বাজেটে সম্পূর্ণভাবে জনগণের সাথে এক ধরনের ভাওতাবাজি হয়েছে — মীর্জা ফখরুল

আপডেট: জুন ৪, ২০২১
0

মহামারিকালে মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনার গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে বিএনপি মনে করে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সকালে একথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিপাদ্য শব্দমালার মাঝেই এবারের বাজেটের ভাওতাবাজি পরিস্কার। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন গত ১৮ মাস যাবৎ অচল। এর মধ্যে অপরিকল্পিত লকডাউনের নামে শাটডাঊনে নিম্ন ও নিম-মধ্যবিত্ত মানুষদের জীবন চুড়ান্ত রকমে থমকে গেছে।

তাই সুস্পষ্টভাবে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা মাথায় না রেখে কেবলমাত্র অর্থনীতির নানা তত্ত্ব ও বিশাল সংখ্যার আর্থিক উপস্থাপনার মাধ্যমে কার্যত জনগণের সাথে এক ধরনের ভাওতাবাজি করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই বাজেটেও স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অথচ এই মুহূর্তে মানুষের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

টিকা প্রদান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনার টিকা প্রদানের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। বড় আকারের বাজেট আর বড় অংকের প্রবৃদ্ধির আলোচনা বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি অর্থমন্ত্রী।

মহামারিকালে মানুষের জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ইহা একটি অবাস্তবায়নযোগ্য কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট ছাড়া আর কিছুই নয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণকে কোভিডের মহাসংকট থেকে রক্ষার দিকনির্দেশনা নেই। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। জনগণের সমর্থনবিহীন সরকারের রাষ্ট্রের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই এ বাজেটে জনস্বার্থের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। বিদেশি ঋণ জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে পরিশোধ করা হবে। সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি। ঘোষিত বাজেটে অপচয়, অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ হয়নি। বরং এই সরকারের সময় দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও আইনের শাসন এবং জবাবদিহির যে ঘাটতি রয়েছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটে। এবারের বাজেট কেবল বার্ষিক হিসাব-কিতাবের বাজেট হওয়ার কথা নয়। বাজেট হওয়া উচিত ছিল ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিমালার পথনির্দেশনা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট। ভবিষ্যতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের মডেল কী হতে পারে, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বাজেটের ফোকাস কী হবে, তার পথনির্দেশনার বাজেট। কিন্তু সরকার সেদিকে যায়নি।

মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে দেশে আয়বৈষম্য বেড়েছে। ‘স্বজন তোষণের’ ভিত্তিতে এ সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। যার ফলে মাত্র ১ শতাংশ লোকের কাছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এমনকি এই করোনাকালেও অপ্রদর্শিত আয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন হাজার হাজার লোক। ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সম প্রতিযোগিতার স্বাভাবিক যে বিকাশ, সে সুযোগ তারা বন্ধ করে দিয়েছে।

এবারের এই বাজেট হচ্ছে জিডিপির মাত্র ১৭.৪৬ শতাংশ। ২০২১ অর্থবছরের জন্য মূল বাজেট ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা ছিল জিডিপির ১৭.৯০ শতাংশ। এ হিসাবে বাজেটের প্রকৃত আকার বৃদ্ধির পরিবর্তে সংকোচিত হয়েছে।
৫. কোভিডের অভিঘাত এখনো অনুভূত হচ্ছে। কত দিন তা থাকবে, নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট আসবে, আমরা তা জানিনা। তাই পরিকল্পনা শুধু এক বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাই বাজেটে মধ্যমেয়াদি প্রক্ষেপণ থাকা উচিত ছিল।
৬. অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটের শিরোনাম করেছেন “জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ”। বাজেট নাকি দেয়া হয়েছে ‘মানুষের’ জন্য। শুনতে ভালো শোনায়। কিন্তু বাজেটে দিন আনে দিন খায় এমন গোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় নগদ অর্থ (পধংয ঃৎধহংভবৎ) এর কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। এ খাতে পুরাতন ত্রুটিপূর্ণ ব্যাংকনির্ভর ঋণের কথাই বলা হয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণের যে সমস্যা মাঠ পর্যায়ে পরিলক্ষিত হয়েছে সেটা নিরসনে অদ্যাবধি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ নয় বরঞ্চ আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশগুলোতে যা করা হয়েছে।

সরকার এই বাজেটে সম্প্রতি বিএনপি প্রদত্ত পরামর্শ আমলেই নেয়নি। কারোনাকালীন এই বাজেটে স্বাস্থ্য এবং হতদরিদ্র ও শ্রমিকদের প্রত্যাশিত প্রণোদনা উপেক্ষিত হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট দেখে মনে হবে, সরকার মনে করে না, আগামী দিনেও জনগণের ভোটের প্রয়োজনীয়তা আছে তাদের। বাজেটে প্রণোদনার বরাদ্দ ৫ থেকে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিল বিএনপি। অনেক দেশে বাজেটে প্রণোদনার বরাদ্দ ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু সরকারের বরাদ্দ ২ শতাংশের নিচে। এটা লোক দেখানোর প্রণোদনা। এটা সচ্ছলতা এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না।