ভোলায় বিষ টোপ দিয়ে অতিথি পাখি নিধনে মহোৎসব

আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২২
0

মোঃ সিরাজুল ইসলাম , ভোলাঃ

শীত মৌসুম শুরুতে শুরু হয়েছে বিষ টোপে অতিথি পাখি নিধনের মহোৎসব। রাতের আঁধারে কিংবা দিনের বেলায় কিছু অসাধু চোরাশিকারী ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার করছে।
২১ নভেম্বর (সোমবার) সকাল ১১ টার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভোলার দৌলতখানের জাহাঙ্গীর মিয়ার ঘাট থেকে বস্তাবন্দি ৩০টি অতিথি পাখি উদ্ধার করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। এসময় কাউকে আটক করা যায়নি। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশে বিষ দিয়ে অতিথি পাখি নিধনের নিশ্চিত হওয়ার জন্য দুইটি হাস নমুনা হিসাবে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশক্রমে প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাসহ উপজেলায় আনা হয়। এরপর স্থানীয় প্রতিনিধি প্যানেল মেয়র আমেনা খাতুন প্রাণী সম্পদের প্রতিনিধি জাফরসহ স্থানীয় লোকজনের উপস্থিত দৌলতখান বন বিভাগের বিট অফিসারের নিকট জব্দকৃত ২৮পিচ পরিযায়ী অতিথি পাখি কেরোসিন সহযোগে গর্ত করে ধ্বংসের জন্য বিট অফিসারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

ভোলার মেঘনার চারদিকে জলরাশি। সুদূর হিমালয়, সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মাইল পারি দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আমাদের দেশে এসেছে। শীতের উষ্ণ রোদেলা আলোতে ঝলমল করছে পানি। ভেসে আসছে কিচিরমিচির শব্দ। চরের কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ে বিভিন্ন রংয়ের পারিযায়ী অতিথি পাখি। একদল ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়ছে। আর একদল চরের পানিতে ডুব দিয়ে খাবার খাচ্ছে। কেউ সাঁতার কাটছে। নয়ন জুড়ানো এক অপরূপ মনোমুগ্ধ দৃশ্য। যা দেখে চোখ ও মন জুড়িয়ে যায়। শিকারী বিষ প্রয়োগে ভাসতে থাকে অসংখ্য মৃত পাখি।

ভোলার দৌলতখানসহ মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চোখে পড়ে এ দৃশ্য। সামান্য টাকার লোভে বিষাক্ত টোপ দিয়ে পাখি শিকার করতে গিয়ে মারা পড়ছে শত শত পাখি। পরে জবাই করা জোড়া প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে ৮শ টাকায়। এভাবে নির্বিচারে পাখি শিকার করার ফলে পাখিদের আগমন যেমন কমে যাচ্ছে। তেমনি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসম্য। প্রাণনাশ ক্যান্সের হুমকিতে পরছে মানবকুল। সৌন্দয্য হারাচ্ছে মনমুগ্ধকর চরগুলো। এছাড়া অতিথি পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিকারীদের দৌরাত্ম আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে বলা হয়েছে পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল ও এক লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে অপরাধীর দুই বছরের জেল ও দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হাসনাইন জানান, শীতের শুরুতে একটু অসাধু চক্র বিষ দিয়ে নদীতে চিংড়ি মাছ এবং অতিথি পাখি শিকারের জন্য তৎপর হয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিতিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে বিষ দিয়ে নিধনকৃত চিংড়ি মাছ না পাওয়া গেলেও, বিষ দিয়ে নিধনকৃত অতিথি পাখি পাওয়া যায়। কিন্তু চক্রটি দ্রুতগামী নৌকাসহ ছটকে পরে। তিনি এবিষয় বন অধিদপ্তর প্রানী সম্পদ এবং উপজেলা প্রসাশনের সহযোগী কামনা করেন এবং খুব দ্রুত এই চক্রটিকে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে আটক করার আশ্বাস দেন।

পরে ভোলা বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সহযোগীতায় আমরা এই অতিথি পাখি উদ্ধার করি। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং মামলা প্রক্রিয়া রয়েছে।