ডলার সংকটের সময়ে রপ্তানিতে সুখবর

আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২২
0

আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলার সংকটের মধ্যেই রেমিট্যান্সের পর এবার রপ্তানিতেও সুখবর এসেছ। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এ দুটি খাতেই ইতিবাচক ধারা বইছে। ডলার সংকটের এই সময়ে এ খবর সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতিতে স্বস্তির আভাস বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৯২০ মিলিয়ন ডলার। সেখানে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৮৪ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

গত অর্থবছরের জুলাই মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৩ হাজার ৪৭৩ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে ২০২১ সালের জুলাই মাসের তুলনায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে ৫১ কোটি ১৩ লাখ ৯ হাজার ডলারের বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে, যা শতাংশের হিসাবে ১৪ দশমিক ৭২।

তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৩৬ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার ডলার, যা ২০২১ সালের জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছিল ২৮৮ কোটি ৭২ লাখ ১০ হাজার ডলার। অর্থাৎ ২০২১ সালের জুলাই মাসের তুলনায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে ৪৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার রপ্তানি আয় বেড়েছে, যা শতাংশের হিসাবে বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬১।

রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নিয়ে পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেলের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, এখন কঠিন সময় চলছে। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। ডলারের বিপরীতে ইউরোর মান কমছে। শিল্পের কাঁচামালের পেছনে খরচ বাড়ছে। তবে এর মধ্যেও পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি শিল্পের সহনশীলতা প্রকাশ করছে। যদিও বৈশ্বিকভাবে বড় অর্থনীতিতে মন্দার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে ৫২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) চেয়ে বেশি আয় হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে কঠিন সংকটে পড়ে বিশ্ব। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে সংকট তীব্র হতে থাকে। জ্বালানিসহ প্রায় সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। এ ধাক্কা লাগে বাংলাদেশেও। আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের আমদানির পেছনে বিপুল পরিমাণ ডলার খরচ হয়ে যায়। একপর্যায়ে সরকার ডলার সাশ্রয়ে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। তারপরও ডলারের দাম বাড়তে থাকে, টাকার মান কমে যায়। এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

তবে আশার কথা হলো, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে ডলার আয়ের অন্যতম প্রধান দুটি খাত রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে সুখবর পাওয়া গেছে। জুলাই মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি। এই মাসে ২১০ কোটি (২ দশমিক ১০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। একদিকে রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকা, অন্যদিকে প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ার ফলে ক্রমাগত বাড়তে থাকা ডলার সংকট সামনের দিনগুলোতে কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এরই মধ্যে নানান কড়াকড়ির ফলে আমদানি প্রায় ৩১ শতাংশ কমেছে। একদিকে আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডলার সাশ্রয়, অন্যদিকে ডলার আয়ের প্রধান দুটি খাতের ইতিবাচক ধারা সামনের দিনগুলোতে সরকারের ডলারের মজুত বাড়াতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।