বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে তারেক রহমান-মীর্জা ফখরুলের শুভেচ্ছা

আপডেট: মে ২৫, ২০২১
0

আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা । বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বাণী দিয়েছেন। তা হুবুহু দেশজনতা ডটকমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বাণী
“আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা। মানব বিশ্বের ইতিহাসে এই দিনটি এক মহিমান্বিত দিন। এ দিনেই অহিংসা ও শান্তির দিশারী মহামানব গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। বুদ্ধ জীবনের মহান এ তিনটি প্রধান ঘটনাই মানব বিশ্বের ইতিহাসে ‘বুদ্ধ পুর্নিমা’ নামে অভিহিত। এদিন সমগ্র বিশ্বের বৌদ্ধরা বুদ্ধের জীবনদর্শণকে গভীরভাবে অনুধাবন করেন। বিশ্বের বৌদ্ধরা এ দিনটি অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে এবং উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করেন।

আজ থেকে আড়াই হাজার বছরেরও অনেক পূর্বে বৈশাখী পূর্ণিমায় শুভ তিথিতে গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীতে অবির্ভূত হয়েছিলেন। গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ এই তিনটি মহান স্মৃতি বিজড়িত ঘটনা বৌদ্ধ ইতিহাসে ‘বুদ্ধপূর্ণিমা’ নামে অভিহিত। আমি আজ এই শুভ দিনে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সকলকে জানাচ্ছি শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা এবং উষ্ণ অভিনন্দন। সাথে সাথে আমি বিশ^ বৌদ্ধ সম্প্রদায়কেও জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
যুগে যুগে মহামানবেরা পথভ্রষ্ট মানুষকে সত্যের আলো দেখিয়েছেন, চিনিয়েছেন কল্যাণের পথ। নানা সংকট ও প্রতিকুলতার মধ্যেও সত্য ও ন্যায়ের পথে মানুষকে আহবান করেছেন। মহামানব বুদ্ধ ছিলেন অহিংস, ন্যায় ও সাম্যনীতির এক বলিষ্ঠ কন্ঠ। তাঁর অনুশাসনও ছিল আত্মজয় ও আত্মপ্রতিষ্ঠার পক্ষে।

তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করে মানুষের দুঃখ দূর্দশা ঘোচানোর জন্য মানবতা ও সার্বজনীন সাম্য ও অহিংসা বাণী প্রচার করেন এবং আর্ত-পীড়িত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। মহামতি বুদ্ধের দর্শন ও শিক্ষা ছিল মানুষের নিরঙ্কুশ অধিকার। স্বাধীনতা, সর্বাঙ্গীন কল্যাণ এবং সর্বপ্রাণীর নিরাপদ বিশ্ব সৃষ্টি করা। তিনি প্রচলিত জাতিভেদ প্রথায়ও আবদ্ধ হননি, তিনি সর্বশ্রেণীর মানুষের নিকট মুক্তির বাণী তুলে ধরে জগতে এক নুতন ধর্মাদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন। মানুষের মর্যাদা চিহ্নিত হবে কর্মে এবং যোগ্যতায়; জন্ম বা বংশ মর্যাদা দিয়ে নয়। ধর্ম প্রচারের প্রথম থেকেই তিনি এভাবে মানুষের মূল্যবোধকে জাগ্রত করার প্রচেষ্টায় নিবেদিত হন।

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনেই এদেশের সকল বর্ণ, ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠীর নিবিড় সহাবস্থান নিশ্চিত করে। বাংলাদেশে সকল ধর্মের অনুসারীরা পার¯পরিক সৌহার্দ্যরে বন্ধনে আবদ্ধ। আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক অভিন্ন জাতি। আমরা সবাই বাংলাদেশী। ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সকল ধর্মের মর্যাদা রক্ষায় আমরা সবসময়ই সচেষ্ট থেকেছি এবং আগামীতেও সে প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।

বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ এক দু:সময় অতিক্রম করছে। ভয় ও আতঙ্ক সর্বত্র বিরাজ করছে। দেশে দেশে মৃত্যু হানা দিচ্ছে করোনা ভাইরাসের আঘাতে। এহেন সংকটজনক পরিস্থিতিতে বিশ^বাসীর অপরিসিম মানসিক শক্তি যোগাবে গৌতম বুদ্ধের বাণী। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি সকল বাধা-বিপত্তির মধ্যেও আমাদের দীর্ঘ প্রত্যাশিত গণতন্ত্র, শান্তি, নিরাপদ আশ্রয়, মহামারী থেকে মুক্তি একদিন আসবেই।

চলুন আমরা আজ সকলে দল, মত, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের ঐক্য ও আত্মীয়তাবোধ সৃষ্টি করি এবং নাগরিকদের স্বাধীনতা ও যথাযথ মর্যাদা রক্ষার ব্যবস্থা করি। সর্বোপরি ত্যাগে, উদারতায় ও মহত্ত্বতায় উন্নত সুখময় জীবন এবং সবধরনের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংকীর্ণতামুক্ত সমাজ ও বিশ্বজনীন শান্তি প্রতিষ্ঠা করি-শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমার এ দিনে আমরা সেই শপথ ও প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হই। বুদ্ধ পূর্ণিমা সফল হোক। বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক। আমি বুদ্ধ পূর্ণিমার সকল আনুষ্ঠানিকতার সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।”

বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নি¤েœাক্ত বাণী দিয়েছেনঃ-
বাণী
”বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আমি সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তাদের সকলের সুখ, শান্তি ও দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।
বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি গৌতম বুদ্ধ অহিংসা ও মানুষে-মানুষে গভীর ভালবাসার বাণী প্রচার করে গেছেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের চিরন্তন বাণীতে মানব কল্যানে ব্রতী এবং জীবের প্রতি প্রেম দেখাতে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন-হিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করা যায় না, বরং শরণ নিতে হয় অহিংসার। আজ বাংলাদেশসহ সারাবিশ^ রক্ত¯œাত, হানাহানি ও সংঘাত-সংঘর্ষে মানব জাতি ক্ষতবিক্ষত। এই দুর্যোগময় মূহুর্তে গৌতম বুদ্ধের হিতোপদেশ মানুষকে অহিংসার পথে, ন্যায়ের পথে চালিত করবে। শান্তি, সম্প্রীতি ও মানব প্রেম সকল ধর্মের মর্মবাণী। আমার দৃঢ় বিশ^াস, আজও বিশ^ সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় গৌতম বুদ্ধের বাণী অতীব প্রাসঙ্গিক।
মহামানব গৌতম বুদ্ধ ত্যাগের মধ্য দিয়ে সুখ আহরণে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সকল মায়াবী বন্ধন উপেক্ষা করে চলার পথের সকল প্রতিকুলতাকে সহ্য করে তিনি বোধিজ্ঞান বা বুদ্ধত্ব লাভ করেন। বুদ্ধত্ব লাভের মাধ্যমে তিনি জগতের সকল প্রাণীর কল্যাণ, সুখ ও মঙ্গলের জন্য নিরন্তর ধর্ম প্রচার করেছেন। ন্যায় ও অহিংসাই হচ্ছে তাঁর বাণীর মূল প্রতিপাদ্য।
আমরা জানি, গৌতম বুদ্ধ সমাজের ঐক্য-সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য সপ্ত অপরিহনীয় ধর্ম প্রচার করেছিলেন।

মানুষের নীতি, আদর্শ, ভালোবাসা এবং সকল স্তরের মানুষের কল্যাণের জন্য মঙ্গল সূত্রের বাণী প্রচার করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন একটি সুখী-সমৃদ্ধময় আলোকিত সমাজ যেই সমাজে কোন ধরণের হিংসা-প্রতিহিংসা থাকবে না, থাকবে না কোন ধরণের সংঘাত সহিংসতা। তিনি জীবনের সর্ববিধ ক্লেশ থেকে মুক্তির উপায় বের করেন। বর্তমানে করোনা মহামারীর করাল গ্রাসে মৃত্যু ও আক্রান্ত হওয়ার দুর্বিষহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই মুহুর্তে মহামানব গৌতম বুদ্ধের বাণী আমাদেরকে সামনের সুদিনের পথে এগিয়ে যেতে প্রেরণা যোগাবে ।

সর্বোপরি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শণেই এদেশের সকল বর্ণ, ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠী সমূহ একত্রীভুত হয়। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদই সকলকে একই বন্ধনে আবদ্ধ করে। পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা ও সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে।
আমি বুদ্ধ পূর্ণিমার সাফল্য এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সকলের সুখী ও শান্তিময় জীবন কামনা করি।”