“হু অপারেটস পেন্টাগন ”

আপডেট: এপ্রিল ২৬, ২০২৩
0


ডা .জাকারিয়া চৌধুরী

এই গল্পের সাথে বাস্তবতার সম্পর্ক নেই। আই মিন ইট।
স্থান- স্ট্যাট ডিপার্টমেন্ট হল কাম থিয়েটার অব ইউনাইটেড স্ট্যাটাস অব অ্যামেরিকা।

কাল – চলমান সময়ের কোনো এক ছুটির দিন।
পাত্র ও কান্ডকারখানা –

সেমিমার কক্ষে সভা শুরু হচ্ছে। ফ্লোরটির সাইজ কত বড় সেটা পাঠক নিজের মত করে কল্পনা করে নিন। সাড়ে দশ হাজার ডেলিকেট রাজার হালে সেমিনার/সিম্পোজিয়াম/মুভি এক সাথে উপভোগ করতে পারেন এখানে। আবার জরুরী অবস্থায় প্রায় সাত হাজার মানুষ দীর্ঘ সময়ের জন্য আশ্রয় নিতে পারেন মাটির সারফেস লেভেল থেকে প্রায় ৫০০ ফুট নিচে অবস্থিত এ থিয়েটারে। প্রোগ্রাম এবং ডিজাইন অনুযায়ী ফ্লোর থেকে ২৫ মিমি প্রস্থ এবং দশ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট অস্বচ্ছ এবং অভেদ্য গ্লাস উপরে উঠে যায়। ছোট বড় মিলিয়ে ছয় তলায় প্রায় ৮০০ ফ্ল্যাট হয়ে যায়। লন্ড্রি, রিসাইক্লিং সেন্টার, হাইব্রিড সবজি ফলানোর জন্য মাটি ভর্তি টিউব, ওয়াটার প্ল্যান্ট, ইলেক্ট্রিসিটির মাল্টিলেয়ার্ড প্রোডাকশন ইউনিট এমনকি একটা ডিস্টিলারিও আছে এখানে।

বেহেশতের কাছাকাছি ( ওদের ভাষায় ) উপভোগ করার মত আট তারকা মানের এই হলরুমটিতে আজ মিটিংয়ে বসেছেন সর্ব সাকুল্যে মোটে একুশ জন। এখানকার ডেপুটি ডিরেক্টর জানেন না, কারা সেখানে উপস্থিত আছেন। তিনি জানেন না মিটিংয়ের এজেন্ডা কি, তিনি জানেন না কারা কেন এই মিটিংয়ের আয়োজন করেছেন। তিনি জানেন না, এতো বড় হল রুমটির কোনায় কোনায় অল্প কয়েকটি নিয়ন লাইট এবং হাই রেজুলেশনের লেজার নাচানাচি করছে কেন। তিনি জানেন না, আলো জ্বালানো হয়নি কেন ? তিনি তার ৪০ বছরের পেশাগত জীবনে একবারও লাল দাগ লাগাননি কোন কাজেই। কেবল আজই তার নিজেকে সত্যজাত শিশু মনে হচ্ছে ।

তার তৃষ্ণা পেয়েছে না কি সত্য সত্যই সদ্য প্রথম সন্তান জন্ম দেয়া কোনো মেয়ের দুধ চুষে খেতে ইচ্ছে করছে তিনি এটাও বুঝতে পারছেন না। রাশিয়া বিষয়ে তিনি নিজেকে একজন স্পেশালিষ্ট মনে করতেন। গত দু’দিনে সাবেক ইউ এস এস আর দেশটির বিষয়ে অনেক তথ্য মাথায় ইনপুট দিয়েছিলেন নিজেকে জাহির করার জন্য। আগত অতিথিদের প্রায় সবাইকে তিনি হ্যালো বলেছেন, হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন…. কেউ তাকে হ্যালো বলার প্রয়োজন অনুভব করেছেন কিনা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। কারা এরা ? সেইম ড্রেসকোড, ভারী হ্যাটে মাথা ঢাকা। প্রায় সবার চোখই পোলারয়েড গ্লাসে ঢাকা। তার মনে হল, ডেলিকেটসদের মধ্যেও সবাই সবাইকে চেনেন না। হ্যাঁ, এখানে সবাই সবার পুর্ব পরিচিত নয়। তাদের ইন্ডিভিজ্যুয়াল কোড নেম আছে। সানগ্লাসে আছে সেই কোড রিডার। আজকের আলোচনার বিষয়ও বর্তমান রাশিয়া। প্রিপারেশন থাকলেও ডেপুটি নিজের কনফিডেন্স হারিয়ে ফেললেন।

স্ট্যাট ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টরকে জরুরী কাজে আজ ভোরে বাহামা পাঠানো হয়েছে। ছুটির দিন ভেবে সারারাত তিনি মদ্যপান করেছিলেন। শেষ রাতে যখন তার বিশেষ অংগটা ইরেক্ট হবে হবে করছে সেই সময়ে ল্যান্ড ফোনটা কর্কশ শব্দে বেজে উঠলো। রিসিভার উঠাতে গিয়ে খেয়াল করলেন অল্প বয়সী পতিতা মেয়েটা হতাশ হয়েছে। লাস্ট টু আওয়ার্স সে বিরামহীন চুষে ওটাকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছিল। ওপাশ থেকে যিনি কথা বললেন, তার কন্ঠ শুনেই ডিরেক্টরের মুতের অংগটা এক ছটাক কিমা করা মাংসে পরিনত হয়ে গেছে। মেয়েটা বুঝতে পারছে না, সে আবারও শুরু করবে কিনা !!

ডিরেক্টর কেনেথ যিনি মি হাউন্ড নামেই যিনি বেশি পরিচিত, তৈরী হয়ে লনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে উঠতে সময় পেলেন মাত্র সাত মিনিট। মেয়েটা বাসায় রয়ে গেল কিনা, বাসা তালা দিয়েছেন কিনা সেসব ভাববার সময় তিনি পাননি। যখন ভাববার সময় পেলেন তখন আর তার মনে নেই। বিমানে উঠবার আগ মুহূর্তে তার সাথে দিয়ে দেয়া হয়েছে দুনিয়ার ফাইলপত্র, বিশেষ পিসি, বিশেষ কাজে দক্ষ ভারতীয় মিজোরাম প্রদেশের এক টিপরা কিশোরী। এই মেয়ের দাদী, মা এবং সে পরপর তিন জেনেরেশন ইহুদি পরিবারে বিশ্বস্ত বান্দী হিসেবে কাজ করে এসেছে। সে ছাড়া বাকিরা ইহুদি সন্তান জন্ম দিয়ে ইসরাইলকে সহায়তা করেছে। টিপরা এই পরিবারটি মিজোরাম ইহুদি কমিউনিটিতে কত বড় জায়গা দখল করে রেখেছে তার কিছুই জানে না মি কেনেথ। মেয়েটির চুম্বক তাকে জাগিয়ে দিল। বিমানে তাঁর পাসের আসন থেকে তিনি তাকে নিজের কোলে টেনে নিতে নিতে জিগেস করলেন, এভাবে কোলে বসে থাকতে তাঁর কোনো সমস্যা হবে কিনা !! মিজোরামের মেয়েটির পরিবারের হাল এখনো তাঁর দাদীর হাতে। এই পরিবারে দাদী যা বলে তা ধর্মের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এবং অলংঘনীয়।

বাহামা এয়ারপোর্টে নেমে মি হাউন্ড প্রথম যে ধাক্কাটা খেলেন তা হল; বিমানে অল্প যে ক’জন যাত্রী ছিলেন তারা প্রায় সকলেই বিচ্ছিন্নভাবে বের হয়েছেন। কোনো চেকিং নেই, রানওয়ের শেষমাথার দিক থেকে কিছু গাড়ি এসে একে একে সবাইকে নিয়ে যার যার মত চলে গেল। ইউ এস কুকুর বা হাউন্ড বোকার মত দাঁড়িয়ে রইলেন বিমানের পাশে। এটা রুটিন কোনো ফ্লাইট নয়। একে একে সবাই চলে গেল ? তাঁর বিষ্ময়ের সীমা রইলো না। তাকে যেহেতু নিজ দায়িত্বে কিছু করতে বলা হয়নি; তাঁর মানে খুব সোজা।

সম পর্যায়ের কেউ না কেউ আসবেন তাকে রিসিভ করতে। মিলিটারি কনভয় তাকে নিরাপত্তা দিয়ে কর্ডন করে নিয়ে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। তিনি ঝাড়া কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করে স্যাটেলাইট কানেক্টেড হবার চেষ্টা করলেন এবং এই সিদ্ধান্তে আসলেন যে, হি ইজ ডিসকানেক্টেড ফ্রম দ্যা ওয়ার্ল্ড রাইট নাও……… কথাগুলো যেন নিজে-ই নিজেকে শোনালেন। টেক্সি ডেকে বীচের কাছাকাছি ভাল কোনো হোটেলে নিয়ে যেতে বলে টেক্সিতেই তিনি রাতের শেষ ঘুমটা নতুন করে শুরু করলেন। সব কিছু নিয়ে পরে ভাববেন যদি ভাবনার প্রয়োজন হয়।

লেখক : চিকিৎসক ,রাজনৈতিক, কলামিস্ট