‌`ভুমিকম্প কেন কিভাবে হইছে বা হতে পারে বা হয়’

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩
0


ডা,জাকারিয়া চৌধুরী :

ভুমিকম্প কি জানেন তো ? ভুমিকম্প হইলো ধরেন এক প্রকারের দুলুনি। দুলুনি কি জানেন তো ? ধরিত্রীর কেঁপে উঠা……… নির্দিষ্ট কোন কেন্দ্র থেকে এর উৎপত্তি হয়। এর শক্তির উপর নির্ভর করে এফেক্টেড এরিয়া কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এবং তাঁর মাত্রা কত কম বা বেশি হবে। মানে বুঝানোর জন্য বলা আর কি ! যদ্দুর বলেছি, আশা করি পাঠকেরা এরচে ভাল জানেন।

ভুমিকম্প কয় প্রকার ? দুই প্রকার। আজকের লেখায় রসকস নাই। যাদের ভাল্লাগবে না তারা আগেই সাইডে যান। তো যা বলছিলাম কমরেডস ভুমিকম্প দুই প্রকার –
১. ন্যাচারাল আর্থকোয়েক না প্রাকৃতিক ভুমিকম্প ।
২. আন ন্যাচারাল বা আন ন্যাচারাল বা অস্বাভাবিক কিংবা মনুষ্য সৃষ্ট ভুমিকম্প।
মন্যষ্য সৃষ্ট ভুমিকম্প আবার কিরুপ ?এইটা করা হয় পারমানবিক বিস্ফোরন ঘটিয়ে। এখন সবাই হই হই শুরু করেন। পারমানবিক বিস্ফোরন কিংবা পরীক্ষামুলক বিস্ফোরন ভি নিষিদ্ধ সারা জাহানে। হ্যাঁ নিষিদ্ধ। সারা জাহানে এ বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরন নিষিদ্ধ। সেই নিষিদ্ধ স্থান হইলো জলে, স্থলে আর অন্তরীক্ষে। এ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি রয়েছে। এক্র বলে ( Treaty on the Non-Proliferation of Nuclear Weapons, ) এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করা দেশের সংখ্যা ১৯০ টি। স্বাক্ষর না করা দেশ মোটে চারটি। ভারত পাকিস্তান ইসরায়েল এবং সাউথ সুদান। কিন্তু মাটির গভীরে পরীক্ষা করা যাবে না, চুক্তিতে এই অংশটা চিটিং করে বাদ রাখা হইছিল। যার কারনে ভারত ,পাকিস্তান মাটির গভীরে এর টেষ্ট ট্রায়াল করেছিল।

প্রাকৃতিক ভুমিকম্প কিভাবে হয় চলেন এইট নাইনের পড়ায় যাই। বেশিরভাগ ভূমিকম্পের কারণ হল ভূগর্ভে ফাটল ও স্তরচ্যুতি হওয়া কিন্তু সেটা অন্যান্য কারণ যেমন অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, খনিতে বিষ্ফোরণ…… অগ্ন্যুৎপাত। এই ঘটনাটা ঘটে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ ধরে। আগ্নেয়গিরি যেন কয় প্রকার ! তিন প্রকার। মৃত আগ্নেয়গিরি, সুপ্ত আগ্নেয়গিরি, একটিভ বা সচল আগ্নেয়গিরি। এই তিন প্রকারের আগ্নেয়গিরিতেই কমন একটা মিল আছে। সেইটা কি ? সেইটা হইল, বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থাকে উচু পাহাড়ের সর্বোচ্য পিক পয়েন্টে। কেন ? পিক পয়েন্টে কেন ? কারন, আমাদের পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু থেকে ১৭০০ কিলো ব্যাসার্ধের বৃত্তীয় গোলকটা যাস্ট একটা লিকুইড সুর্য। সেখানে সুর্যটা অবিরাম স্পিন করছে। এই সুর্য যদি ক্লকওয়াইজ স্পিন করে তাহলে পৃথিবী তার নিজ কক্ষপথে এন্টিক্লকওয়াজ স্পিন করে সুর্যের চারদিকে সমান্তরাল বৃত্তীয় পথ অনুসরন না করে খুব সামান্য স্পাইরাল পথ অনুসরন করে ঘুরে।

( এই বিষয়ে আজ আর কিছু বলব না। ) যা বলছিলাম কমরেডস, পৃথিবীর কেন্দ্রে ১৭০০ কিমি ব্যাসার্ধের যে লিকুইডটা জ্বলছে, সুযোগ বা ছেদ্র কিংবা দুর্বল একটু স্থান পেলেই সেই লিকুইড উপরে উঠে আসতে চায়। যখন সে এনিহাও সব গলিয়ে সারফেসে চলে আসতে পারে সেটাই আগ্নেয়গিরির লাভা হিসেবে ভুমিতে নির্গত হতে থাকে। সেই লাভা চারদিকে ছড়িয়ে পরে শত শত কিমি জুড়ে। ইটালির পম্পেই শহরটা এভাবে-ই মুহর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যে আগ্নেয়গিরির আগুন কমপক্ষে এটা এতোটাই সাডেন স্ট্রাইক ছিল যে, মানুষগুলো মরার সুযোগ পায়নি। যে যেভাবে ছিল সে সেভাবেই প্রথমে অগ্নিগোলক হয়ে গেল। ধীরে ধীরে লাভা নি:সরন শেষ হল, সেসব ঠান্ডা হল। এখনো পম্পেই নগরীতে যেসব কংকাল পাওয়া যায় সেগুলো পাথর হয়ে যাওয়া মানুষ। এমন অগ্নিগিরি সাগরেও উঠে আসে। কখনো কখনো শত বছরের লাভা জমে জমে আস্ত একটা দ্বীপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ইটালির ভিসুভিয়াস, জাপানের ফুজিয়ামা কিংবা সাউথ আফ্রিকার কিম্বার্লি ভুমিকম্পের জ্বলজ্বলে উদাহর। আরেকটা কথা বলে রাখি। অগ্নিগিরির লাভা ছাড়া দুনিয়ার কোথাও কিন্তু হিরে পাওয়া যায় না। ( কিভাবে সেটা হয় সে কথাও না হয় অন্যদিন বলব )।

৭০-৮০’র দশকেও জাপানে মেগা স্ট্রাকচার বানানোতে সরকার কিংবা জনগনের ভীতি ছিল। জাপানে প্রতিদিন সামান্য মাত্রার ভুমিকম্প হত। জাপানিরাও ঘর বলতে কাঠ দিয়ে বানানো বিউটিফুল কিছু ছোট ছোট বাড়িকেই বুঝত। দিনকে দিন ফুজিয়ামা দুর্বল হতে থাকল, জাপানও বিল্ডিং বানাতে শুরু করল। এখন তো জাপানের টেকনোলজি এমন স্তরে গিয়ে দাড়াইছে যে, তারা দশ মাত্রার ভুমিকম্প সহ্য করতে পারে, এমন স্ট্রাকচারের বিল্ডিং বানায়। সারা দুনিয়ায় এখন দুই একটার বেশি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি আর অবশিষ্ট নেই। কিছু আছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। সেগুলা এখন গুপ্ত প্রায়। মাটির নিচের তেল, গ্যাস এক্সপ্লোসিভ যা ছিল তাঁর বেশিরভাগ অংশই আমরা ইতিমধ্যে ব্যাবহার করে ফেলেছি। ওইসব জিনিসের আলাদা একটা হিউজ প্রেশার থাকে সয়েল সারফেসে। সিলেটের হরিপুরে যান। সেখানে দেখবেন একটা পুকুর আছে। নাম উতলা পুকুর।

এ পুকুরে বারোমাস ২৪/৭ পানি খালি উৎলায়। কেন উৎলায় ? সেখানকার ক্রুড ওয়েল কুপগুলো সিল করা হয়ে গেছে খুব সম্ভবত ১৯৫৫ সালে। কিন্তু সব তেল গ্যাস সে সময়ে তোলা সহজ ছিল না। ফলে রেসিডুয়াল যে গ্যাস আছে তা মাটির নানা ফাক্কর ফোক্কর দিয়া বের হয়। ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে ছুড়ে ফেললে সেই পুকুরের পানিতে-ই আগুন জ্বলে। আচ্ছা এই উতলা পুকুর যদি সামান্য একটা খাদ না হয়ে বিশাল জলাশয় হত তখন কি হত ? তখন সেখানে নিজ থেকেই আগুন জ্বলত। কারো বুক কাউকে জ্বালিয়ে দিতে হত না। জলাশয়ে কেন নিজ থেকে আগুন জ্বলত ?

কারন সেখানে ঘাস লতাপাতা যুগযুগ ধরে পচে গলে মিথেন গ্যাস জমে থাকে, সেই মিথেনের সাথে থাকে সামান্য পরিমান ফসফরাস। ফসফার অক্সিজেনের গন্ধ পেলেও কেদে উঠে মানে জ্বলে উঠে। এখানে-ই ফসফরাসের ফাংশন শেষ। হ্রদের বুকে দাও দাউ করে জ্বলতে থাকে মিথেন। ( আমরা চুলায় যে গ্যাস ব্যাবহার করি সেটা-ই মিথেন )। এই বুদবুদ যতক্ষন আসে ততক্ষন জ্বলে। তারপর দেখা যায় হ্রদের অন্য কোথাও আগুন জ্বলছে, জ্বলছি আমরা। ক্ষনে ক্ষনে আগুন বিভিন্ন স্থানে জ্বলে আর নিভে………… জ্বিন যেহেতু আগুনের তৈরী, সেহেতু শিশুবেলায় আমরা আমাদের চম্পার দিঘীতে আলোর এ মেলা দেখতাম আর গুনে গুনে শিউর হতাম কে কয়টা জ্বিন দেখেছি। অথচ এ হলো এক মরিচিকা অথবা এ হলো আলেয়া ( will-o-the-wisp )। এখন যেহেতু সেই প্রেশার নাই , অত দিঘীনালা নাই, অত ক্ষনিমনি নাই তা-ই ন্যাচারাল ভুমিকম্পের কারন হতে পারি ভুমিধ্বস ( land slide )। কেন ভুমি ধ্বস ? কারন আমরা কয়লা, তেল, সোনা, দানা, বিচি সব তুলে মাটির নিচে মাইলকে মাইল ফোকর করে রেখেছি। সেসব ধ্বসে পরে ভুমিকম্প হতে পারে।

আবার যেসব টেকটনিক প্লেটের উপর দেশ, মহাদেশ বা মাটি স্তর দাঁড়িয়ে রয়েছে সসবও ন্যাচারাল কারন হতে পারে। শুনেছি দুনিয়ায় বহুবার পৃথিবীর সেন্টার এবং এক্সিসের দ্বিমুখী স্পিনিং এর কারনে এসব প্লেট বছরে আড়াই সেমি দূরে সরে যায় একে অপর থেকে। দূরে সরে যাওয়া মানে অন্যের কাছে যাওয়া। এভাবে লক্ষ কোটি বছরে দেশ নহাদেশ গুলো যেমন অকে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে তেমনি এক সময় সেসব আবার এনাদার কন্টিনেন্টের সাথে যুক্ত হয়। এর ধাক্কাটা আমরা সাধারন চোখে যা দেখি তা নায়, আমরা যা দেখিনা কেবল তা-ই হয়। ধাক্কাটা মুখোমুখি হলে সেখানে দানবাকৃতির পর্বতের জন্ম হয় আবার বিভিন্ন ফাটলের ঘটনাও ঘটে। এই ফাটল ভেদ করে অগ্নিলিকুইড বের হয়ে আসা-ই আগ্নেয়গিরি। ধরনী কেওএ উঠে, কোথাও দ্বিধা হয়। এই প্লেটগুলো সমান্তরে চলতে গেলে কখনো কখনো একে অন্যের উপর উঠে যায়। এর ফলেও পাহাড় পর্বতের জন্ম।বলা চলে বাকি আর রইল কি ? আসে বিশাল সুনামি।

লেখক , নির্বাহী সম্পাদক দেশ জনতা ডটকম