খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেয়া নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত: জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন

আপডেট: মে ১০, ২০২১
0

নানা রোগে আক্রান্ত এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)। সোমবার (১০ মে-২১) এক বিবৃতিতে জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন ৭৬ বছরের বয়স্কা নারী।

সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি। এছাড়াও আরো বেশ কিছু জটিল রোগাক্রান্ত খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হলে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৩ মে-২০২১ ইং তারিখে তার শ্বাসকষ্ট হলে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

তার অবস্থা বেশ সঙ্কটাপন্ন। ওইদিনই খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার পরিবারের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাথে দেখা করে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদন জানায়। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের সাথে লক্ষ্য করলাম যে, গত রোববার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘বর্তমান বিধি মোতাবেক খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তাকে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং আমরা তার পরিবারের আবেদনটি মঞ্জুর করতে পারছি না’। এই ঘটনায় থেকেই প্রমাণিত হয় যে, বর্তমান সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তারা তাকে বিদেশে উন্নত ও সুচিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না। অথচ মানবতার কাছে আইন কোনো বিষয় নয়। আমরা সরকারের এহেন অগণতান্ত্রিক ও বেআইনী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

তিনি বিবৃতিতে বলেন, খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির চেয়ারপারসন নন তিনি বাংলাদেশের তিন তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকার মহামারী করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিষয়টি মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে পারতো। এ কথা মনে রাখতে হবে যে, তার স্বামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এবং সেক্টর কমান্ডার ও সেনা বাহিনীর সাবেক প্রধান। বাংলাদেশের নারী শিক্ষা থেকে শুরু করে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তার হাত ধরেই। আজ তিনি গুরুত্বর অসুস্থ হলেও তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেয়াটা সত্যিই বেদনাদায়ক, অমানবিক ও নজিরবিহীন ঘটনা।

জেডআরএফের বিবৃতিতে বলা হয়- বিশেষ বিবেচনায় অতীতে হিংস্র খুনি থেকে কুখ্যাত মাস্তানদের পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার নজির রয়েছে। অথচ দেশে দেশে রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক এই ক্ষমা করার বিধান রয়েছে শুধু চরম মানবিক বিষয় বিবেচনার জন্য। যেমন স্কটল্যান্ডের লকারবিতে বিমান উড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত লিবিয়ার অপরাধী আবদেল মেগরাহিকে ২০০৯ সালে ক্ষমা করা হয়েছিল ক্যানসারের কারণে, তাঁর অবধারিত মৃত্যুর আগের শেষ দিনগুলো স্বজনের সঙ্গে কাটাতে দেওয়ার মানবিক দিক বিবেচনা করে।

শুধু তাই নয়, দণ্ড স্থগিত করে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো নজিরবিহীন ঘটনা নয়। থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, পাকিস্তান সহ অনেক দেশে চিকিৎসার জন্য অনেক সাবেক রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের বেলায় এমনটি ঘটেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে ৭ বছরের সাজা হলেও লাহোর হাইকোর্ট তাকে জামিন ও সাজা স্থগিত করে বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে দুটো মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো কেঙ্কোরির মতো বিষয় নয়।

এমতাবস্থায় আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো- খালেদা জিয়া এমন কোনো মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নন। তার প্রতি মানবিক হোন। তিনি বয়স্কা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি তার ছোটো ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে হারিয়েছেন। তার বড় ছেলে দেশনায়ক তারেক রহমানও নির্বাসনে। তাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি রাখা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া কতটা অসহায় সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা বিশ্বাস করি সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিবে। তা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।

উপর্যুক্ত বিষয়টি আপনার স্বনামধন্য মিডিয়ায় সংবাদ আকারে প্রকাশের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আমাদের বিশ্বাস গণমাধ্যমের ভুমিকা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা জাতিকে সামনের দিকে আরো এগিয়ে নিবে।