ভারতীয় কারাগারে কাশ্মীরের রাজনীতিকদের নির্যাতন করা হয়েছে: জাতিসংঘ

আপডেট: জুন ৩, ২০২১
0

ভারতশাসিত কাশ্মীরে নিষ্পেষণমূলক ব্যবস্থা এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ক্রমিক ব্যাপক ব্যবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। বিরোধপূর্ণ ওই অঞ্চলে অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে সাড়া দেয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে মার্চের শেষের দিকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন জাতিসংঘের ৫ জন বিশেষজ্ঞ। এই চিঠিটি সোমবার প্রকাশ পেয়েছে। এতে প্রধান তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। তা হলো- কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলীয় সোপিয়ান জেলার নাসির আহমদ ওয়ানিকে জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ, কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চলীয় সোপোরের ইরফান আহমদ দারকে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং পুলওয়ামার ভারতপন্থি নেতা ওয়াহিদুর রেহমানকে (পারা) খেয়ালখুশি মতো আটক করা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। তবে ওই ৫ বিশেষজ্ঞের নাম প্রকাশ করা হয়নি রিপোর্টে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, নভেম্বরে সন্ত্রাসের অভিযোগে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ গ্রেপ্তার করে পারা’কে। দিনে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার সঙ্গে অশোভন আচরণ ও নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, তাকে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রায় অন্ধকার আন্ডারগ্রাউন্ডে রাখা হয়েছিল। এ সময়ে তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানো হয়েছে। লাথি, থাপড় দেয়া হয়েছে। লাঠি দিয়ে প্রহার করা হয়েছে। নগ্ন করা হয়েছে। পা উপরের দিকে দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পারা’কে সরকারের একজন চিকিৎসক তিনবার পরীক্ষা করেছেন। তিনবার পরীক্ষা করেছেন একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ। তাকে নিদ্রাহীনতা এবং চিন্তায় উদ্বেগের বিরুদ্ধে ওষুধ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত কাশ্মীর। দুই দেশই এর অংশবিশেষ শাসন করে। তবে তারা দু’দেশই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে। পারমাণবিক শক্তিধর এ দুটি দেশই কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে তিনটি যুদ্ধ করেছে। ১৯৯০ এর দশকের শুরুতে ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় অংশে সশস্ত্র বিদ্রোহ দেখা দেয়। এ নিয়ে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই বেসামরিক। বিদ্রোহীরা নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র অথবা প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার দাবি জানায়।

এই অঞ্চলে ভারতপন্থি রাজনীতিকদের একটি ক্ষুদ্র গ্রুপ আছে। তারা জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। জাতিসংঘের ওই বিশেষজ্ঞদের চিঠিতে বলা হয়েছে, পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) একজন তরুণ নেতা পারা। গত বছর তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল মিটিং করেন। ওই বৈঠকে তিনি ভারতশাসিত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছিলেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের কাছে তিনি কাশ্মীরে মুসলিমদের প্রতি যে আচরণ করা হচ্ছে তা এবং চীনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে ওই সময়কার উত্তেজনার কথা তুলে ধরেছিলেন। এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই মিটিংয়ের পর পারা’কে এনআইএর কর্মকর্তারা হুমকি দিয়েছিলেন। বলা হয়েছিল, তিনি এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছেন। এ সময় ওই কর্মকর্তারা তাকে একটি আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়, যদি তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ না করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর কয়েকদিন পরেই পুলওয়ামা থেকে স্থানীয় নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন পারা। তারপরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সন্ত্রাসের মামলায় তাকে জামিন দেয়া হয়েছিল। পরে আবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কাশ্মীরে নির্বাচিত সর্বশেষ মুখ্যমন্ত্রী পিডিপির প্রধান মেহবুবা মুফতি। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র এবং শান্তিতে বিশ্বাস করতেন পারা। তার মতো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এমন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মনে করেন তিনি। এ থেকে কি ভাবধারা বোঝা যায়? প্রশ্ন রাখেন মেহবুবা মুফতি। পারা’র পরিবারের একজন সদস্য বলেছেন, তিনি কাশ্মীরি মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন বলে তাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। তিনি নির্দোষ এবং জেলে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। বিজেপি নেতারা যখন কাশ্মীর যান, তারা তাকে তাদের সঙ্গে মিলে যেতে বলেন। তিনি সেটা করেছিলেনও। যোগ দিয়েছিলেন যুবশ্রেণির সঙ্গে। এটাই তার অপরাধ। ২০১৮ সালে কাশ্মীর সফরের সময় তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তরুণদের একটি বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য পারা’র প্রশংসা করেছিলেন।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন সোপেরের ২৩ বছর বয়সী একজন দোকানি ইরফান আহমেদ দার-এর কথা। তাকে ১৫ই সেপ্টেম্বর গ্রোপ্তার করে সাদা পোশাকের লোকজন। কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাকে সোপোর পুলিশ স্টেশনে আটকে রাখা হয়। একদিন পরে সকালে তার পরিবারকে বলা হয় তিনি মারা গেছেন। পুলিশ দাবি করেছে, তিনি যখন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তখন নিহত হয়েছেন। কিন্তু তার শরীরে হাড়ের অনেক স্থানে ভাঙা , তার সামনের দাঁত ভাঙা এবং মাথায় থেঁতলে যাওয়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে। দাফন করার ১০ মিনিট আগে তার মৃতদেহে পরিবারের সদস্যদের দেখতে দেয়া হয়েছিল।