ভারত কেমন বন্ধু যে প্রয়োজনের সময় জরুরী পণ্যের রপ্তানী বন্ধ করে দেয় — প্রশ্ন মীর্জা ফখরুলের

আপডেট: মে ২, ২০২১
0

সম্প্রতি ভারত একতরফাভাবে অক্সিজেন রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। রোববার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একথা জানান।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এর জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার শেষে নিম্ম বর্ণিত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়।

১। সভায় সম্প্রতি ভারত কতৃক একতরফাভাবে অক্সিজেন রপ্তানী বন্ধের ঘোষনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিশেষ করে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত জরুরী অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত কোন মতেই বন্ধুসুলভ আচরন হতে পারে না। ইতি পূর্বেও বাংলাদেশের জরুরী প্রয়োজনের সময় বিভিন্ন জরুরী পণ্যের রপ্তানী একতরফা ভাবে বন্ধ করায় বাংলাদেশের চরম বিপদাপন্ন হয় বলে সভা মনে করে।

সভায় শুধুমাত্র ভারতের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প উৎস থেকে অক্সিজেনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানীর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানানো হয় এবং দেশে অক্সিজেন উৎপাদন এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কতৃক কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের টীকা প্রদান কার্যক্রম ভ্যাকসিনের অভাবে হঠাৎ করে বন্ধ করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে সকল বিষেশজ্ঞ এবং বিএনপি এই বিষয়ে প্রথম থেকেই সরকারকে সতর্ক করেছে। কিন্তু সরকার কোনও কর্ণপাত না করে সরকারের নিজস্ব দূর্নীতি পরায়ন কোম্পানীর মাধ্যমে শুধুমাত্র ভারত থেকে একটি কোম্পানির ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে কার্যক্রম গ্রহণ করায় আজ সমগ্র জাতি বিপদগ্রস্থ হয়েছে। এখন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বলছে তারা ভারতের চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশে সরবরাহ করতে অপারগ। বিএনপি বিকল্প উৎস অনুসন্ধান এবং বিকল্প উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের আবশ্যকতা গুরুত্বসহকারে বলেছিল। বিএনপির আশংকা সত্যে পরিণত হয়েছে। চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের সুযোগ থাকার পরেও তা করা গ্রহন করা হয়নি। চীন প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য।

কিন্তু এরপর পরেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশে আগমন ও বাংলাদেশ সরকারের শুধুমাত্র ভারত থেকে সংগ্রহের চুক্তি জাতির জন্য এক চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। সরকারকে এই দায়িত্বহীনতা এবং দূর্নীতির জন্য অবশ্যই জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে। অবিলম্বে টীকা সংগ্রহের, টীকা প্রদানের পরিকল্পনা ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ জনগণের সামনে সুনির্দিষ্ট ভাবে জানানোর আহ্বান জানানো হয়।
৪। সভায় ‘মহান মে’ দিবসে দেশের ও বিশে^র সকল শ্রমজীবি মানুষের সঙ্গে বিএনপি’র একাত্বতা পুনরায় ঘোষণা করা হয়।

সভা মনে করে যে, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কোটি শ্রমিকের বহুমুখী কল্যাণে এই অনির্বাচিত সরকারর সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরী নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এর নিশ্চিয়তা প্রদান, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা তাদের সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। বিশেষ করে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের ফলে লকডাউনে চাকুরী চ্যুতি, বেতন না পাওয়া, শ্রমিকদের মানবেতর জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অবিলম্বে সকল ধরনের শ্রমিকদের মজুরী নির্ধারন, কর্মের নিশ্চয়তা প্রদান এবং লকডাউনে কর্মচ্যুত শ্রমিকদের ক্ষতি পূরণ, খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি’র প্রস্তাবিত প্রণোদনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কর্মপক্ষে তিন মাসের জন্য ১৫,০০০/= টাকা হারে এককালীন অনুদান প্রদান করার আহ্বান জানানো হয।