মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো ভুল হয়েছে: ডা. জাফরুল্লাহ

আপডেট: মার্চ ২৭, ২০২১
0

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো ভুল কাজ হয়েছে বলে
মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

শনিবার (২৭ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘ভাসানী অনুসারী পরিষদ’
আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে
সারা দেশে শান্তিপূর্ণ জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশের গুলিতে নিহত এবং শত
শত মানুষ আহত হওয়ার প্রতিবাদে সভাটির আয়োজন করা হয়।গণস্বাস্থ্যের
প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, হেফাজত ইসলামের
সমর্থকদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হরতাল ডাকা মৌলিক অধিকার। তাই
হেফাজতের হরতালে বাধা দেবেন না। তিনি হরতালে সবাইকে সমর্থন দেওয়ার আহবান
জানান।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুকে যেদিন সপরিবারে হত্যা করা
হয়েছিল, সেদিন আওয়ামী লীগের এই দুর্ধর্ষ নেতারা কোথায় পালিয়ে
গিয়েছিলেন, কোন ইঁদুরের গর্তে ঢুকেছিলেন তারা, খোঁজ পাওয়া যায়নি।
একমাত্র কাদের সিদ্দিকী প্রকাশ্যে প্রতিবাদে এসেছিলেন। আর আওয়ামী লীগের
প্রিয় নেতারা যেমন আব্দুল মালেক উকিল কী বলেছিলেন— ‘জালেমের হাত থেকে
দেশ রক্ষা পেয়েছে।’ আমি তখন লন্ডনে, আমার অজান্তেই চোখের পানি ঝরছিল।’’

তিনি বলেন, ‘আপনারা যাদের ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করতে চেয়েছেন, সেই হেফাজতও
আজ প্রতিবাদ করছে। আপনার পার্টির লোকেরাও আপনার সামনে এসে কথা বলতে ভয়
পায়, তবুও তারা প্রতিবাদ করেছে। কীভাবে? আপনি স্মরণ করুণ। ১৭ মার্চ
আপনার মহান পিতার জন্মদিবস। সেদিন আওয়ামী লীগের প্ররোচনায় অনুষ্ঠিত
হয়েছিল শাল্লাতে সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচার। তারা সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচার
করেনি, তারা আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে, মোদিকে আমন্ত্রণ একটি ভুল
কাজ।’

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘মোদি সাহেব বলেছেন, তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জেলে ছিলেন। কেন জেলে ছিলেন? পাকিস্তানের পক্ষে
ছিলেন নাকি উনি? আর কোনও ভারতীয় নেতা-তো একাত্তর সালে জেলে যাননি৷ সত্যি
কথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। উনি আজকে আবিষ্কার করছেন এখানে জঙ্গি।
আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তাকে কে দিয়েছে?
সুতরাং, এসব বিষয় থেকে আপনি সরে আসুন প্রধানমন্ত্রী৷’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আজকে আপনি সবার
থেকে বিচ্ছিন্ন। এমনকি আপনার বোন শেখ রেহানা থেকেও বিচ্ছিন্ন। আপনি
ভারতের অনুগত দাসে পরিণত হয়েছেন। এখন আপনার যদি প্রস্থানের সময় হয়,
তখন কে আপনার পাশে দাঁড়াবেন? হয়তো শেখ রেহানাই থাকবেন। অথচ মোদির হাত
থেকে পুরস্কার নিয়ে শেখ রেহানার হাতকেও আপনি কালিমাযুক্ত করে দিলেন।’

পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ একটি সমাবেশ। পুলিশ ভাইদের কাজ
হলো শান্তি রক্ষা করা। এখানে কোনও উচ্ছৃঙ্খল জনতা নেই। তাই আপনারা আইন
শৃঙ্খলার জন্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন। আপনারা এখান থেকে কাউকে ধরে নিয়ে
যাবেন না। প্রতিবাদ করা আমাদের মৌলিক অধিকার।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, ‘এই সরকার তাদের সুপ্রিয়
উগ্র-সাম্প্রদায়িক নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করতে গতকাল (শুক্রবার)
ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ লীগ দিয়ে বায়তুল মোকাররমে তাণ্ডব চালিয়েছে।
এখন তাণ্ডব চালাচ্ছে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ২৫
মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে অতর্কিতভাবে ঘুমন্ত জাতির ওপরে
গণহত্যা চালিয়েছিল, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২৬ মার্চ এই সরকার
আমাদের ওপরে সেই গণহত্যার শামিল একটি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আজকে যদি দেশে
গণতান্ত্রিক সরকার থাকতো, তাহলে এই তাণ্ডব ঘটতে পারতো না। তারা ক্ষমতায়
আছে ভারতের কৃপায়। তাই তারা মোদিকে বুঝিয়ে দিয়েছে এদেশের মানুষ
গোল্লায় যাক সেটার তোয়াক্কা করি না, আমরা আপনার ভালোবাসা চাই। তাই
মোদিকে তারা ৮টি লাশ উপহার দিয়েছে।’

প্রতিবাদ সমাবেশে আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম
বাবলু সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের
প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ
সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপিকা দিলারা চৌধুরী,
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর, ডাকসুর সাবেক ভিপি
নূরুল হক নূর, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ভাসানী
অনুসারী পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু,ব্যারিস্টার তানিয়া আরমান
প্রমূখ।