অসুস্থ খা্লেদা জিয়া সম্পর্কে ‘যাচ্ছে তাই কথা’ বলে সরকার পার পাবে না — হুশিয়ারী মীর্জা ফখরুলের

আপডেট: মে ১১, ২০২১
0

খা্লেদা জিয়া সম্পর্কে ‘যাচ্ছে তাই কথা’ বলে সরকার পার পাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে সরকারের কিছু প্রভাবশালী মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি দেন।

তিনি বলেন, ‘‘ যেসব কথা বলা হচ্ছে এখন এগুলো শুধু অশ্লালিন নয়, অমার্জিত এবং অগ্রহনযোগ্য। আমি আবারো বলছি, দয়া করে সংযত হোন, দয়া করে আপনাদের কথা-এটা একটু কমান।”

‘‘ যাচ্ছে তাই বলবেন আর আপনারা মনে করবেন সবসময় পার পেয়ে যাবেন এসব কথা। এভরি থিং ইজ বিং নোটেড এন্ড দি পিপলস অব দিস কান্ট্রি উড বি গিভ এনারসার টু টাইমলি। সময় যখন আসবে তারা তার জবাব দিয়ে দেবে।”বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ তাকে(খালেদা জিয়া) অন্তরীন করে রাখা, তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া এটাই সরকারের লক্ষ্য। তার দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।”

‘‘ মূল উদ্দেশ্যটা কী? এদেশে জনগনের প্রতিনিধি হিসেবে একটি দল আছে সেটা হচ্ছে বিএনপি, জনগনের রাজনীতি যেটা সেটা হলো আপনারা একটা মাত্র দল ধারণ করে সেটা হচ্ছে বিএনপি। অর্থাত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশের অন্তরআত্মা সেই রাজনীতি করে বিএনপি। এই দলের মূল শক্তি জনগন। বিএনপির ভোটাররা যারা বাংলাদেশী, যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম দেখতে চায়, শতকরা এক‘শ জন মানুষের যে মূলবোধ, ধর্মীয় বোধ, চিন্তাবোধ যারা ধারণ করে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিএনপি কাজ করে।”

খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিতসার জন্য সরকারের ঘোষিত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ উনারা বলেছেন, অনুমতি দিতে পারছেন না। কেনো পারছেন না যে যুক্তিগুলো দিলেন, সেই যুক্তিগুলো একেবারেই অগ্রহযোগ্য যুক্তি, খোঁড়া যুক্তি। তারা বলেছেন যে, সাজাপ্রাপ্তদের বিদেশে পাঠানোর নজির নেই। এটা তারা ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, জনগনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন।”

মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব

‘‘ ১৯৭৯ সালে আমাদের প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী আসম আবদুর রব জেলে ছিলেন। তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব তাকে এই আইনে মুক্তি দিয়ে চিকিতসার জন্য জার্মানি পাঠানো হয়েছিলো।এরপরে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন এম মনসুর আলী সাহেবের ছেলে মোহাম্মদ নাসিম সাহেব ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার সাজাপ্রাপ্ত উনি তাকে বিদেশে চিকিতসার জন্য পাঠানো হয়েছিলো। এরপর আমি নাম বলব না, দুই সহোদর ভাই অত্যন্ত উচ্চপদস্ত প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তার ভাই, তারা কিন্তু এই ৪০১ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তাদেরকে মাফ করে দিয়ে বাইরে পাঠানো হয়েছিলো। সুতরাং কেনো এই সমস্ত খোঁড়া যুক্তি, সোজা বলেন যে, আমরা দেবো না।”

তিনি বলেন, ‘‘ সেই বলার মতো তো বদান্যতা আপনাদের নাই, সেই বড় যে হৃদয় সেটা আপনাদের নাই।শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব সাহেবের এটা ছিলো। উনিও তার অনেক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তিনি এসমস্ত সুবিধা দিয়েছেন, ছেড়ে দিয়েছেন, মুক্তি দিয়েছেন এবং তাদেরকে হেলপও করেছেন।”‘‘ কিন্তু আপনাদের সেই বন্যতা নেই। থাকলে বেগম খালেদা জিয়াকে অনেকদিন আগে আপনারা ছেড়ে দিতেন, আপনারা রাজনীতি করতে দিতেন।”
সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে ফখরুল বলেন, ‘‘ এতো ভয় কেনো? নির্বাচন করবেন না, নির্বাচন আপনারা জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসবেন। কারণ আপনারা জানেন যে, নির্বাচন হলে আপনারা কোনো দিনই জিততে পারবেন না।”

‘‘ কিসের গণতন্ত্রের কথা বলেন, কিসের নৈতিকতার কথা বলেন, কিসের ইথিক্সের কথা বলেন-আমরা আজ পর্যন্ত বুঝতে পারি না।সত্যিকার কথা বলতে কি-আওয়ামী লীগ এটা বিশ্বাসই করে না। যখনই তারা ক্ষমতায় এসছে, তখনই তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য যা যা করা দরকার তা করেছে। ইনফেক্ট দে উসট্রয় বাংলাদেশ, আমি আগেও বলেছি তারা বাংলাদেশের সোলটাকে(আত্মা) মেরে ফেলেছে, ধ্বংস করে ফেলেছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ তাদের (সরকার) এই আচরণ ম্যাডামকে বিদেশে উন্নত চিকিতসার জন্য যেতে না দেয়ার বিষয়টা এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, অমানবিক এবং জনগনকে ভ্রান্ত ধারা দেয়া হচ্ছে, বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা তখনও জানিয়েছি, এখনো জানাচ্ছি।”

‘‘ আমরা কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদনটা করি নাই। আবেদটা করেছেন পরিবার।ইনস ভেরি লাইটলি এন্ড জেন্যুইন। তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় যারা আবেদনটা করেছেন। সেখানে সবাই এসপেক্ট করেছিলো এবংকি বিদেশীরা পর্যন্ত তাকে চিকিতসার জন্য বাইরে যেতে সুযোগ দেয়া হবে। সেটা তারা দেয় নাই।’’

খালেদা জিয়া সম্পর্কে সরকারের কিছু মন্ত্রীর ‘বিদ্রুপাত্মক’ মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এইসব মন্ত্রী যারা ওইভাবে ক্ষমতায় না আসলে কোনোদিন আপনার এমপি হওয়ারও স্বপ্ন দেখতে পারতো না। তারা আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে যে ধরণের উত্তি করছেন তা থেকে বিরত থাকবেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের উক্তি করলে তার যথাযোগ্য জবাব এদেশের জনগন আপনাদেরকে দেবে।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

‘পূঁজিবাদীদের পক্ষে সরকার’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনারা শুধুমাত্র কিছু পূঁজিবাদীদের স্বার্থে, কিছু লুটপাটকারীদের স্বার্থে আপনারা পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের হত্যা করছেন। বাঁশখালীতে যে ঘটনা ঘটেছে। এটা তো সম্পূর্ণ শ্রমিকদেরকে হত্যা করা হয়েছে কিছু পূঁজিবাদীর স্বার্থে।”

‘‘ শ্রমিকরা ফান্ডামেন্টালিজ করে নাই। তারা তাদের বকেয়া বেতন চেয়েছিলো, তারা ছুটি বাড়িয়ে চেয়েছিলো। গতকাল টঙ্গিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়েছিলো। কেনো? আলোচনা করেন, কথা বলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে বন্দুক বের করে গুলি করলেন?… কেউই নিরাপদ নয় আজকে।”

লকডাউনে বিএনপির নিপুণ রায় চৌধুরীসহ নেতা-কর্মী এবং আলেম-উলামাসহ বিরোধী দলের আটক রাজবন্দি যেসব নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঈদের আগেই নিঃশর্ত মুক্তি দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব|

প্রণোদনা কোথায় দিচ্ছেন?

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ প্রধানমন্ত্রী বার বার করে বলেছেন যে, প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, আওয়ামী লীগ বলছে। কোথায় প্রণোদনা দিচ্ছেন? এই যে লক্ষ কোটি মানুষ আমাদের অর্থনীতিবিদদের যে হিসাব ৬ কোটি মানুষ ইনফরমাল সেক্টারে কাজ করছে। তাদের ৮০% বেকার। তাদের কোনো আয় নাই।”

‘‘ আমরা বলেছিলাম যে, এদের কাছে কেস টাকাটা পৌঁছানো। এটা খুব কঠিন কাজ না। প্রত্যেকের এনআইডি কার্ড আছে, সেখানে আপনি ব্যবস্থা করে টাকাটা পৌঁছানো যায়। আপনি ১০/১৯ কোটি টাকা দিয়ে বলছেন, দিয়েছি। কেনো আপনি ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করছেন না তাদের জন্য। কেনো? এরাই তো মানুষ, জনসংখ্যার এক দশমাংশ।”

প্রবাসীরা দেশে ফিরে এসে ‘বেকার’ হয়ে আছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে তাদের জন্য সরকারের কোনো বরাদ্ধ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।