নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের জন্য দলকে ‘সর্বাত্মক’ প্রস্তুতি নেয়ার আহবান মীর্জা ফখরুলের

আপডেট: জুন ১০, ২০২১
0

নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের জন্য দলকে ‘সর্বাত্মক’ প্রস্তুতি নিতে বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, ‘‘ এখন আর সময় নাই। আগামী দিনের জন্য তৈরি করে ফেলেন। শক্ত হয়ে দাঁড়াই আমরা নিজেদের পায়ে, দাঁড়িয়ে আমরা জনগনকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে আসি। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করি।”

‘‘ দাবি একটাই- চলে যাও, চলে যাও, রেহাই দাও বাংলাদেশকে। আমাদের পরিস্কার কথা, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিন।তা হলে না হলে এই বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে তাদের অধিকার আদায় করতে হয় তারা তা জানে।”

ক্ষমতাসীন অপকর্মের কথা বলতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ ওদের একজন এমপি কিছুদিন আগে পার্লামেন্টে বলেছেন, বড় চোরদের চুরি দেখে ছোট চোররা এখন লজ্জা পাচ্ছে। বড় চোর হচ্ছে ওদের মন্ত্রী, বড় বড় নেতারা। করোনা মানুষের জীবন নিয়ে যাচ্ছে, মানুষের জীবনের প্রশ্ন, বাঁচার প্রশ্ন, মরার প্রশ্ন। সেখানেও তারা চুরি করছে। টেস্টে চুরি, মাস্কে চুরি, পিপিইতে চুরি, ডাক্তার-নার্সদের টাকা দেয়ার বেলা চুরি, আইসিইউ বেডে চুরি। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল চুরি, একটা হাসপাতাল নাই, উদাও হয়ে গেছে।”

‘‘ চিন্তা করতে পারেন। আবার নতুন করে একটা হাসপাতাল তৈরি করবে, আবার ওখানে চুরি করবে, আবার কমিশন নেবে। আর ওই টাকা পাঠাবে কানাডা, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে। আমার কথা নয়, আপনারাই এখন বলতে শুরু করেছেন পার্লামেন্টে, বিভিন্ন জায়গায়.. এই যে অর্থ পাঁচার হচ্ছে-এটা ভয়াবহ। আমাদের অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে, ৬ লক্ষ কোটি টাকা গত কয়েক বছরে দেশ থেকে পাঁচার হয়ে গেছে। এটাই আওয়ামী লীগ।”

তিনি বলেন, ‘‘চারিদিকে আপনাদের আশে-পাশে তাঁকিয়ে দেখবেন- আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, বড় নেতা-ছোট নেতা-পাতি নেতা- সব আছে না। তাদের চলাফেরা, চাল-চলন দেখেছেন আপনি, নিশ্চয় দেখেন। রাতারাতি সব আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। এদের হাতে যদি দেশ বেশি দিন থাকে এই দেশের অস্তিত্ব থাকবে না, এদেশ টিকবে না। ছোট বেলা আমরা পড়তাম, গানও শুনেছি- ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে। এই সেই বর্গী এরা।”

‘‘ এদের ভয়ে সব পালিয়ে যাচ্ছে এখন। কাউকে কোনো কথা বলতে দেবে না। কথা বললেই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট। আর বেশি কথা বললে আমাদের নিপুণ রায় চৌধুরীর মতো একটা মিথ্যা অডিও ক্লিফ তৈরি করে তারেক নাশকতার মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এরকম নজির অসংখ্য।সাংবাদিক ভাইয়ের কিছু শক্ত করে লেখতে পারে না। আমি তাদের দোষারোপ করি না, বরংঞ্চ সহমর্মিতা প্রকাশ করি। কারণ লিখলে তো জেল, লিখলেই তো মামলা, লিখলেই তো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, মেরেও ফেলতেছে, হত্যাও করতেছে।”

জিয়াউর রহমানের জীবনাদর্শ দলের নেতা-কর্মীদের জন্য ‘গর্ব’ উল্লেখ করে তা অনুসরণ করার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিনের উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী ‍উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ আজকে দলের নেতা-কর্মীরা জেলখানায়, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বন্দিবস্থায় হাসপাতালে চিকিতসাধীন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে মাটিতে। এমনি অবস্থায় আমরা ভার্চুয়ালি ও এমনি আলোচনার মধ্য দিয়ে কথাই বলে যাচ্ছি। আমার মনে হয় কথায় কাজ হবে।”

‘‘ জিয়ার কথায় চলতে হবে- কথা কম কাজ বেশি। এখন কথা বলার চেয়ে বেশি জরুরী সরকারকে পতন কিভাবে করাবো। সেই পতনের ডাক দেন, সেই আন্দোলনের ডাক দেন। অতীতের ইতিহাসে আমরা থেকেছি, আগামীর ইতিহাসেও আমরা থাকবো। আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি করবো।”

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘‘ আন্দোলনের ডাক আসলে আামি নব্বইয়ের চেতনায় ঘোষণা দিতে চাই, হাসিনার পতন ছাড়া ঘরে ফিরবো না। এভাবে সকলের প্রস্তুতি নিন।”

‘‘ আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের একটি শ্লোগান সেই শ্লোগান হচ্ছে, যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ। যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ। এই হাসিনা সরকারকে হটিয়ে আমরা সেই শহীদ জিয়া বাংলাদেশ, আধুনিক বাংলাদেশ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ, তারেক রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ।”

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ‘‘ আমাদের মনে হচ্ছে, এই করোনার সাথে সম্ভবত এই সরকারের একটা আতাঁত রয়েছে। ওনাদের(সরকার) প্রচার করা মৃতের ও আক্রান্তের সংখ্যা দেখেন। যখনই তাদের প্রয়োজন পড়ে মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে, আবার যখনই প্রয়োজন পড়ে মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা কমে যায়।”

‘‘ এই সমস্ত ভন্ডামি করে কত দিন? ভেবেছেন অনেক তো পার পেয়েছি, এবার করোনার ওপর দিয়ে যদি কিছুদিন পার পাওয়া যায়।অবৈধ প্রধানমন্ত্রী পার পেয়েছেন ঠিক। যখন পার না পাওয়ার চক্করে পড়বেন কোনো আব্বাজান এসে আপনাকে বাঁচাতে পারবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ ঢাকা মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দকে বলব, সারা বাংলাদেশের মানুষ ঢাকার দিকে তাঁকিয়ে আছে। প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড সংগঠনের শক্তি বাড়ান। আগামীতে এই শক্তি নিয়ে আমাদের মাঠে নামতে হবে। আমরা দেখতে চাই, ওদের কত শক্তি আছে, আমাদের জনতার শক্তিকে মোকাবিলা করার।”

মহানগর দক্ষিনের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, মহানগর দক্ষিনের সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিবসহ মহানগরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।