স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চাঞ্চল্যকর জাহিদুল ইসলাম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও মূল হত্যাকারীসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। সোমবার (১৬ আগস্ট) রাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামী সাইফুল ইসলাম (৩০), পিতা- মোঃ গফুর আলী, সাং- আদর্শগ্রাম, থানা-সাঘাটা, জেলা- গাইবান্ধা ও তার সহযোগী অন্যতম আসামী ২। মোঃ শামীম (৪০), পিতা- মৃত গিয়াস উদ্দিন, সাং- মসজিদপাড়া, থানা+জেলা- পঞ্চগড়, রনি মিয়া @ টনি (৩০), পিতা- ইব্রহীম খলিল, সাং- দুর্গাপুর, থানা-সাঘাটা, জেলা- গাইবান্ধা, আঃ মান্নান শেখ (২২), পিতা- মোঃ ইব্রাহীম শেখ, সাং-অন্যদানগর, থানা- পীরগাছা, জেলা- রংপুর, মোঃ সুমন (৩৮), পিতা-মোঃ লস্কর প্রামাণিক, সাং-পুটিমারী, থানা-সিংড়া, জেলা- নাটোর, মামুনুর রশিদ (৩৫), পিতা-মৃত তাইজ উদ্দিন, সাং-গালিমপুর, থানা-বাগাতিপাড়া, জেলা- নাটোর ও মোঃ হাবিবুল্লাহ (৫২), পিতা- মৃত ইয়াছিন, সাং-চান্না বৌবাজার, থানা জয়দেবপুর, জেলা-গাজীপুর।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা (পিএসসি) জানান, গত ২১ জুলাই জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার টেংরারটেকস্থ এশিয়ান হাইওয়ে রোডের পশ্চিম পাশের্¡ মাল্টিব্রান্ড গ্রুপের বাউন্ডারি সংলগ্ন ডোবার মধ্যে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। উক্ত ঘটনার খবর পাওয়ার পর গত ২৪ জুলাই হাসপাতাল মর্গে উপস্থিত হয়ে কাজল হোসেন (২১) নামক এক ব্যক্তি লাশের আলোকচিত্র, লাশের পরনে থাকা কাপড় দেখে লাশটি তার বাবা জাহিদুল ইসলাম বলে সনাক্ত করে। উক্ত ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরূদ্ধে নিহতের ছেলে কাজল হোসেন বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-৪০, তারিখ-২৫/০৭/২০২১)।
তিনি আরো জানান, উল্লি¬খিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহসহ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। র্যাব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে উক্ত ক্লু-লেস ও লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। অতঃপর র্যাব-১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল কর্তৃক ১৬ আগস্ট রাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে উক্ত ক্লু-লেস ও লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামীসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই রাতে উক্ত অজ্ঞানপার্টি চক্রের মূলহোতা সাইফুল ইসলাম ঢাকার কেরাণীগঞ্জ হতে এবং তার সহযোগী রনি মিয়া গাইবান্ধা হতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় অবস্থানরত মোঃ শামীম, আঃ মান্নান শেখ, মোঃ সুমন, মামুনুর রশিদ ও মোঃ হাবিবুল্লাহসহ ৯ জনের একটি দল সাইফুলের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়। উক্ত চক্রের মূলহোতা সাইফুলের একজন অন্যতম সহযোগীসহ আরও ৫ জনের একটি দল নাটোর থেকে ১টি ট্রাক নিয়ে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এসে সাইফুলের দলের সাথে মিলিত হয়। ১৯ জুলাই ভোর রাতে নারায়ণগঞ্জ হয়ে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা ঘটনার দিন দুপুরবেলা কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ¡রোড এলাকায় এসে পৌছালেও তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। সন্ধ্যার পর উক্ত অজ্ঞানপার্টি চক্রের মূলহোতা সাইফুল নিজে যাত্রীসেজে ঈদে ঘরমুখো সাধারণ যাত্রীদেরকে কম টাকায় পরিবহনের আশ^াস দিয়ে ভিকটিম জাহিদুল ইসলাম (৫০) সহ তার সঙ্গীয় আলম (৫০) আরিফ (৩০) শরীফুল ইসলাম (৫০) ও সবুজ (৩০) সহ মোট ৫ জন যাত্রীকে সু-কৌশলে তাদের ট্রাকে উঠিয়ে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা উল্লিখিত যাত্রীদের নিয়ে কিছুদূর আসার পরে পথিমধ্যে তাদের দেখিয়ে শুকনো খাবার ও কোমল পানীয় ক্রয় করে। পরবর্তীতে তারা ট্রাকের সামনে পূর্ব থেকেই রাখা ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত অনুরুপ শুকনো খাবার ও কোমল পানীয় সু-কৌশলে পরিবর্তন করে ট্রাক চলাকালীন সময়ে ভিকটিম জাহিদুল ইসলামসহ ৪ জন যাত্রীকে খাইয়ে অজ্ঞান করে তাদের কাছে থাকা সবকিছু লুট করে নেয়। একজন যাত্রী উক্ত ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত শুকনো খাবার ও কোমল পানীয় না খাওয়ায় তাকে বেধড়ক মারধর করে। পরবর্তীতে উক্ত অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা কুমিল্লার দাউদকান্দি ব্রীজ পার হয়ে প্রথমে ৩ জন যাত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। তারপর কিছুদূর আসার পর অজ্ঞান না হওয়া যাত্রীকে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। সবশেষে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন টেংরারটেকস্থ এশিয়ান হাইওয়ে রোডের পশ্চিম পাশের্¡ ঝোপঝাড়ের মধ্যে ভিকটিম জাহিদুল ইসলামকে গড়িয়ে ফেলে দেয়। ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত শুকনো খাবার ও কোমল পানীয় খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ভিকটিম জাহিদুল ইসলাম এর নিকট টাকা পয়সা কম থাকায় সাইফুলের নেতৃত্বে আসামীরা ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে উপুর্যপুরি কিল ঘুষি ও প্রচন্ড মারধর করে। ঔষধের বিষাক্ত প্রভাব এবং প্রচন্ড মারধর করার ফলে ভিকটিম জাহিদুল ইসলামের মৃত্যু হয় বলে ধারনা করা হয়।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃতদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উল্লিখিত অজ্ঞান পার্টি চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ (প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর) ঢাকাসহ সারাদেশব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় কখনও এককভাবে আবার কখনও সংঘবদ্ধ হয়ে খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ মেশানোসহ বিভিন্নভাবে যাত্রীদের অজ্ঞান করে টাকা, মূল্যবান সামগ্রীসহ যাত্রীদের সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে আসছিল। গ্রেফতারকৃত উক্ত চক্রের মূলহোতা সাইফুল ইসলামসহ তার সহযোগী অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটনের দায়ে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং তার সকলেই জেল খেটেছেন। গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।