আজ কমরেড শেখ আব্দুল মজিদের ৩২তম শাহাদত বার্ষিকী

আপডেট: জুন ২, ২০২১
0

খুলনা ব্যুরোঃ
আজ ২রা জুন। কৃষক নেতা শহীদ শেখ আব্দুল মজিদের ৩২তম শাহাদত বার্ষিকী। সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বৈরশাসক পাকিস্তানীদের পরাস্থ করে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে তিনি ১৯৭৯ সালে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেন। দিনটি পালনের লক্ষ্যে ডুমুরিয়া বাজাস্থ শহীদ শেখ মজিদ মিলনায়তনে বিকেলে মিলাদ মাহফিল, স্মরণ সভা ও কবর জিয়ারতের আয়োজন করা হয়েছে।

পাকিস্তানের আইনে তাঁদের দল ছিল বেআইনী। তাইতো শত্রুর দৃষ্টির আড়ালে গোপনে এ তাঁরা কার্যক্রম চালাতেন। পাকিস্তানকে দ্বিখন্ডিত করে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্র করতে চান বলে শুরু থেকেই পাকিস্তানী প্রশাসন, মুসলিমলীগ ও জামায়াতে ইসলামী নেতাদের চক্ষুশূল ছিলেন তাঁরা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মজিদ সাহেবরা সিদ্ধান্ত নেন, যেহেতু পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাদের প্রধান শত্রু, সেজন্য পাকিস্তানের পক্ষে যারা সহযোগিতা করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ এবং যারা পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছেন সেসব মুক্তি যোদ্ধারা আমাদের মিত্রর। মূলত: বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা (জুলাই,আগষ্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর-১৯৭১) আসার আগ পর্যন্ত মজিদ বাহিনীই এ অঞ্চলে খানসেনা ও রাজাকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল ইসলাম মানিক ভারত থেকে তাঁর যোদ্ধাদের নিয়ে ডুমুরিয়া এসে মজিদ বাহিনীর সাথে সহাবস্থান করেন। মুক্তিযুদ্ধে মজিদ বাহিনীর অনেক সদস্য শহীদ হন।

১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে মজিদ বাহিনী সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ অনেকের কাছে অস্ত্র থাকার কারণে আত্মরক্ষার জন্য সে মুহূর্তে নিরস্ত্র হতে পারেননি। বিশেষ করে কমরেড আব্দুল হক এর নেতৃত্বাধীন পার্টি ছিল আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী । অবশেষে ১৯৭৪ সালে মজিদ সাহেব ডুমুরিয়া থানায় এমপি এ্যডভোকেট এনায়েত আলীর উপস্থিতিতে শতাধিক ভারী সামরিক অস্ত্র জমা দিয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসেন।
১৯৭৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ডুমুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত থানা উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৯ সালের ২রা জুন তিনি তখনকার ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের ষড়যন্ত্রে সন্ত্রাসী হামলায় শাহাদত বরণ করেন।

স্বাধীন দেশের সংবিধানের অবতারণায় মজিদ সাহেবদের মত মুক্তিযোদ্ধাদের আদর্শের স্বীকৃতি দেয়া হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের দশ ধারায় (সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি) বলা হয়েছে,” মানুষের উপর মানুষের শোষণ হতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সামাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা করা হবে” । সংবিধানের এ ধারার বাস্তবায়ন এখনও হয়নি।

আমাদের মাপিছু জাতীয় আয় বাড়লেও (২২২৭ ডলার)দেশে রয়ে গেছে অনেক বৈষম্য। অনেক মানুষ রয়েছে মৌলিক মানবিক অধিকার বঞ্চিত। রয়েছে বেকারত্ব, দূর্নীতি, অপশাসন। পূঁজি ও ক্ষমতাসীনদের দৌরাত্ম। তাইতো সাম্যতার বাংলাদেশ গড়তে আমাদের মজিদ সাহেবদের মত মুক্তি সংগ্রামীদের আদর্শের পতাকা ধরে আরো অনেক পথ চলতে হবে।