রাষ্ট্রপতির সংলাপ অর্থহীন: আবারো ক্ষমতায় থাকার কৌশল–মীর্জা ফখরুল

আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২২
0

রাষ্ট্রপতির সংলাপের নামে আবারো সরকার ক্ষমতায় থাকার নানা কলাকৌশল করছে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শনিবার দুপুরে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আবারো বিভিন্ন রকম কলাকৌশল শুরু করেছে। রাষ্ট্রপতি সংলাপ ডেকেছেন। কিসের সংলাপ?”

‘‘ এই সংলাপ ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল বর্জন করেছে। তারা পরিস্কার করে বলেছে যে, এই সংলাপে লাভ হবে না, অর্থহীন সংলাপ। নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নাই যদি নির্বাচনকালীন সময়ে সরকার নিরপেক্ষ না হয়।”

বর্তমান সংকট উত্তরণে দলের অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সংকট উত্তরণে আমাদের খু্ব স্পষ্ট কথা – সবার আগে গণতন্ত্রের প্রতীক, স্বাধীনতা-সার্বেভৌমত্বের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন এবং পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে আজকে দেশে তারপরে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে জনগনের ভোটের ক্ষমতাকে ফিরিয়ে দিন।”

‘‘ এটাই হচ্ছে একমাত্র পথ। এর বাইরে আর কোনো পথ নেই।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ ‘‘আসুন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের মুক্তি এই দুইটিকে এক করে আজ সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।আজকে এখানে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এসেছেন।”

‘‘ আমি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহবান জানাতে চাই, রাজনৈতিক ব্যক্তির প্রতি আহবান জানাতে চাই যে, আসুন আজকে বৃহত্তর স্বার্থে আাজকে আবার গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।ঐক্যবদ্ধ হয়ে সত্যিকার অর্থে একটি জনগনের একটা সরকার, জনগনের একটা বাংলাদেশ, একটা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করি, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করি।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে সুচিকিতসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এই ‘মানব সমাবেশ’ হয়। এতে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের নেতা-কর্মী ছাড়াও যুব দল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন।”

‘মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়েছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে সমগ্র দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। গতকাল(শুক্রবার) প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা করেছেন জাতির সামনে বক্তব্য রেখেছেন। সেই বক্তব্যে তিনি বলেছেন, যে তিনি তার শাসনামলে এদেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে গেছেন এবং ১৯৪১ সাল পর্যন্ত তাকে থাকতে দেন তাহলে সেই দেশকে ….।”


‘‘ এই ১৩ বছরে এদেশে সাধারণ মানুষ দরিদ্র আরো দরিদ্র হয়েছে। ৪ কোটি মানুষ বেকার হয়ে গে্ছে, ৯ কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে এবং বড় লোক বড়লোক হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের লোকেরা যারা আজকে অন্যায়ভাবে সমস্ত সুযোগ গ্রহন করছে। তারা আজকে বিভিন্ন দেশে টাকা পাঁচার করে দিয়ে সম্পদ গড়ছে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন. ‘‘ কালকে তিনি(প্রধানমন্ত্রী) ভাষন দিয়েছেন জনগনের উদ্দেশ্যে, জাতির উদ্দেশে। এই জনগনের সামনে যদি বলেন, আপনাদের ভোটে আমি নির্বাচিত, আপনারা ভোট দিয়েছেন। এটা ঠাট্টা মস্তকরা. এটা মিথ্যা কথা বলা আর কিছুই না।”

‘‘ আমরা বলতে চাই, এই মস্তকরা করার দিন শেষ। খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে। আপনাকে বিদায় নিতে হবে। ডানে-বামে যাওয়ার জায়গা নেই, বিদেশে যাবেন ভিসাও বন্ধ।”

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘এরা কোনো নির্বাচন কমিশন বানাতে পারবে না, এরা নির্বাচন কমিশন বানালে সেই নির্বাচন কমিশন মানি না। ওদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।”

‘‘ ওরা চলে যাবে। চলে যাবার পরে আমরা যারা আন্দোলন করেছি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আমরা নতুন সরকার বানাব, নতুন করে নির্বাচন কমিশন বানাব। আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ব। ওই নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থে আসুন আজকে আমরা শপথ গ্রহন করি।”

প্রধানমন্ত্রীর ভাষনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘ উনি আবার বলেছেন, আমি ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে আমি তোমাদেরকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছি, ৪১ সাল পর্যন্ত আমি তোমাদেরকে ধনী দেশ বানাব। মানে কী? ৪১ সাল পর্যন্ত উনি থাকতে চান। আহারে কত শখ!”

‘‘ ৪১ সাল নয়, ৪১ মাসও নয়। খালি দিন গুনতে থাকেন। ওদের পতনের ঘন্টা বাজছে। সেই ঘন্টার সাথে সুর মেলান। খালি একদিন বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি মাধ্যমে এদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হবে।”

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহবায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী, সদস্য আমীরুল ইসলাম আলীম ও মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, মশিউর রহমান, মজিবুর রহমান সারোয়ার, ফজলুল হক মিলন, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, সেলিম ভুঁইয়া, আবদুস সালাম আজাদ, দেওয়ার মো. সালাহউদ্দিন, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির আবু তাহের, মহানগর উত্তরের আমিনুল হক, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।