অনলাইনে মহিলা পরিষদের ‘‘সামাজিক অবক্ষয়: তারুণ্যের সংকট ও করণীয় বিষয়ক’’ পাঠচক্র অনুষ্ঠিত

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১
0

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ-গবেষণাও পাঠাগার উপপরিষদের উদ্যোগে বিকালে সামাজিক অবক্ষয়: তারুণ্যের সংকট ও করণীয় বিষয়ক’’ পাঠচক্র অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের গবেষণা-প্রশিক্ষণ ওপাঠাগার উপপরিষদের সম্পাদক রীনা আহমেদ, আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান।

স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের গবেষণা-প্রশিক্ষণ ওপাঠাগার উপপরিষদের সম্পাদক রীনা আহমেদ বলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ৫০ বছর ধরে নারীমুক্তি ও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে সংগঠন সময়উপযোগী কর্মসূচি নিয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের পাঠচক্রের আয়োজন করা হয়েছে । বর্তমানে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে তবে তরুণরা এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে বিপথগামী হচ্ছে। বর্তমানের সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে পাঠচক্রের মাধ্যমে তরুণদের কাছ থেকে আসা ভাবনা ও তাদের সুপারিশগুলো এই সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।

সভায় সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন করোনাকালীন সময়ে মানবজীবনের সকল দিকে সংকট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। তরুণ প্রজন্ম ও করোনা কালীন সময়ে সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এদের এক অংশ বিপথগামী, যার প্রভাব সমাজের সকলক্ষেত্রে পড়ছে। এই অবক্ষয়রোধে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সমন্বয় করে কাজ করার সাথে তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হতে তাদের সুচিন্তিত মতামত, প্রদানের আহ্বান জানান।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান বলেন পরিবার, সমাজ আলাদা কিছু নয়। ভাল-মন্দ জানার পর ও মানুষ অপরাধ করে কারণ প্রত্যেকে নিজ জায়গা থেকে সৎ নয়। অপরাধ নিজে নিজে সংঘটিত হয় না। সমাজের প্রতিটি জায়গায় ই অবক্ষয়। অপরাধ দূর করতে হলে সামগ্রিকভাবে সমস্যা তৈরির ক্ষেত্রগুলোকে সর্বপ্রথম চিহ্নিত করতে হবে। মূল্যবোধ-নৈতিকতার অভাব এর সাথে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে চলা দুর্নীতি, অন্যায়, সাংস্কৃতিক অবক্ষয় কে চিহ্নিত করে এগুলি দূর করতে কাজ করতে হবে। কেননা পুরো সমাজব্যবস্থাতেই অবক্ষয় জড়িয়ে পড়েছে, এখানে সংহতি দরকার,পরিবার, সমাজকে, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিসান আরা ৪ ধরণের প্যারেন্টিং বিষয়ে আলোচনা করতে যেয়ে বলেন অনেক বাচ্চা পরিবারে কড়া শাসনে মানুষ হয়, এরা বাইরে আসলেও বাবা মায়ের কড়া শাসনের বলয় থেকে বেরোতে পারে না, আত্মসম্মানের অভাব থাকে। পজিটিভ প্যারেন্টিং এর কথা বলা হলেও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে বাচ্চারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে সবাই সবাইকে বিশ্বাস করতে পারে না। এটা সামাজিক অবক্ষয়ের একটা বড় কারণ। বিভিন্ন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। পরিবারের বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের টানা পোড়েন আছে। বাচ্চারা ইগনোর করা, অপরাধ করা পরিবার থেকেই শিখে। পরিবার থেকে এসব নিয়ন্ত্রণ না করলে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকবে।

সভায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বলেন

সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি এবং এর দ্বারা তরুণদের প্রভাবিত হওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার, সামাজিক কাঠামোগত ব্যবস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেকাংশে দায়ী। সমাজব্যবস্থা দিনদিন উগ্র হয়ে যাচ্ছে। সমাজ ব্যবস্থার অবক্ষয়ের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। নানা ধরণের অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে কিন্তু এসব নিয়ে প্রতিবাদ তেমন জোরালো নয়। এর সাথে মাদকের ব্যবহার বেড়েছে। এর প্রাপ্তি সহজলভ্য হয়েছে। অনেকাংশে দায়ী ।এখানে ক্ষমতার আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়। যার থেকে গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য পুরুষতান্ত্রিক আগ্রাসী মনোভাব অনেকাংশে দায়ী। এসকল অবস।তার পরিবর্তনের জন্য তারা বলেন আইনের থাকলৈই অপরাধ কমবে এমনটি বলা যায়না। সামাজিক মূল্যবোধ তৈরির কাজ পরিবার থেকেই প্রথমে শুরু করতে হবে। পারিবারিক শিক্ষা, নৈতিকতা কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটি ভাবতে হবে। পরিবারের সাথে একজন শিশুর বোঝাপড়া কেমন সেটি দেখতে হবে। পরিবারে কখনো শিশু কড়া শাসনে কখনো অনেক আদরে মানুষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণদের একত্রে বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে যা তাদের মানসিক উন্নতিতে, আদর্শগত উন্নতিতে সহায়তা করে।

সভায় সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বর্তমান সময়ের সামাজিক অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপট আলোচনা করে বলেন বিদ্বেষমূলক সমাজের উপর ভিত্তি করে সকলে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দেখা যাচ্ছে আজকের তরুণরা এক জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা জানে না কোন শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আইনের শাসন থাকছে না, পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে, প্রকৃত শিক্ষার অভাব আছে। মূল্যবোধ সমাজের প্রেক্ষিতে প্রেক্ষিতে বদলায়। নূতন ভাবে সমাজকে ভাবতে হবে, নূতন মূল্যবোধ তৈরি করতে হবে। কোনটি প্রয়োজন আর কোনটি চাহিদা তা বিবেচনা করতে হবে। বৈপরীত্যমূখী একটা সমাজ সামনে এসে দাড়িয়েছে, একে পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সবার উপরে মানুষ সত্য। তিনি আজকে যে সংকটগুলো বেরিয়ে এসেছে তা নিরসনের জন্য তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান। দেশের চলমান সমস্যাগুলো নিরসন করে তরুণরা একটি সমতা পূর্ণ, মানবিক সমাজ গড়ে তুলবেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।

সভায় আরো আলোচনা করেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক এর আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জেমিন মনিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহমুদুল হাসান, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক এর আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফৌজিয়া ফারিবা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সোসাইটির সদস্য মাইশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সদস্য সাদ মোহাম্মদউল্লাহ,ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক এর ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী আবির মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিয়া আক্তার রূপা । এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সভা সঞ্চালনা করেন সিনিয়র গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা শাহজাদী শামীমা আফজালী ।