গোলাম কিবরিয়া বরগুনা :
অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা-বরগুনা রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এমভি পিন্টু ও বিউটি অব বিক্রমপুর নামে দুটি লঞ্চ প্রথম চলাচল করত এ রুটে। পরে ১৯৮৫ সালের দিকে এ রুটে যোগ হয় মাঝারি আকারের স্টিলবডি লঞ্চ। এমভি তামান নুর, এমভি জাহানারা, এমভি পানামা, এমভি পাতারহাট, এমভি সাদিয়া, এমভি বেলায়েত, এমভি নুসরাত, এমভি পায়রা, এমভি রাজহংসসহ আরো কয়েকটি স্টিল বডি লঞ্চ চলাচল করতো ঢাকা-বরগুনা নৌ রুটে। তখনকার যাত্রীদের একমাত্র ভয় ছিল ঝড় আর নদীর উত্তাল তুফান।তখনকার ওই ছোট ছোট লঞ্চ এসব শঙ্কার মধ্যেও এ রুটের যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিত।
বরগুনার সাথে নৌপথে সরাসরি রাজধানী ঢাকার সাথে লঞ্চযোগে যাত্রী পরিবহন শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে বরগুনা উপকূলের হাজার হাজার ব্যবসায়ী, পর্যটক ও জরুরি চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করা গরিব রোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনা জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় এই রুটে আধুনিক বিলাশবহুল নৌযান সংযুক্ত করা হয়। এমকে শিপিং লাইনসের মালিকানাধীন বিলাসবহুল নৌযান এমভি পূবালী নামের লঞ্চ দিয়ে এ রুটে যাত্রী পরিবহন চালু হয়। পূর্বে বরগুনা থেকে দুপুর ২টায় যাত্রীরা লঞ্চে উঠে পরের দিনে ৩টায় ঢাকায় পৌঁছত। দ্রুতগামী ইঞ্জিন ও বিলাসবহুল নতুন লঞ্চ যাত্রীদের সকাল ৬টায় ঢাকায় ও সকাল ৭টায় বরগুনা পৌঁছে দেয়।
এরপর ধীরে ধীরে এ রুটে সুন্দরবন-১০, সপ্তবর্ণা, রাজারহাট বি, রয়েলক্রুস, শাহরুখ-৩, অভিযান-১০-এর মতো কয়েকটি বিলাসবহুল লঞ্চ যাত্রী পরিবহন করে।
বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সমাজ সেবক মো: আবদুল জলিল খান বলেন,বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী বরগুনা জেলা পর্যটনের অপার সম্ভাবনার একটি অঞ্চল।প্রতিবছর এ জেলায় হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন এখানের ম্যানগ্রোভ অঞ্চল দেখতে। আর অধিকাংশ পর্যটকদের আরামদায়ক ভ্রমণের প্রথম পছন্দ লঞ্চ যোগাযোগ। এ রুটে লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় পর্যটনের সম্ভাবনাময় বরগুনা জেলায় পর্যটন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বামনার আরেক সমাজ সেবক হেমায়েত উদ্দিন বাচ্চু নাজির জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়কপথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে দ্রুত যোগাযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বরগুনা জেলার মৎস্য সম্পদসহ বিভিন্ন পচনশীল পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীদের সুবিধা হলেও অন্য সকল পণ্য স্বল্প খরচে পরিবহনে এ অঞ্চলের মানুষ লঞ্চেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় সড়ক পথে তাদের পণ্য পরিবহনে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
বামনা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আবদুল জলিল খান বলেন, শুধু তা-ই নয়, এ জেলার অধিকাংশ মানুষ জেলে। মাছ শিকার আর দিনমজুর খেটে চলে তাদের সংসার। এসব পরিবারে কারো ঢাকায় চিকিৎসা করাতে হলে কম খরচে লঞ্চযোগে যাতায়াত করতে হয়। আবার অনেক রোগীকে সড়ক পথে পরিবহন করা সম্ভব নয়। এ সকল রোগীকে লঞ্চযোগে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করা হয়। আবার অনেক যাত্রী সড়কপথে যাতায়াত করতে অক্ষম। ফলে ঢাকা-বরগুনা রুটে লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় তাদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
ঢাকা-বরগুনা নৌ রুটের প্রথন চলাচলকারী কাঠের তৈরি এমভি বিউটি অব বিক্রমপুর লঞ্চের কেরানি সুভাষ বলেন,আমরা কাঠবডি লঞ্চে ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করেছি। যখন পদ্মা-মেঘনার মোহনায় লঞ্চ যেত, তখন জীবনটা ভগবানের কাছে সঁপে দিতাম। এখন বড় বড় বিলাসবহুল লঞ্চ এই রুটে চালু হয়েছে। এখন ঝড়-তুফানের কোনো ভয় নেই। মানুষ নিশ্চিন্তে ঢাকা-বরগুনা আসা-যাওয়া করে। লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ না করে ভাড়া কিছুটা কমিয়ে রুটটি চালু রাখা দরকার।’
এ বিষয়ে এমকে শিপিং লাইনস কম্পানির পরিচালক রাসেল খান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে এ রুটে যাত্রী কমে গেছে। তা ছাড়া জ্বালানির দাম অনেক। তাই আমরা আপাতত ঢাকা-বরগুনা রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছি। গত মাসেও আমাদের ৩৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এত লস দিয়ে আর লঞ্চ চালাতে পারছি না, তাই আপাতত বন্ধ থাকবে ঢাকা-বরগুনার নৌপথ।
গোলাম কিবরিয়া।
বরগুনা জেলা প্রতিনিধি।
তারিখ : ২৮.৮.২০২৩ খ্রি:।