সৈয়দপুরে ৭৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্যাতন : স্বামী সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট: মে ২৩, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
দীর্ঘদিন ধরে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগে নীলফামারীর বিজ্ঞ ভার্চুয়াল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে স্বামী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাশীঈদ আরেফুল হক (৩০), তাঁর বাবা সাপ্তাহিক আলাপন পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক এবং সৈয়দপুর প্রেসক্লাবের একাংশের সভাপতি সাংবাদিক আমিনুল হক, মা সৈয়দপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ নার্জিজ বানু ও আত্বীয় নূরুন নবী দুখু মিয়ার বিরুদ্ধে। আদালত গত ২০ মে অধিকতর তদন্তের ভার দিয়েছেন রংপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টেগেশন (পিবিআই) কে।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়, সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া নিবাসী বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী প্রকৌশলী নাশীঈদ আরেফুল হক বিগত ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শহরের বাঁশবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা ব্যবসায়ী এজাজুল ইসলাম বাচ্চু ছোট্ট মেয়ে নাভানা শারমিন (অনন্যা) কে বিয়ে করেন। এর কিছুদিন পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্ত্রীর উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন।

এ অবস্থায় স্ত্রীকে রেখে আমেরিকা চলে যান ওই প্রকৌশলী। নাভানা নিজের আত্মসম্মান ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করতে থাকেন। পরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশে ফিরে স্ত্রীকে জানান, আমেরিকার ক্যালেফোর্নিয়া শহরে নিজের ফ্ল্যাট তৈরির পর নাভানাকে নিয়ে সেখানে উঠবেন। এজন্য প্রয়োজন ৭৫ লাখ টাকা। বাবার বাড়ি থেকে ওই টাকা নিয়ে আসতে নাভানার উপর চাপ দেওয়া হয়। এতে অসম্মতি জানালে তার উপর নেমে আসে অবর্ণনীয় নির্যাতন।

প্রবাসী ছেলের উস্কানিতে শ্বশুর-শাশুড়ি নাভানার উপর অত্যাচার বাড়িয়ে দেয় এবং বাড়ি থেকে বের করে দেন। এ অবস্থায় নাশীঈদ আরেফুল হক স্ত্রীকে দেশে রেখে বিদেশে পাড়ি জমান। এর দীর্ঘদিন পর গত ৫ মে নাশীঈদ আরেফুল হক ফোন করে জানান, তিনি ঈদ করতে দেশে আসছেন। খুশি হয়ে উঠেন নাভানা। তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে যান নিজ বাড়িতে। তবে স্বামী আর ঈদ করতে আসেননি।

গত ১০ মে ২৭ রমজান ওইদিন আবারও শ্বশুর আমিনুল হক, শ্বাশুড়ি নার্জিজ বানু ও আত্বীয় নূরুল হক মিলে বেধড়ক মারপিট করেন নাভানাকে। এতে মুমূর্ষ হয়ে পড়েন তিনি।
প্রতিবেশী মোঃ সামিউল ইসলাম নির্যাতনের খবর পেয়ে ছুটে যান এবং বিষয়টি নাভানার বাবা-মাকে জানিয়ে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করান।

এ ঘটনায় গত ১৬ মে নাভানা বাদী হয়ে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়িসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ঐ মামলাটি করেন।

এ নিয়ে কথা হয় বাদী নাভানা শারমিন (অনন্যা) এর সাথে। তিনি জানান, আমি নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আমার বাবার এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই।

ঘটনাটি নিয়ে গত প্রায় দুই সপ্তাহ যাবত কানাঘুষা চলছিল। কিন্তু কোন পক্ষই মুখ না খোলায় এবং অনেকটা গোপনে ঘটায় প্রকাশ হতে বিলম্ব হলেও বেশ চাউর হয়েছিল। এবার মামলা হওয়ায় ধোয়াশা কেটে গিয়ে সামনে এসেছে। এতে সচেতন মহল আক্ষেপ করে মন্তব্য করছেন যে, সাংবাদিক, উপাধ্যক্ষ, প্রকৌশলীর পরিবার যে এত লোভী ও নিচু মানসিকতার তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। অথচ এরাই নাকি জাতির বিবেক, মানুষ গড়ার কারিগর এবং শিক্ষিত ভিআইপি নাগরিক?

শাহজাহান আলী মনন,
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি