খালেদা জিয়ার দ্রুত ‘সিটি স্ক্যান’ করার সিদ্ধান্ত চিকিৎসক প্রতিনিধি দলের

আপডেট: এপ্রিল ১৫, ২০২১
0

করোনায় আক্রান্ত খালেদা জিয়ার দ্রুত ‘সিটি স্ক্যান’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিকিতসকরা।
বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে আসার পর তার ব্যক্তিগত চিকিতসক টিমের প্রধান অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের কা্ছে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ ম্যাডামের আজকে সেভেন ডে। কোবিডের পরিভাষায় ম্যাডাম এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে এন্ট্রি হচ্ছে। আমি আগেও বলেছি যে, কোবিডের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। কোবিডের যত সাবধানতা, যত জটিলতা সেগুলো সাধারণত: সেকেন্ড উইকে হয়। সেজন্য আমরা আরেকটু সাবধানতা অবলম্বন করতে চাই।”

‘‘ উনার সব পরীক্ষা করা হয়েছে। শুধু সিটি স্ক্যানটা করানো হচ্ছিল না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, খুব দ্রুত স্বল্প সময়ের মধ্যেই সিটি স্ক্যানটা করিয়ে ফেলবো। এছাড়া উনার আর সব যেমন বায়ো কেমিক্যাল প্যারামিটারস, ফিজিক্যাল স্ট্যাটাস, অক্সিজেন স্যাচুরেশন এবং এপেটাইট, পালস, ব্লাড সার্কুলেশন অন্যান্য সব দিকে উনি- আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালো আছে।”

সিটি স্ক্যান কোন হাসপাতালে করানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ আমরা কোথায় সিটি স্ক্যান করাব তার ব্যবস্থাও আমরা করে রেখেছি। যখন করব তখন আপনারা জানতে পারবেন।”

‘হাসপাতালে ভর্তি সিটি স্ক্যানের পরীক্ষা দেখে’

এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ কোবিডে কখনোই আপনি আগে থেকে বলতে পারবেন না কন্ডিশন কেমন হবে। এটা খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল একটা রোগ। তবুও আমরা খুব দ্রুত দ্রুত সিটি স্ক্যান করিয়ে ফেলবো খুব দ্রুত।”

‘‘ আমরা যদি সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখে মনে করি যে, বাসায় রেখে চিকিতসা করাটা উনার জন্য ভালো হবে তাহলে আমরা বাসায় রাখব। আর সিটি স্ক্যান দেখে যদি মনে করি না আমরা ২/৩ দিনে জন্য বা কয়েকদিনের জন্য উনাকে হাসপাতালে অবজারভেশনে রাখা দরকার-আমরা সেটাও করব। আমাদের ডিসিশনটা নির্ভর করবে সিটি স্ক্যানের রিপোর্টের উপরে।”

‘নতুন উপসর্গ একটুখানি জ্বর’

খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ উনার নতুন যে একটু খানি উপসর্গ দেখা দিয়েছে সেটা হলো কালকে(বুধবার) রাতে উনার একটু জ্বর উঠেছিলো, ১০০‘র মতো ছিলো। আজকে সকালেও উনার একবারের মতো একটু জ্বর উঠেছে, ১০০ টাচ করেছে। কিছুক্ষন জ্বর ছিলো।”

‘‘ আমরা সবাই অসকালটেন্ট পড়ে আসছি, এই মাত্র উনার চেস্ট পরীক্ষা করেছি। যেহেতু চেস্ট ক্লিয়ার আছে। আমরা মনে করছি উনি ভালো স্টেবল আছেন।”

ডায়াবেটিস ও আর্খাটাইটিসের অবস্থা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ ডায়াবেটিসের ব্লাড সুগার এখন আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো কনট্রোলে আছে। আমরা প্রতিদিন ব্লাড সুপার তিনবার মনিটর করছি। সেই অনুযায়ী আমরা টেবলেট ও ইনস্যুলিন দিয়ে ব্লাড সুগার কনট্রোল করছি। আর্থাটাইরিসে উনার ফিজিও থ্যারাপি চলছে, আনুসাঙ্গিক যে চিকিতসাগুলো দরকার সেগুলোও সবই চলছে।”

‘‘ উনার কোবিড সংক্রান্ত মানসিক অবস্থা ভালো, উনি মানসিকভাবে বেশ স্টেবল আছেন, যথেষ্ট ভালো আছেন। ”

লন্ডনে অবস্থারত খালেদা জিয়ার পুত্র বধু ডা.জোবাইদা রহমানমসহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বিশেষজ্ঞ চিতিসকদের নিয়ে যোগাযোগ করে খালেদা জিয়ার চিকিতসা করা হচ্ছে বলে জানান এফএম সিদ্দিকী।

রোববার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরপরই সেদিন বিকালে বিশেষজ্ঞদের এই টিম ফিরোজায় এসে খালেদা জিয়াকে দেখেন। চারদিন পর বৃহস্পতিবার তারা তার বিভিন্ন রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেন।

সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়ে চিকিতসক টিমের সদস্য বক্ষব্যাথি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুস শাকুর খান, ইউরে্ালিজিস্ট অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন এবং ডা. মোহ. আল মামুন পাশে ছিলেন। আরো ছিলেন চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান।বিকাল ৪টায় চিকিতসক টিমের সদস্যরা ‘ফিরোজায়’ প্রবেশ করেন। বেরিয়ে আসেন বিকাল ৫টার পর।

গত ১১ খালেদা জিয়ার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তার ব্যক্তিগত চিকিতসক টিম বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিতসা শুরু করে।

‘ফিরোজা’র বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও আরো ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের চিকিতসাও এখানে চলছে।

৭৫ বছল বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ডিত। দন্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়; শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিতসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিতসা নিচ্ছেন। তার সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ সীমিত।