আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে দেশের ৫০ টি কর্মসূচি সৈয়দ আবুল মকসুদের নামে উৎসর্গ

আপডেট: মার্চ ১৪, ২০২১
0

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দেশের ৫০টি কর্মসূচি নদী আন্দোলনের অগ্রদূত বাপা’র সহ-সভাপতি সৈয়দ আবুল মকসুদ এর স্মরণে উৎসর্গ করা হয়। গতকাল সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাতীয় নদী জোট ও জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলন এর যৌথ উদ্যোগে ঢাকায় আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস -২০২১ উদযাপন উপলক্ষে “দখল ও দূষণমুক্ত করে নদীর জীবন বাঁচান, বাংলাদেশ বাঁচান” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে আবুল মকসুদকে এই সম্মান প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সদ্য প্রয়াত বাপা’র সহ-সভাপতি সৈয়দ আবুল মকসুদ এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

জাতীয় নদী জোটের আহবায়ক শারমীন মুরশিদ এর সভাপতিত্বে এবং বাপার সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বাপা’র কার্যনির্বাহী সহ-সভাপতি ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন, আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসের পটভূমি তুলে ধরেন ইন্টারন্যাশনাল রিভারর্স এর কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও ওয়াটারকিপারস এলায়েন্স এর পরিচালক শ্যারন খান। উক্ত অনুষ্ঠানে সৈয়দ আবুল মকসুদ এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখবেন বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল, জাতীয় নদী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার ও সৈয়দ আবুল মকসুদের ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ।

এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, অষ্ট্রেলিয়ার বেন এর সমন্বয়ক কামরুল আহসান খান, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, আলমগীর কবির, হুমায়ন কবির সুমন এবং বাপা নদী ও জলাশয় বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ড. হালিম দাদ খান প্রমূখ।

ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন জুম এর মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০০৮ সনের এক সরকারী গবেষণা মতে আমাদের দেশে কলকারখানাগুলোই হচ্ছেনদী দূষণের প্রধান উৎস। এসব থেকে নানারকম দীর্ঘস্থায়ী বিষাক্ত তরল দূষক পরিবেশের সীমাহীন ক্ষতি সাধন করে চলছে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে প্রমানিত ৯টি দীর্ঘস্থায়ী জৈব দূষক: এলড্রিন, ক্লোরডেন, ডিডিটি, ডাইএলড্রিন, এনড্রিন, হেপ্টক্লোর, হেক্সাক্লোর বেনজিন, মিরেক্স ও টক্সাফেন। এগুলো ১৯৯৮ সনে সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ হলেও এর ৭টি বাংলাদেশে এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী নদী রক্ষায় তার দৃঢ় প্রত্যয় বার বার প্রকাশ করেছেন। নদী রক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা আন্তরিক থেকেও নির্বাহি ক্ষমতার অভাবে খুব বেশী কিছু করতে পারছেননা। আমাদের প্রয়োজন নির্বাহি ক্ষমতা সম্পন্ন একটি শক্তিশালীনদী কমিশন। তবে আমাদের উচ্চ আদালত নদীকে জীবন্ত স্বত্তা হিসেবে ঘোষনা করেছেন, অতএব এই স্বত্তার ভাল ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার গুলোনিশ্চিত করাও সরকার সহ আমাদের সকলের দায়িত্ব।

সুলতানা কামাল জুম এর মাধ্যমে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ এর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি দেশের নৈতিকতা বিরোধী যে কোন কাজে সেচ্চার ছিলেন। তিনি অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। দেশের নদী ও পরিবেশ রক্ষায় তিনি ছিলেন অগ্রদূত। সুলতানা কামাল আরো বলেন নদী, প্রকৃতি ও সভ্যতা মানবজাতির সাথে ওতোপ্রতভাবে জড়িত। মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে হলে নদীর বিকল্প নাই। তিনি বলেন নদী হচ্ছে দেশের সম্পদ আর দেশের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রীর নিকট এ দাবীগুলো পৌছাবে এবং তিনি দেশের এই অমূল্য সম্পদ নদীগুলোকে রক্ষা করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার জুম এর মাধ্যমে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, নদী গত ১৫ই জানুয়ারীতে আমাকে সৈয়দ আবুল মকসুদ ফোন করে বলেন আমরা নদী রক্ষায় প্রয়োজনে আবারো প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়াবো। তিনি তাঁর জীবনের প্রায় সবটুকু সময়ই অতিবাহিত করেছেন দেশের নদী, প্রকৃতি ও মানব কল্যাণে। ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার আরো বলেন দেশে নদী রক্ষার অনেক আইন আছে, কিন্তু তা বাস্তবায়নের ঘাটতি রয়েছে। নদী কমিশনকে নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। দেশের নদী উন্নয়নের প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না সেই জন্য সরকারের পাশা পাশি বাপাসহ দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে কাজ করতে হবে।

শ্যারন খান জুম এর মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত থেকে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসের পটভূমি তুলে ধরেন। তিনি ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইন্টারন্যাশনাল রিভার্সের উদ্যোগে আয়োজিত সম্মেলনের গৃহীত প্রস্তাবের আলোকে ১৯৯৭ সাল থেকে বিশে^র নদী প্রেমী ও নদী কর্মীরা নদীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ড করার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে আসছে বলে জানান।

সভাপতির বক্তব্যে শারমীন মুরশিদ বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ ছিলেন একজন সাদা মনের মানুষ। এই মানুষটিকে হারিয়ে দেশের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে নদী রক্ষার চমৎকার আইন আছে তার পরেও কেন নদী রক্ষা করতে পারছি না। আমরা আন্দোলন করি নদী কমিশন নদী উদ্ধার করে আবারও উদ্ধার করা নদীগুলো পূনঃদখল হয়ে যায়। একটি দখলদারকে উচ্ছেদ করতে সারা বছর লেগে যায় অথচ সরকারের অবহেলা ও প্রভাবশালীদের প্রভাবের কারনে তা আবার দখল হয়ে যায়। এটা অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়।