উন্নয়নশীল বাংলাদেশের চাবিকাঠি চীনের হাতে : বলছে চায়না গণমাধ্যম

আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২১
0

মঙ্গলবার চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত পত্রিকা চায়না ডেইলিতে বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনা প্রকল্পের গুরুত্ব উল্লেখ করে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণের অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে দেখা হচ্ছে চীনের সহযোগিতাকে।

চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে একগুচ্ছ অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটির কাজ প্রায় শেষের পথে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার পথে এসব প্রকল্প ঘিরে ঢাকা উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

চায়না ডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন এবং ভারতের মাঝামাঝি অবস্থান করা বাংলাদেশকে একটি প্রধান বাণিজ্যিক ও উৎপাদনকেন্দ্র হওয়ার দৌড়ে অন্যতম প্রধান প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিআরআই’কে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন। এ লক্ষ্যে তিনি চীনের সঙ্গে বিনিয়োগ সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তিও করেছেন।

বাংলাদেশে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্প চীন প্রস্তাবিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ (বিআরআই) উদ্যোগের অন্তর্ভুক্ত। এদেশে চীনা অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে বৈদ্যুতিক গ্রিডের উন্নয়ন, এক বিলিয়ন ডলারে একটি ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প প্রভৃতি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, চীনের বিআরআই-সংশ্লিষ্ট বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর সফলতার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করছে বাংলাদেশ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, কাজ শেষ হয়ে গেলে এক পদ্মা সেতুই বাংলাদেশের জিডিপি এক শতাংশের বেশি বাড়িয়ে দেবে। এটি থেকে উপকৃত হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত তিন কোটি মানুষ।

তিনি বলেন, সেতুটি শুধু ২১টি জেলাকেই সংযুক্ত করবে না, এটি তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হয়ে উঠতেও সাহায্য করবে। এর মধ্যে কয়েকটি জেলা নতুন অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবে আবির্ভূত হবে। এর ফলে বিপুল সংখ্যক নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হবে এবং আয় বাড়বে।

আরও বেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ সরকার চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়তে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রায় ৭৭৫ হেক্টর জমি বরাদ্দ করেছে। সেখানে প্রায় ২৮০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে আসার আগ্রহ দেখিয়েছে চীনের ৬০টিরও বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে ওঠে চীন। তিন বছর পর এদেশে শীর্ষ বিনিয়োগকারীর আসনও দখল করে তারা। ওই অবস্থানেই ২০১৯ সালে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এদেশে চীনের বেশিরভাগ বিনিয়োগই এসেছে ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের পর।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, জিনপিংয়ের সফরের পরপরই বাংলাদেশে বিআরআই কার্যক্রম গতিশীল হয়ে ওঠে। তার ২২ ঘণ্টার ওই রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ চুক্তি সই হয়েছিল।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও দ্রুত এগিয়ে চলেছে বিআরআই-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোর কাজ। অবশ্য গত বছর বিদেশি বিনিয়োগে কিছুটা ভাঁটা পড়তে দেখা গেছে। সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিডা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, বিশেষ করে চীনের গুলোকে। ওয়েবিনারসহ অন্য ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।