করোনার ভয়কে জয় করেই ধান কাটা- চাষের জমিতে নেমেছে কৃষক

আপডেট: এপ্রিল ২৪, ২০২১
0

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ- একদিকে বোরো ধান পেকে সোনালি রং ধরেছে মাঠে। অপরদিকে আউশের মৌসুমের জন্য বীজ তলা তৈরী করতে হবে। এ সময়ে করোনার ভয়ে ঘরে থাকলে কৃষকের পেট ভরবে না। তাই করোনার ভয় কাটিয়ে মাঠে নেমেছেন কৃষককুল।
ঝিনাইদহ জেলার কোন গ্রামে একাধিক কৃষক আক্রান্ত হয়েছে এমন তথ্য স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে নেই। কঠোর পরিশ্রম ও রোদে পুড়ে কাজ করার কারণে কৃষকদের শরীরে করোনা বাসা বাধতে পারেনি। এদিকে গ্রামাঞ্চলের লোকজন বিশেষ করে মাঠে মাঠে কর্মরত কৃষকরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এমন কোন তথ্য আমাদের হাতে নেই বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আসাদুল্লাহ গনমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সারাদেশেই এখন কৃষিতে বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে। মাঠে মাঠে ধান কাটার ভরা মৌসুম আসন্ন। করোনার ভয় স্পর্শ করেনি কৃষকদের। তার কথা, বোরো ধান কর্তন শুরু হয়েছে। মাঠে মাঠে পাট বপনের কাজ চলছে।

আউশের বীজতলা তৈরী হচ্ছে। আদা ও হলুদসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদও চলছে। গম ও ভুট্রা কর্তন এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদসহ এক ইঞ্চি জমি কোন সময় পড়ে থাকতে না। সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে। করোনার কারণে শহরের অনেক শিক্ষিত যুবক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ যাদের গ্রামে জমি আছে তারাও গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করছেন বলে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খবর পেয়েছি।

তিনি বললেন, দেশে ১ লাখ ৪০হাজার পারিবারিক বাগান তৈরী করায় সবজির উৎপাদন এতটা বেড়ে গেছে যে, এখনো সবজির বাজার কমতে শুরু করেছে। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদের কথা, কৃষি প্রধান বাংলাদেশের শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ সরাসরি কৃষির সঙ্গে জড়িত। কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউটসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের মোট আবদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫শ’৫৬ হেক্টর। আরো প্রায় লক্ষাধিক হেক্টর পতিত জমি আবাদের আওতায় এসেছে এই করোনার মধ্যে।

অল্পজমিতে বেশি শস্য উৎপাদনের গবেষণা ও অভিযোজন কৌশল প্রয়োগ অর্থাৎ আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে খাপ খাওয়া যখন যেমন পদ্ধতি, সমস্যাদি সমাধান, লাগসই ও টেকসই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগানো এবং সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি। এই তথ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক ডক্টর নাজিরুল ইসলাম জানান, বাস্তব ভিত্তিক স্থায়ী পরিকল্পনা করে নিত্য নতুন শস্যজাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। যা আবহাওয়া ও জলবায়ু উপযোগী।

ভাসমান কৃষি, জলমগ্ন কিঞ্চিৎ লবণাক্ত আবাদী জমি ও বৈচিত্রপূর্ণ ফসলের আবাদ ও কৃষির উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ, গুণগতমান সম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও সরবরাহের লক্ষ্যে বহুমুখী কার্যক্রম চলছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস জানান, করোনা পরিস্থিতিতে একমাত্র কৃষি সেক্টর সাচ্ছন্দ্যে কর্মকান্ড চলছে। এই মহামারীর মধ্যে কৃষিই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ জাহিদুল আমিন জানান, মাঠে মাঠে কৃষকরা রোদে পুড়ে ক্ষেতে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে মহেশপুরে বোরো ধান কর্তন হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কোন তথ্য নেই।

মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক,
ঝিনাইদহ অফিস,