মহান আল্লাহর অনুগ্রহের কথা ভাববার সময় নেই আমাদের। অথচ তাঁর মেহেরবানিতে আমরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছি না, উন্মাদ হয়ে রাস্তায় ঘুরচ্ছি না, কয়েদি হয়ে কারাভোগ করছি না—‘আলহামদু লিল্লাহ’! আনমনে-অবহেলায় সময় বয়ে যায়। প্রতিদিনের ৮৬ হাজার ৪০০ সেকেন্ডের অব্যবহৃত একটি সেকেন্ডও আমরা জমা রাখতে পারি না, বরং হারিয়ে যায় মহাকালের অতলান্ত গভীরে!! মহান আল্লাহ জানিয়ে দিচ্ছেন—‘মহাকালের শপথ। মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ…’ (সুরা : আসর, আয়াত : ১)
মুসলিম মননে নিয়মানুবর্তিতা ও সময়ানুবর্তিতা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণী—‘আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে পৃথিবীর কোনো জীবজন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন।
তারপর তাদের সময় পূর্ণ হলে তারা জানতে পারবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি লক্ষ রাখছেন।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৪৫)
পবিত্র কোরআনে মানবজীবন সম্পর্কে ঘোষণা—‘তিনি (আল্লাহ) মৃত্যু ও জীবনকে সৃষ্টি করেছেন, কে সত্কর্ম করে তা পরীক্ষা করার জন্য।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ২)
মানুষের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বয়স একটি বড় বিষয়।
সাধারণত ৬০ বছর তার কর্মকাল। প্রিয় নবী (সা.) তাঁর উম্মতের গড় বয়স প্রসঙ্গে বলেন, আমার উম্মতের আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, কম লোকই এ বয়স অতিক্রম করে। (তিরমিজি)
প্রিয় নবী (সা.)-এর পবিত্র আয়ুষ্কাল মাত্র ৬৩ বছর ছিল। বিভিন্ন নবীর জীবনকাল (তাঁদের বয়স নিয়ে মতভিন্নতা আছে) ছিল : আদম (আ.) এক হাজার বছর, নুহ (আ.) ৯৫০ বছর, শোয়াইব (আ.) ৮৮২ বছর, সালেহ (আ.) ৫৫৮ বছর, জাকারিয়া (আ.) ২০৭ বছর, ইবরাহিম (আ.) ১৯৫ বছর, সুলায়মান (আ.) ১৫০ বছর, ইসমাঈল (আ.) ১৩৭ বছর, ইয়াকুব (আ.) ১২৯ বছর, মুসা (আ.) ১২৫ বছর, ইসহাক (আ.) ১২০ বছর, হারুন (আ.) ১১৯ বছর, ইউসুফ (আ.) ১১০ বছর।
মানুষের জীবনচক্র প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর সতর্কবাণী—‘তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, পরে শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর জমাট রক্ত থেকে, তারপর তোমাদের শিশুরূপে বের করেন, তারপর হও যৌবনপ্রাপ্ত, তারপর উপনীত হও বার্ধ্যক্যে। তোমাদের কারো বা আগেই মৃত্যু হয়ে যায়…।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬৭ ও ৬৮)
সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
বয়স ও সময়কে দোষারোপ করে জাহান্নামিদের আক্ষেপ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বাণী—“সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, হে আমাদের রব, আমাদের নিষ্কৃতি দিন, আমরা সৎ কাজ করব, আগে যা করতাম তা আর করব না। আল্লাহ বলবেন, ‘আমি কি তোমাদের এতটা বয়স দিইনি যে তখন কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারতে…।” (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৭)
দীর্ঘ আয়ুষ্কাল ইবাদত, সত্কর্ম ও সত্যোপলব্ধির সুযোগ এনে দেয়। হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি কম বয়স পাবে তার জন্য তো ওজরের সুযোগ থাকে, কিন্তু ৬০ বছর এবং এর বেশি বয়সের অধিকারীদের জন্য কোনো ওজর নেই। (বুখারি)
বস্তুত মানুষের জন্ম যেমন জীবনের অংশ, মৃত্যুও তেমন জীবনের বাইরের কিছু নয়। জীবন ক্রমেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানেই সময় ও বয়সের তাৎপর্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি দুর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন; তারপর দুর্বলতার পর শক্তি দেন, আবার শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধ্যক্য…।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৫৪)
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,
ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর