না’গঞ্জের বন্দরে জমি দখলের চেষ্টা পুলিশ সেই জাপার অস্ত্রধারী ক্যাডারদের ধরছেনা!

আপডেট: মার্চ ২৬, ২০২৩
0
jomi dokhol

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় এলাকায় জমি দখলের চেষ্টাকালে এক দম্পতিকে গুলিবিদ্ধ করার মামলায় জাপার অস্ত্রধারী ক্যাডাররা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঘটনার ৯ দিনেও মূলহোতা আলী হায়দার ওরফে পিজা শামীমসহ অস্ত্রধারী ক্যাডারদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, অস্ত্রধারী আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মামলার আসামিরা নারায়ণগঞ্জের আতঙ্ক ‘হোন্ডা বাহিনী’র সদস্য। তাঁদের সবাই আজমেরী ওসমানের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জের প্রয়াত জাপার এমপি নাসিম ওসমানের ছেলে। তাঁর চাচা এমপি সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান। আজমেরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আলী হায়দার তথা পিজা শামীম হোন্ডা বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। এ বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ শহরজুড়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগ রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ১৬ মার্চ দুপুরে বন্দর উপজেলার ফরাজীকান্দা এলাকায় জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহ্বায়ক ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত রাইসুল হকের ছেলেদের জমি দখল করতে যান হোন্ডা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় ওই জমির মালিকপক্ষ ও স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। একপর্যায়ে তাঁরা ১০/১২টি গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন রাইসুল হকের ছেলে মঈনুল হক ও তাঁর স্ত্রী সোমা আক্তার। আহত হন আরও ১৫ জন।

এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ধাওয়া দিলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সন্ত্রাসীরা। তাদের ফেলে যাওয়া দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন এবং দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন স্থানীয় লোকজন ঘটনার দিনই মঈনুল হকের ছোট ভাই তানভীর আহমেদ বাদী হয়ে বন্দর থানায় আলী হায়দারসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। রাতেই মামলায় এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন আদালতের মাধ্যমে তাঁদের এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে আসামিদের মধ্যে অস্ত্রধারী কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আজমেরী ওসমানের সহযোগী আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমের নেতৃত্বে জমি দখলের চেষ্টা করা হয়েছে। আমার ভাই ও ভাবিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে, কিন্তু মূল হোতা, অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
তানভীর আরও বলেন, ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজে অস্ত্রধারীদের দেখা গেছে, সেটি আমরা পুলিশের কাছে দিয়েছি। ওই ভিডিও ফুটেজে আজমেরী ওসমানের সহযোগী সনেট, সিজান, ডালিম, আমির হোসেনের হাতে অস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে। কিন্তু পুলিশ অস্ত্রধারী আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না। সেই অস্ত্রও উদ্ধার করছে না। পিজা শামীমসহ সহযোগীরা প্রকাশ্যে শহরে ঘুরে বেড়ালেও তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।’
ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানান, গুলিবিদ্ধ দম্পতির অবস্থা এখন কিছুটা ভালো। তাঁরা পঙ্গু হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে নিয়ে ড্রেসিং করানো হচ্ছে তাঁদের। গুলিবিদ্ধ মঈনুল হকের চাচা আবুল তালেব বলেন, প্রকাশ্যে হামলা ও গুলিবিদ্ধ করলেও অস্ত্রধারী আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা আতঙ্কিত। দ্রুত অস্ত্রধারী আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
ওই ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত এবং পরিকল্পনাকারী, তাঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাই লাউ মারমা। তিনি বলেন, আমরা ওই ঘটনার দিন অস্ত্র ব্যবহারের একটি ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। সেই অস্ত্রগুলো বৈধ না অবৈধ, সেগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এম আর কামাল
নারায়ণগঞ্জ
তারিখ ঃ ২৬-০৩-২০২৩