শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি ॥
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে দখলকৃত রেলওয়ের জমিতে গড়ে তোলা অবৈধ বহুতল ভবন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নিলামের মাধ্যমে বিক্রি থেকে বাঁচাতে মানববন্ধন করা হয়েছে। ২২ মার্চ সোমবার সকাল ১১ টায় শহরের শহীদ ডাঃ জিকরুল হক রোডস্থ প্রেসক্লাবের পাশে ওই ভবনের সামনে এ মানববন্ধন থেকে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নুরজ্জামানসহ স্থানীয় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করা হয়েছে। এ নিয়ে শহরজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন অবৈধ ভবনের মালিক ইমতিয়াজ প্রবাল, সৈয়দপুর পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরকার কবির উদ্দিন ইউনুস, টাটা স্টিল হাউজের স্বত্বাধিকারী মোঃ দুলাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী রবিউল আউয়াল রবি, আওয়ামীলীগ নেতা মোনায়েমুল হক প্রমুখ।
বক্তারা রেলওয়ের জায়গায় গড়ে ওঠা ওই ভবনকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের দাবি করে বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার ভবন কোনভাবেই বিনা নোটিশে একজন ম্যাজিষ্ট্রেট অবৈধ ঘোষণা করে নিলামে বিক্রি করতে পারেন না। যারা এমন অপকর্ম করেছে তাদের দেখে নেয়া হবে। এমন অবৈধ কাজের জন্য অনতিবিলম্বে নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত করে ভবন নির্মানের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। নয়তো তাদেরকে আইনের আওতায় আনাসহ রাজনৈতিকভাবে চরম শিক্ষা দেওয়া হবে। এসময় তারা পাকশী রেলওয়ে বিভাগের ভুসম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ নুরুজ্জামান, সৈয়দপুর ভুসম্পত্তি বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শরিফুল ইসলামকে সৈয়দপুরে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তাদের উচিত জবাব দেয়া হবে বলেও হুমকি প্রদান করেন। এছাড়াও ভবন নিয়ে সংবাদ প্রকাশকারী সাংবাদিকদেরও মামলার হুমকি দেওয়া হয় ওই মানববন্ধনে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সৈয়দপুর হচ্ছে রেলওয়ের বিভাগীয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শহর। এখানে যে কোন ভবন নির্মাণে পৌরসভার নকশা ও সিভিল এভিয়েশনের অনুমোদন নিতে হয়। এছাড়া রেলওয়ের বানিজ্যিক লীজকৃত জমিতে সর্বোচ্চ একতলা ভবন করার নীতিমলা রয়েছে। কিন্তু ওই ভবনের মালিক ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ প্রবাল নামে ওই ব্যক্তি রেল ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নির্মাণ অব্যাহত রাখেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হলে রেলওয়ের প্রশাসনের নজরে এলে গত ২১ মার্চ আলোচিত ওই ভবনটি অবৈধ হওয়ায় তাৎক্ষনিকভাবে জনসম্মুখে উম্মুক্ত নিলামের ডাক দেয়া হয়। এ নিলামে শহরের ৮ জন অংশ নেয়। পরে সর্বোচ্চ দরদাতা শহরের সাহেবপাড়া এলাকার কফিল চৌধুরীর ছেলে আবু নাসের চৌধুরী বাবু ৬ লাখ টাকায় ভবনটি রেলওয়ের কাছে ক্রয় করেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাকে ভবনের অবকাঠামো নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ওই নিলাম থেকে ভবন বাঁচাতে মানববন্ধনের নামে রেলওয়ের প্রশাসনকে চাপে রাখতে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করা হয়।
এ ব্যাপারে রেলওয়ের পাকশী বিভাগের ভুসম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ নুরুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, রেলওয়ের এই উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে। তাই এধরণের অভিযান কোনভাবেই বন্ধ করা হবেনা। আলোচিত ভবন নিয়ে তিনি বলেন, ওই ভবনটি রেলওয়ের জায়গায় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নির্মান করা হচ্ছে। তাদের কোন প্রকার বৈধতার কাগজপত্র নেই। তাই অভিযানকালে নিয়ম নীতি মেনে সম্পূর্ণ আইনগতভাবেই এটি জব্দ করে অবকাঠামো প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা কোনভাবেই এটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কোন সুবিধাই করতে পারবেনা।