প্রকৃতিকে আঘাত করলে প্রকৃতিও প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে প্রতিদান দেয়

আপডেট: জুন ৮, ২০২১
0

মঈনুদ্দীন শাহীনঃ
হে অদৃশ্য মহাশক্তি, কথা দিচ্ছি প্রকৃতির ক্ষতি করে আর কিছু চাইবো না, জীবনানন্দ দাস এর মতো প্রকৃতিতে বেঁচে থাকবো। চরম দাম্ভিকতায় দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ অট্টালিকাগুলো, তোমাকে কুর্নিশ করবে প্রতিদিন। তবুও বন্ধ হউক শ্বাসকষ্টে বিছানায় বারবার, আছড়ে পরা শিশুর আর্তনাদ। বিলাসিতার তারকা চিহ্নিত সব হোটেল, গৃহহীনদের মাঝে বরাদ্দের ব্যবস্থা হবে। এ মৃত্যুর মিছিল থামিয়ে দাও। মানুষকে শোষণ করে সুইস ব্যাঙ্ক এ গচ্ছিত অর্থ, বিলিয়ে দেয়া হবে নিরন্ন মানুষের তরে। এ আতঙ্কিত জীবন থেকে আমাদের মুক্ত করো। গাড়ি-বাড়ি যা কিছু অর্জিত হয়েছে অন্ধকার পথে, ক্ষমাপ্রার্থী, ফিরিয়ে নাও প্রয়োজন নেই এইসবের। আধুনিক মারণাস্ত্র বানিয়ে খুব লজ্জা পাচ্ছি, এসব তোমার শক্তির কাছে তুচ্ছ। অস্ত্রের পরিবর্তে রাবীন্দ্রিক ভালবাসায়, জয় করবো মানুষ ও জগৎকে, নিবো আপন করে। এ অসহ্য যন্ত্রনা থেকে পরিত্রাণ দাও। প্রতিজ্ঞা রইলো ভোগ-অর্থের যে খেলায় মেতেছিলাম, তার পরিবর্তে সমুন্নত করা হবে মানবতা। প্রতিশ্রুতি রইলো শ্রেণি-বর্ণ-ধর্ম পার্থক্য ঘুচিয়ে, সীমান্তহীন পৃথিবী গড়ার সংগ্রাম হবে আজীবন।

বন্ধ করো এই নির্মম হত্যাকাণ্ড। কঠিন শপথ, দুর্যোগের সৃষ্টিকারী হয় যদি কোন মানব, তার হাত দু’টি পুড়ে ছাই করে দেয়া হবে। তবুও বন্ধ হউক স্বজন হারানোর এই শোক। মানবতার সেবায় যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছে, পৃথিবীর সকল মণি-মুক্তা, হীরা-জহরত কুড়িয়ে, তাঁদের জন্য তৈরী হবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্মৃতিস্তম্ভ।

ফিরিয়ে দাও সেই কোলাহলমুখর জনপদ।

আমরা কথা দিই ঠিকই, কিন্তু কথা দিয়ে কথা রাখি কয়জন। প্রতিদিন স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠেই ভাবি পরিবেশ আর প্রকৃতি রক্ষায় আর এক বিন্দু ও ছাড় নয়। এদেশটাকে সবুজে ভরিয়ে দিবো, করে তুলবো শান্ত আর কোলাহল মুক্ত। জানঝট বিহীন থাকবে পুরো দেশ, শান্তিতে ডানা মেলবে প্রজাপতি,র দল, পাখীর কলতানে আর সাগরের গর্জনে মিছিল হবে সুখের আন্দোলনের। ঝাঁক ঝাক মৌমাছি মধু আহরনে বাগানে ভীড় জমাবে।

কিন্তু আসলেই করছি কি আমরা ? বেঁচে থাকার জন্য শেষ অক্সিজেনটুকুও আমরা বিক্রি করে দিচ্ছি অট্যালিকা আর প্রাসাদ গড়তে। যে মাটিতে একদিন ঘুমাতে হবে সেটিও বাদ যাচ্ছেনা এই হালাকুখানদের বিক্রির উল্লাসে, এদের অত্যাচারে বন্য প্রানীগুলো বনভুমি ছেড়ে লোকলয়ে চলে আসছে। বিজ্ঞানের এই যুগে প্রযুক্তি যতো উন্নত হচ্ছে, মানুষের আয়ু ততোই কমে আসছে, মৃত্যুর মিছিলে কে কার আগে যাবে , লাইনে দাঁড়াবে তা নিয়েই গোল্লাছুট দিচ্ছি। রীতি মতো প্রতিযোগীতায় নেমেছি আমরা কিভাবে কতো তাড়াতাড়ি পৃথিবীর মৃত্যু দেখতে পারি। সেই ১৯৯১ থেকে শুরু করে ৯৪ সহ সিডর, আম্পান,নারগিছ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা দুর্যোগ আমরাই তৈরী করেছি, আর আমরাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি, তবুও আমাদের বোধোদয় হয়নি আমরা কি করছি। প্রশ্ন হলো নিজের আবাস ভুমি থাকার পর ও খুব বেশি কি দরকার আছে এই বিশাল বিশাল বনভুমি আর পাহাড় কেটে প্রাসাদ নির্মানের? দেশের এমন কোন যায়গা নেই যা রাঘব বোয়ালদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। অনেকেই বলবেন এতো বক বক করছেন কেনো? এসবের কি কোন মানে হয়!!

তাহলে, উখিয়া কক্সবাজারের সরকারী বনাঞ্চল আর পাহাড় দিয়েই শুরু করি। গতো ২৬ মে ২০২১ তারিখে ঘঠে যাওয়া” ইয়াস ” নামক ঘুর্নিঝড় ভারতের বিভিন্ন যায়গায় তান্ডব চালালো, প্রানহানীর সংখ্যাও কম ছিলোনা। প্রলয়ংকারী এই ঘুর্নিঝড়ের কবল থেকে বাংলাদেশ ও কিন্তু রক্ষা পায়নি। যার গেছে সেই বুঝে হারানোর কি ব্যথা। এই কথাটি বলার কারন,, বাংলাদেশেও ইয়াসের তান্ডবে অধিকাংশ এলাকার মানুষ স্বর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে।

নিজের কপালে নিজে কুড়াল মারলে যা হয় আর কি!! মনে রাখতে হবে উপরে থু থু ছিটালে তা কিন্তু নিজের শরীরে এসেই পড়ে। প্রকৃতিও মানুষের সাথে এমন আচরনই করছে।
এখানে এসব প্রাকৃতিক দূর্যোগকে অনেকেই বিধাতার সৃষ্টি বলে আখ্যা দিবে, আর বলবে সৃষ্টিকর্তার তৈরী এসব মহাপ্রলয়ের সম্পর্কে মানুষকে আগাম জানান দিতেই সৃষ্টিকর্তা দূর্যোগ তৈরী করে।

কিন্তু আমি বলবো সৃষ্টিকর্তা মোটেও এসব মহাদুর্যোগের জন্য দায়ী নহে, মনুষ্য সৃষ্ট দূর্যোগই মানুষকে আক্রান্ত করে। হ্য এটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে যে, প্রত্যেকটা সৃষ্টি আর ধ্বংসের পেছনে মহান সৃষ্টিকর্তার অদৃশ্য ঈশারা আছে। মোদ্দাকথা হলো, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে বলেনি আপনার প্রান বাঁচানোর জন্য সৃষ্ট জগতের নানান প্রকৃতির নমুনা গুলো গলা টিপে হত্যা করার জন্য। বিশালাকারের পাহাড় আর বনভুমি বেষ্টিত কক্সবাজারের পরিবেশ আর প্রান প্রকৃতি রক্ষায় সহযোগী অঞ্চল সমুহ ধ্বংস করে আমরা প্রতিযোগীতায় নেমেছি অট্যালিকা আর প্রাসাদ নির্মানে। বিশাল বিশাল বনভুমিবেষ্টিত পাহাড় গুলো কেটে শরনার্থী ক্যাম্প নির্মান সহ অসংখ্য অপরিকল্পিত প্রাসাদ নির্মান করেই যাচ্ছি।

অথচ কেউ একটিবার ও ভেবে দেখছিনা বৃষ্টির নগরী খ্যাত কক্সবাজার আজ বৃষ্টিহীন মরুতে পরিনত কেনো? যেই পাহাড় আর,গাছ আপনাকে বৃষ্টি উপহার দেয় তাদের উপর আঘাত করে আপনি বৃষ্টি আশা করেন কিভাবে। কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে গাছ আর পাহাড় নেই বললেই চলে, স্থানীয় জনসাধারন বৃষ্টি তো দুরের কথা উল্টো খাবার পানি সংকটে ভুগছে। বন বিভাগ অসহায়, বন আর পাহাড় খেকোদের কাছে। একটা গাছ লাগানো তো দুরের কথা, উলটো বনবিভাগকে কিছু পিশাচের দল তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করে দালান নির্মান করছে। অক্সিজেন সংকট চরমে আর,পরিবেশ চরম হুমকির মুখে। এমতাবস্থায় প্রকৃতি কিইবা করতে পারে, যা করার তাই করছে।
প্রকৃতির ও প্রান আছে তাই আঘাতের প্রতিদান দিচ্ছে।

আর তাই বলবো বাঁচতে হলে পরিবেশ বাঁচান, আর পরিবেশ বাঁচাতে হলে প্রকৃতিকে আঘাত করা বন্ধ করুন। আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী উপহার দিতে প্রত্যেকেই গাছ লাছ লাগাই, বন্য প্রানীর নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলি আর পাহাড় কাটা বন্ধ করি। তবেই প্রকৃতি আমাদের ভালোবাসা দিবে।