ভারতের মুসলিম বিদ্বেষী উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা যে মহান শাসকের সম্পর্কে মিথ্যাচার ও জিঘৎসা প্রচার করছে?
সেই জিন্দাপীর-সম্রাট আওরঙ্গজেব ৪৯ বছর ধরে ভারত শাসন করেছেন। তাঁর সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল ৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। বলতে গেলে, ভারতবর্ষের প্রায় সম্পূর্ণ এলাকা ছিল তার রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত। প্রজার সংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৮০ লক্ষ।
আওরঙ্গজেব বছরে রাজস্ব আদায় করতেন ৪৫০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার। ঐ সময়ে ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন চতুর্দশ লুই। লুই এর চেয়ে আওরঙ্গজেব এর রাজ্যে দশগুণ বেশি রাজস্ব আদায় হত। তাঁর অধীনে ভারতবর্ষের অর্থনীতি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। ১৭০০ সালে তিনি ভারতবর্ষের অর্থনীতিকে ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেন। ভারতবর্ষের জিডিপি ছিল পুরো পৃথিবীর জিডিপির চার ভাগের এক ভাগ।
১৭০৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান আওরঙ্গজেব ৮৮ বছর বয়সে নিজের সম্পত্তির একটা উইল তৈরী করলেন। মৃত্যুর পরে উইলে দেখা গেল- তাঁর কাছে ১৪ রুপি আর নিজ হাতে বোনা কিছু টুপি আছে। এগুলো বিক্রি করে তাঁর জানাযা আর দাফনে খরচ করতে বলেছেন। আর সারাজীবন কুরআন শরীফের অবিকল নকল কপি লিখে ৩০০ রূপি জমিয়েছেন – এই টাকাগুলো গরীবদের মাঝে দান করে দিতে বলেছেন। দরবার আর রাজকোষে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল- উইলের বাইরে সম্রাটের কোথাও কোনো সম্পদ নেই।
.
মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব একজন মহান ও কল্পনাতীত বিচক্ষণ শাসক ছিলেন। বিশ্ব বিখ্যাত ফরাসি পর্যটক ফ্রাসোয়া বার্নিয়ের তার বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনী Travels in the Mongul Empire নামক বইতে আওরঙ্গজেবের সততা, বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা, উদারতা ও বিচক্ষণতার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা বলতে গেলে অতুলনীয় ও অসাধারণ। কার্ল মার্ক্স এক চিঠিতে তার বন্ধু দার্শনিক এঙ্গেলসকে এই বইটি সমন্ধে লেখেছেনে ” এটি ইতিহাসের এক মূল্যবান দলিল”। ইউরোপের প্যারিস ও লন্ডনের আর্কাইভে এই মহান শাসকের অনেক কীর্তি সংরক্ষিত আছে। অথচ আমাদের দেশের কতিপয় লোক না বুঝে, না জেনে এই মহান শাসক সমন্ধে আলতু ফালতু মন্তব্য করেন। আফসোসের বিষয় হলো এগুলো আমাদের পাঠ্যবইয়ে দেওয়া হয় না। যার কারণে ইতিহাসও জানতে পারিনা। আর জানলেও সঠিকটা নয় ভূল টা আমাদের সন্তানদের জানানো হচ্ছে।
মুসলিম শাসকদের এই গৌরবময় ইতিহাস শিক্ষার্থীদের জানানোর প্রয়োজন । সম্রাট আওরঙ্গজেব অন্য ধর্মের প্রতি যে কতোটা উদারতা দেখাতেন তাও প্রচার করা হয় না। ইতিহাস বিকৃতি করে হিন্দুত্ববাদরীরা এই মহান মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারই চালাচ্ছে ।৷ লেখক: মো: নুর আলম