শুধুমাত্র দুর্নীতির কারণেই ভ্যাকসিন সংগ্রহে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন সংগ্রহের বিষয়ে আমি শুধু এতটুকু বলতে চাই, সরকার কতটা দায়িত্বহীন হলে, কতটা অযোগ্য হলে, জনগনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কতটা বিচ্ছিন্ন হলে তারা একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।”
‘‘ সেটার কারণটা হচ্ছে- শুধুমাত্র দুর্নীতির কারণ, অন্য কোনো কারণ এর মধ্যে জড়িত নয়।”
ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকার মূলত কতগুলো মাফিয়া চক্রের মধ্যে একত্রিত হয়েছে এবং তাদেরকে নিয়ে তারা দেশ চালাচ্ছে-একটা মাফিয়া সরকার তৈরি হয়েছে। এটা আমরা অনেকবারই কথা বলেছি- প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই মাফিয়ারাই আজকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে এই দেশের জন্যে।বাংলাদেশের পরিণতি যে এটা হবে- এটা আমরা কখনেো আগে কল্পনাও করতে পারি নাই। আজকে দুর্ভাগ্য আমাদের ৫০ বছর পরেও আমাদেরকে এরকম ভয়ংকর একটা পরিস্থিতি দেখতে হচ্ছে।”
‘‘ সেই কারণে বার বার করে বলে আসছি, এখনো বলছি যে, আজকে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই এখানে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন হতে হবে। সেই সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করার জন্যে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার হবে এবং এজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যারা আজকে ক্ষমতা দখল করে আছে তাদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
গত ১ মে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘‘ ভ্যাকসিনের অভাবে টিকা প্রদানের কার্য্ক্রম হঠাত করেই বন্ধ করায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সভা মনে করে যে, আমাদের দেশের সকল স্বাস্থ্য বি্শেষজ্ঞ ও বিএনপি এই বিষয়ে প্রথম থেকেই সরকারকে সতর্ক করেছে। কিন্ত তারা কোনো কর্ণপাত তো করেননি উপরন্তু তারা বিভিন্ন রকমের বিদ্রুপাত্মক কথা বলে্ছেন এবং তারা তাদের কাজ সম্পর্কে যথেষ্ট আত্মমভরিতা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন তারা অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে টিকা প্রদান কর্মসূচি পালন করে আসছে এবং এ বিষয়ে কোনো সদস্যা হবে না বলেই তারা নিশ্চিত করেছেন।”
‘‘ কিন্তু আমরা দেখলাম একদিন বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অবস্থা এবং গোটা দেশের মানুষ আজকে অত্যন্ত অনিশ্চিয়তায় ভুগছে, আস্থাহীনতায় ভুগছে এবং আশংকায় ভুগছে। আমরা বার বার করে বলেছিলাম যে, টিকা বা ভ্যাকসিনের বিকল্প উতস্য রাখা উচিত এবং এই বিকল্প উতস্য না রাখলে যেটা হবে হঠাত করেই যদি কোনো উতস্য থেকে বন্ধ হয়ে যায় তখন কিন্তু দেশের পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। সরকার কোনো কর্ণপাত না করে শুধু মাত্র তাদের দুর্নীতির জন্যে তারা তাদের নিজস্ব দুর্নীতি পরায়ন কোম্পানি মাধ্যমে শুধু মাত্র ভারত থেকেই একমাত্র মাত্র কোম্পানির ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতেই কার্য্ক্রম গ্রহন করেছিলো যে কারণে আজকে গোটা জাতি বিপদগ্রস্থ হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা জানি, উতপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বলছে যে, আগে তারা ভারতের চাহিতা পুরনের জন্য বাংলাদেশে টিকা সরবারহ করতে অপরাগতা ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন যে, ভারতের চাহিদা এখন বেশি এবং সেই কারণে সমস্ত রপ্তানি বাতিল করে দিয়ে আগের ভারতের চাহিদা পুরণ করতে শুরু করেছে। আমাদের সেখানে আপত্তি নেই- ভারত তো তার চাহিদা পুরন করবেই।”
‘‘কিন্তু আমাদের সরকার যে সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনতার সঙ্গে একেবারে বলা যেতে পারে যে একটা অপরাধমূলক কাজ করেছে। তা হচ্ছে যে, তারা বিকল্প উতসের কোনো অনুসন্ধান করেনি এবং বিকল্প উতস্য থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের আবশ্যকতা তারা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেনি। আমাদের যে আশংকা ছিলো সেই আশংকা আজকে সত্যের পরিণত হয়েছে। চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের সুযোগ থাকার পরেও তা গ্রহন করা হয়নি। আপনারা জানেন যে, চীনের একজন মন্ত্রী এসেছিলেন দেশে এবং এখানে চীনের যে ভ্যাকসিন উতপাদন ও পরীক্ষার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সরকার সেটাকে সম্পূর্ণভাবে অবজ্ঞা করেছে।সরকারের এই দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির জন্য অবশ্যই জনগনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের মজুরী নির্ধারণ, কর্মে নিশ্চয়তা প্রদান এবং লকডাউনে কর্মচ্যুত শ্রমিকদের ক্ষতিপুরণ, খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত প্রদান, বিএনপির প্রস্তাবিত প্রণোদনা অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কর্মপক্ষে তিন মাসের জন্য ১৫ হাজার টাকা হারে এককালীন অনুদান প্রদান, শ্রমিক নির্যাতন ও বৈষ্যম বন্ধ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে নিহতের পরিবার ও আহতদের যথাযথ ক্ষতিপুরণ ও গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিকদের মুক্তি দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান মহাসচিব।
একই সঙ্গে ফরিদপুরের সালথায় পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষের ঘটনায় নিরহ গ্রামবাসী হোসেন মাতুব্বর ডিবি হেফাজতের মৃত্যুবরণের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের আইনের আওতা এনে বিচার দাবিও জানান তিনি।
সম্প্রতি ভারত কর্তৃক একতরফাভাবে অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থায়ী কমিটির সভায় বিকল্প উতস্য থেকে অক্সিজেনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানীর ব্যবস্থা গ্রহন এবং দেশে অক্সিজেন উতপাদনের ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয় বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।