অনলাইনে প্যারালাল ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১৪ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উইমেন (সিএসডব্লিউ) এর ৬৬ তম অধিবেশন শুর হয়েছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের স্ট্যাটাসভূক্ত সহযোগী সংগঠন হিসেবে প্রতিবছরের মত এবারেও– সি এস ডব্লিউ এর ৬৬ তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছে।

২০ মার্চ ২০২২ (রবিবার) সন্ধ্যা ৬:০০ টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে জাতিসংঘের কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উইমেন (সিএসডব্লিউ) এর ৬৬ তম অধিবেশনে ‘‘নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: কোভিড-১৯ এর প্রভাব এবং উত্তরণের উপায়’’ বিষয়ক প্যারালাল ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয় অনলাইনে।

উক্ত ইভেন্টে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সংগঠনের পক্ষে কী-নোট পেপার উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। সম্মনিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের লেকচারার তানভীর মাহমুদ।

কী-নোট পেপার উপস্থাপন কালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন বাংলাদেশের মোট কর্মরত জনসংখ্যার ৯১.৩% অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত, এর মধ্যে ৯৬.৭% কর্মরত নারী এবং ৮৮.৭% কর্মরত পুরুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যুক্ত। কোভিডের প্রাদুর্ভাব নারীদের সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রাপ্তির সুযোগকে সীমিত করে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, অবৈতনিক কাজের চাপ বৃদ্ধি এবং পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সংকটের জেন্ডারভিত্তিক প্রভাবকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এসময় তিনি কয়েকটি সংস্থার (ব্র্যাক, ইউএন উইমেন, ই্উনেপ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন) প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে আরো বলেন অবৈতনিক পরিচর্যা কাজের বিভাজনের ক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্য এখনো বিদ্যমান আছে; প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ৫৫৭ জন নারীর মধ্যে ৯১ শতাংশ নারী বেশি পরিমাণে অবৈতনিক পরিচর্যার কাজ করছেন, মাত্র ১৪% নারী তাদের গৃহস্থালির কাজে স্বামীর সহায়তা পেয়েছেন। ৯৮% নারী পারিবারিক সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন যার মধ্যে ৪৮% মানসিক, ১৯% শারীরিক, ৩১% অর্থনৈতিক এবং ২% যৌন নির্যাতনের শিকার। ৪১% নারী উদ্যোক্তাকে তাদের কর্মচারী ছাঁটাই করতে হয়েছে; ৬৫% নারী উদ্যোক্তার কোনো আয় ছিলো না, তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ (৩৩% নারীকে) ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন এর ফলে ৯০% নারী উদ্যোক্তা এবং ৯৭% অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নারী কর্মী আর্থিক সংকটের কারণে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। অন্যদিকে হাজার হাজার নারী অভিবাসী শ্রমিক কোন বেতন ছাড়াই নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে এবং তারা আর্থিক সংকটের পাশাপাশি সামাজিকভাবে নিন্দা ও অপবাদের সম্মুখীন হচ্ছেন। ৭৮% নারী প্রধান পরিবার আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এই সকল সমস্যাগুলো এখন বৈশি^ক সমস্যা তাই প্রতিটি দেশকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলা করে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে তরান্বিত করতে তিনি এসময় জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা, বাল্যবিবাহ বন্ধে এবং শিক্ষাক্ষেত্রের মান উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য অনানুষ্ঠানিক সেক্টরের কর্মীদের জন্য জাতীয় ডাটাবেজ তৈরি ও তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা; ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থাকে যুক্ত করা; নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে নির্দিষ্ট স্টিমুলাস প্যাকেজ চালু করতে হবে; জাতীয় সংকট ব্যবস্থাপনার কৌশলগত নীতিমালায় জেন্ডার সংবেদনশীল পরিকল্পনা তৈরি ও সংযুক্ত করতে হবে, গৃহকর্মীদের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ যথাযথ আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রদান, অভিবাসী নারী কর্মীদের গৃহস্থালি সহায়তা কর্মী হিসেবে নিবন্ধিত করতে তালিকাভূক্ত করা যাতে তারা ক্ষুদ্র পরিসরে উদ্যোক্তা হিসেবে সেবা দিতে পারে; কাজের চাপ কমাতে শ্রম ও সময় সাশ্রয়ী সরঞ্জামে বিনিয়োগের জন্য আর্থিক প্রণোদনার উপর জোর দেয়ার কথা বলেন

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ইউএনডিপি চার বছরের কর্মসূচীতে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কোভিড অভিঘাত মোকাবেলা করে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন কে টেকসই করতে ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেনিং কর্মসূচি হাতে নিতে হবে, তারা অনেকে জানে না কিভাবে অনলাইনে পণ্য বিক্রি করতে হয়, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দিতে হবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে হটলাইন নাম্বার সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে, মাতাপিতা ও কাজীকে সচেতন হতে হবে, শিক্ষা কারিকুলামে এসম্পর্কে যুক্ত করতে হবে। যারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভিবাসী হয়েছে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনতে হবে। যেসকল মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে তাদের অনলাইন শিক্ষার আওতায় আনতে হবে, স্পেশাল ইনসেনটিভ প্রোগ্রাম নিতে হবে। স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জেন্ডার ইস্যূর আলোকে আরো উন্নত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের লেকচারার তানভীর মাহমুদ বলেন, কোভিডের কারণে গৃহখাতে সৃষ্ট জেন্ডার অসমতা কমিয়ে আনতে অধিক কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে, জেন্ডার গত আচরণে আরো সচেতন হতে হবে। নারী ও পুরুষের কোভিড অভিঘাত মোকাবেলার ক্ষেত্র ভিন্নভাবে চিহিœত করতে হবে। নারীদের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে আরো দক্ষ করে তুলতে হবে।

মডারেটারের বক্তব্্েয সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আমাদের প্রথম কাজ হবে কোভিড মোকাবেলা করে নারীর পূর্বের অর্জন ফিরিয়ে আনতে কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করা, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করতে হবে, যাতে নারীরা নিরাপদে কাজ করতে পারে। নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করতে হবে, মানবাািধকার সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। জেন্ডার ভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরির উপর জোর দিতে হবে এবং জেন্ডার বাজেট বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ে জোর দিতে হবে।

উক্ত প্যারালাল ইভেন্টে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম সহ সম্পাদকমন্ডলী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল উইমেন পিস গ্রুপ সহ বিভিন্ন বিদেশী সংস্থার প্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও সংগঠনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।