বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে ঃ গাজীপুরে পোশাক কর্মীদের লাগাতার বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি, ১১ ঘন্টা সড়ক অবরোধ

আপডেট: জুলাই ১৭, ২০২১
0

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে লাগাতার কয়েকদিনের মতো শনিবারেও দিনভর কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে এক পোশাক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিক্ষুব্ধ পোশাককর্মীরা এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১১ ঘন্টা ঢাকা-গাজীপুর সড়ক অবরোধ রাখে। এতে সড়কের উভয়দিকে দিনভর আটকে পড়ে থাকে শতাধিক যানবাহন। গত কয়েকদিন ধরে পোশাক কর্মীরা পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা শহরে প্রবেশের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি অবরোধ করে রাখায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে রোগী, ব্যবসায়ী ও যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সমীর চন্দ্র সূত্রধর জানান, গাজীপুর মহানগরীর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সামনে লক্ষীপুরা এলাকাস্থিত স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শনিবার সকালে কারখানার গেইটে এসে জড়ো হয়ে কর্ম বিরতি শুরু করে। এসময় তারা ৩ বছরের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধসহ নানা দাবীতে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা সকাল সোয়া ৮টার দিকে কারখানার সামনে ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা অবরোধ তুলে নেয় নি। ফলে অবরোধের কারণে সড়কের উভয় দিকে অ্যাম্বুলেন্সসহ শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে।

বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক ওই এলাকা অতিক্রমকালে আন্দোলনরতরা তার গাড়ি থামিয়ে বিষয়টি জানায়। এসময় মন্ত্রী তাদের আশ্বাস দেন। প্রায় ১১ ঘন্টা পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আন্দোলনরতরা সড়কের অবরোধ তুলে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করলে ওই সড়কে পুনঃরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ওই কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে আসছে। এ ব্যাপারে গার্মেন্টস মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সুরাহা করা সম্ভব হচ্ছে না।

আন্দোলনরতরা জানায়, গাজীপুর মহানগরীর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সামনে লক্ষীপুরা এলাকাস্থিত স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলতি বছরের মার্চ, মে ও জুন মাসসহ গত সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণ বেতন ভাতা সহ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর, ২০২০ সালের মার্চ ও আগস্ট মাসের শতকরা ৫০ ভাগ, অক্টোবর মাসের ৩৫ ভাগ, নবেম্বর মাসের ১৫ ভাগ বেতন পাওনা রয়েছে। এ ছাড়াও কারখানার কর্মচারীরা ইনক্রিমেন্টসহ তাদের চার বছরের বাৎসরিক ছুটির ও ২ বছরের ঈদবোনাসের টাকা পাওনা রয়েছে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে এসব পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে আসছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের একাধিকবার তারিখ ঘোষণা করলেও পরিশোধ করেনি। এতে ক্ষুব্ধ কারখানার কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে গত ৬ জুলাই থেকে লাগাতার কর্ম বিরতি ও বিক্ষোভ করে আসছে। এ ছাড়াও গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করছে আন্দোলনরতরা।

সর্বশেষ ঘোষণানুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনা বকেয়া বেতন ভাতার মধ্যে এক মাসের বেতন ভাতা গত মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) এবং অপর দুই মাসের পাওনাদি বৃহষ্পতিবার (১৫ জুলাই) পরিশোধের কথা থাকলেও পরিশোধ করেনি। কারখানার মালিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করছেন না। উপায়ন্তর না পেয়ে কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে।