গায়ের জোরে আ’লীগের নির্বাচন করার দিন শেষ—হাবিব-উন-নবী খান সোহেল

আপডেট: জুন ১৫, ২০২২
0

ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেছেন ‘গায়ের জোরে নির্বাচন করার দিন শেষ। ফলে আমরা আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করে কেবল তার অধীনেই নির্বাচনে যাব। এর বাইরে অন্য কিছুই ভাবছে না বিএনপি। ’
দেশজনতা ডটকমকে দেয়া সাক্ষাতকারের ২য় পর্বে নির্বাচনী ভাবনার বিষয় নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেন দেশজনতা ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক ডা.মো জাকারিয়া চৌধুরী।

হাবিব-উন-নবী খান সোহেল তার সঙ্গে সাক্ষাতকারে যা বলেছেন তা হুবুহু দেশজনতা ডটকমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

আসসালামু আলাইকুম
ওয়ালাইকুম সালাম। বসুন প্লিজ

সোহেলঃ যা বলছিলাম, আমরা যেমন আমাদের পরাধীন দেশটার স্বাধীনতা যেমন পেয়েছি তেমনি দুঃখজনক হলেও সত্যি পাশাপাশি আমরা একটা রাজনৈতিক দলও পেয়েছি। যে দলটা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে সবচে বড় অন্তরায়। উন্নয়ন এর জন্য সবচে বড় যে প্রয়োজন সে হলো একটা মৌলিক ইউনিটি। যে যেমন মতের হোক, যে যেমন দলের হোক কিন্তু একটা ক্ষেত্রে সবাইকে একই ভাবনায় আসতে হবে। আর সেটা হল, দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে আমাদেরর চিন্তায় কোন দৈন্যতা থাকবে না। দেশের উন্নয়নে আমরা সবাই সবার ভাই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, এ কনসেপ্টের সবচে বড় অন্তরায় হচ্ছে সেই দলটি। তাদের সাথে কারো মতের অমিল হলেই তারা তাকে শত্রু ভাবতে শুরু করে………

থার্ড পার্টি হিসেবে একটা কথা জানতে চাই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো রাতারাতি উন্নত হয়ে যায়নি। তাদের নেতারা প্রায় সর্ব ক্ষেত্রে-ই দায়িত্ব নিয়ে দেশের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। জাস্ট মিডল ইষ্টের কথা একবার চিন্তা করে দেখুন। তুরস্কের একে পার্টি যারা কুড়ি বছরের অধিক ক্ষমতায় আছে, তারা তুরুস্ক সহ নেইবেরিং কান্ট্রিং গুলোতে অন্তত দশ হাজার স্কুল পরিচালনা করেছে। তাদের শান্তির হাত সব সময় প্যালেস্টাইনের পক্ষেই ছিল। সাদ্দাম জমানায় ফিলিস্তিনি প্রতিটি পরিবার দশ হাজার ডলার পেত মাসিক পারিতোষিক হিসেবে।


ইরান, আরব কুয়েতের মানবিক হাত আমরা বহবার বহুভাবে আমাদের দিকেও প্রসারিত হতে দেখেছি। একটা সু মতবাদকে বাস্তব রুপ দান করতে দীর্ঘ ত্যাগের প্রয়োজন আছে। এমন ভিশনারী চিন্তা প্রেসিডেন্ট জিয়ার ছিল। তারপরের বাংলাদেশে এ জায়গায় এসে আপনার মুল্যায়ন কি ? বাংলাদেশের কোন দলের কি আদৌ সে রকম কোনো ভুমিকা আছে ?


সোহেলঃ
হ্যাঁ আমাদের অকাল প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়ার সে রকম দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। এসবের সমীক্ষা যাচাই করেছেন তিনি নিজে। প্রচন্ড রোদ মাথায় নিয়ে তিনি শত শত কিলোমিটার হেঁটেছেন। এসবের সম্ভ্যাবযতা যাচাই করেছেন। প্ল্যান মেইক করেছেন। তারপর ১৯ দফা কর্মসুচী নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। আমরা সেটাকেই ফলো করি। এটাই আমাদের গাইডলাইন।

এই গাইডলাইন কি এখনো বাস্তব সম্মত ?

সোহেলঃ হ্যাঁ নিশ্চয়ই। তিনি দীর্ঘ সময়ের কথা মাথায় রেখেই ১৯ দফা ঘোষণা করেন। তিনি সারফেস ওয়াটার রিজার্ভ বাড়াতে খাল খনন কর্মসুচী চালু করেন। রিজার্ভ ডিপ ওয়াটারে হাত তখন-ই দিতে চাননি প্রেসিডেন্ট জিয়া। আমাদের দেশে ফারাক্কার প্রভাব ও অকাল বন্যার হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে এর কোন বিকল্প ছিল না। বৃক্ষ রোপন, বনায়ন এবং বাড়ি ঘরের আঙ্গিনায় ফল, সবজি চাষেও যে মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরন হচ্ছেন জিয়াউর রহমান……আজকে সারফেস ওয়াটার নেই বলে ডিপ ওয়াটার লেভেল কোথায় চলে গেছে খেয়াল করেছেন। এটা বলা যায়, আমাদের সামর্থ্য কম ছিল। জিয়া তার ক্ষমতার সবটুকু দেশের কল্যানে ব্যায় করে গেছেন……অনেকেই বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান মারা যাবার পর বিএনপি থাকবে না…… বিএনপি মানে ব্যাসিক্যালি নো পার্টি……… কিন্তু বাস্তবতাটা কি !

দেখা গেছে যে শহীদ জিয়াউর রহমান যে রাজনীতিটা আমাদের মধ্যে দিয়ে গেছেন যেমন ১৯ দফা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কনসেপ্ট…… এই থিউরিগুলো জাতি এতোটাই গ্রহন করেছে যে, সর্বগ্রাসী আক্রমনেও বিএনপিকে টলানো যায়নি। দল ভেঙ্গে ফেলা তো দুরের কথা। দিন দিন বিএনপি বেড়েছে, কমেনি কখনো। এই দলটাকে ধংস করার জন্য এদেশে যত চেষ্টা হয়েছে অন্য কোনো দলের জন্য তা হয়েছে বলে মনে করিনা। বিএনপির মুল কনসেপ্টে বিশ্বাসী কাউকে কি কখনো কেউ ভাগিয়ে নিতে পেরেছে ? না পারেনি। জাতীয়তাবাদের শেকড় বরং প্রবেশ করেছে তরুন প্রজন্মে। তাদের চোখে সত্য বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিএনপি হাওয়ায় ভেসে আসা কোনো দল নয়। বিএনপি বরং কিছু বিশ্বাস, আইন, নৈতিকতা, অখন্ডতা ও জাতীয়তাবাদ ,সমতার মত গুরুতর কিছু বিষয়কে মুল কনসেপ্টে ধারন করা গনমানুষের দল। মানুষেরা রাতারাতিই জিয়ার কনসেপ্টে চলে আসেনি। তারা জিয়ার কর্মময় জীবনে এসবের বাস্তবতা প্রত্যক্ষও করেছিল…………

আরেকটা বিষয়, আপনি মিডলিস্ট, টার্কিদের রাজনৈতিক ভিও বনাম আমাদের বিষয় জানতে চাইলেন তার উত্তরে বলতে পারি, সদ্য স্বাধীন হওয়া একটা দুর্ভিক্ষ কবলিত দেশের হাল ধরা আর অটোমান সাম্রাজ্য কিংবা মিডলিস্টের সাথে সে সময়ের বাংলাদেশের কোনো তুলনাই চলে না। বলা যায় দেশটা সবে হাটতে শিখেছিল……… বরং আমাদের অবস্থাকে বিবেচনায় নিয়েই প্রেসিডেন্ট জিয়া আমাদের জন্য যে গাইডলাইন রেখে গেছেন সেটার সঠিক বাস্তবায়ন যেদিন হবে সেদিন আর আমাদের খুব বড় কোনো দুর্ভাবনা থাকবে না। ফলে এখানে সিমিলারিটি খোজার দরকার নেই। ভৌগলিক অবস্থান সহ সব দিক বিবেচনা করেই তিনি কর্মসুচী ঘোষণা করে গেছেন।

দেশের স্বার্থে বিএনপির ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন কোন সিস্টেম নাই ? আছে কি ? যদি থাকতো আমি বিশ্বাস করি এখন বিএনপির স্বর্নযুগ হতে পারত। শুধু আন্দোলনেই দাবি আদায় হবে আপনি কি এখনো এ বিশ্বাসে অটল আছেন ?


সোহেলঃ
বিষয়টা তেমন নয়। বরং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া কিংবা অপশক্তির সাথে হাত মেলানো………… এসব কাজ গুলো করিনা বলেই হয়ত আজ আমরা ক্ষমতার বাইরে। বিএনপি তাদের ভিশন এস্টাবলিশড করেছে। বিএনপি বরং তাদের কর্ম ও বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে একটা গনরায় প্রত্যাশা করে যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় সেটা হবে। ক্ষমতায় থাকা না থাকা নয়, বিএনপি নতুন একটা জেনারেশন তৈরী করেছে যা ফ্যাক্ট চেকিং এ বিশ্বাস করে। এজন্য কোনো কিছুই সরকার এখন আর গোপন রাখতে পারছে না।

বিএনপি আঁতাত না করলে ??

সোহেলঃ
আমাদের সে ক্ষমতার দরকার নেই। আমরা যে ক্ষমতায় নেই সেজন্য আমাদের আফসোস নেই……… বিএনপি আতাত আপোষের দল নয়। যে আতাত দেশও জনগনের কল্যানে আসে না, গনতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়, বাক স্বাধীনতা থাকে না সে ক্ষমতার মোহ আমাদের নেই। এভাবে বিএনপি ক্ষমতায় যেতেও চায় না।

পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা বলুন। আমাদের প্রস্তুতি কতদুর ?

সোহেলঃ
আমরা আগেও বলেছি এখনো বলছি, এই সরকারের অধীনে বিএনপি নিবাচনে যাবে না। আমরা একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বির্বাচনে অংশগ্রহন করব না।

সরকার আগের তিনবারের এতা আবারো কি একতরফা নির্বাচন করতে পারবে?

সোহেলঃ
আমরাও বসে নেই। আন্দোলনের রুপরেখা সময়ের হাতে ছেড়ে দিন। গায়ের জোড়ে নির্বাচন করার দিন শেষ। ফলে আমরা আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করে কেবল তার অধীনেই নির্বাচনে যাব। এর বাইরে অন্য কিছুই ভাবছে না বিএনপি। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে- কোন পার্টি যখন সরকারের সব গুলো হাত দিয়ে একটা পার্টিকে চেপে তখন মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়া পরিকল্পনা মাফিক হয়না কিন্তু চলমান থাকে। ফলে এতোকিছুর পরও কিন্তু বিএনপিকে যে সামান্যতম টলানো যায়নি সেটাও কম কিছু নয়। অনির্বাচিত এই সরকার চাইলেই আগের মত যেমন তেমন ইলেকশন করে ফেলতে পারবে না। নিশ্চিন্ত থাকুন।