গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে আগামী সোম ও মঙ্গলবার দুইদিন বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
শনিবার বিকালে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আগামীকাল রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে- এই কর্মসূচির প্রতি বিএনপির সমর্থন আছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমরা যেটা প্রতিবাদ করছি, বিক্ষোভ মিছিল করছি সেটা হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের দিনে মানুষকে হত্যা করার প্রতিবাদে। খুব স্পেসিফিক বলছি যে, প্রত্যেকটা সংগঠনের, প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার আছে প্রতিবাদ করা বা তার মত প্রকাশ করবার। সেই মত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যখন গুলি করা হয়েছে আমরা সেইটার প্রতিবাদ করছি, আমরা এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করছি।”
‘‘ আমাদের একটি জিনিস মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেকটি নাগরিকের ন্যায় সঙ্গত সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে ভিন্নমত পোষন করবার। সেখানে তারা যদি কোনো কর্মসূচি দেয় বা হরতাল আহবান করে সেটা যৌক্তিক তো বটেই। তবে একই সঙ্গে সরকার যদি তাকে প্রতিহত করবার বা বন্ধ করবার অগণতান্ত্রিক অথবা হঠকারী হুমকি দেয়- সেটা হবে একেবারেই হঠকারী ব্যবস্থা। সরকারের কাছে থেকে এই ধরনের ব্যবস্থা কেউ আশা করতে পারে না। যদি এখানে কোনো অবাঞ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ গতকাল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশে নির্বিচার লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষন এবং একই সঙ্গে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর আক্রমনের প্রতিবাদে যে রক্ত ঝরেছে বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রাম ও ব্রাক্ষনবাড়ীয়ায়-এটা নিসন্দেহে ৫০ বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম একটি কলংকজনক অধ্যায়। এটা নজিরবিহীন ঘটনা। আমরা এই হত্যাকান্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ ইতিমধ্যে জানিয়েছি।”
‘‘ এই জঘন্য হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে সরকার তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বর্হিপ্রকাশ ঘটালো। দীর্ঘদিন নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রাখবার জন্য হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দল ও ভিন্নমতকে দমন করে চলছে। সকল রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদী শাসন চিরস্থায়ী করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে যা প্রকারান্তরে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।”
তিনি জানান, স্বাধীনতা দিবসের দিনে দেশে বিভিন্ন স্থানে মানুষ হত্যা ও পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার জাতীয়তাবাদী যুব দল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল সারাদেশে বিক্ষোভ করবে।
এই তিন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শনিবারও বিক্ষোভ করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে পুলিশি হামলা ও গ্রেপ্তারের মুখে পড়েছে। হবিগঞ্জে মনজুরুল কিবরিয়া, আদনান ফারহাদ, গাজীপুরে শামীম মিসির,মাসুদ মোল্লা, বেলায়েত হোসেন, মানিকগঞ্জের রাকিব হোসেন, ফরিদপুরে ইলিয়াস হোসেন, মুরাদ আহমেদ, হেমায়েত উল্লাহসহ বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন।
হবিগঞ্জে পুলিশি হামলায় গুলিবিদ্ধ জহিরুল হক শরীফসহ বিভিন্ন স্থানে আহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
এর আগে বিকাল তিনটায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠকে দলের মহাসচিব ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।