তামাক কর বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের সম্পৃক্ততা জরুরী -মতবিনিময় সভায় বক্তারা

আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২২
0

তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকারী-বেসরকারী সংস্থার পাশাপাশি মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতানুসারে, প্রকৃত মূল্য ও কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্য ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার উর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া তামাক নিয়ন্ত্রণে সর্বোৎকৃষ্ট উপায় বলে প্রমাণিত। বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যের উপর বিদ্যমান কর কাঠামো জটিল ও বহুস্তরভিত্তিক এবং ভিত্তি মূল্য খুবই কম হওয়ায় কর বৃদ্ধি সত্ত্বেও ক্রয়মূল্য ভোক্তার নাগালেই থেকে যাওয়ায় কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে, তামাকের প্রকৃত মূল্য ও কর বৃদ্ধি এবং একটি সুনির্দিষ্ট কর কাঠামো প্রণয়ন করা অতিব জরুরি।

উক্ত বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করে আজ ১১ জানুয়ারি ২০২২ সকাল ১১:০০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে গণমাধ্যমের সাথে “তামাক কর বৃদ্ধি, বর্তমান অবস্থা ও করণীয়” শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভায় বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট সম্মিলিতভাবে এ সভা আয়োজন করে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দ্য ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ডিআরইউ এর সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব, ডাস এর উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুল, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কান্ট্রি ম্যানেজার-বাংলাদেশ নাসির উদ্দীন শেখ, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ। সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য এবং সভাটি সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র কর্মসূচি প্রধান (টিসি, এনসিডি) সৈয়দা অনন্যা রহমান।

সভায় গাউস পিয়ারী বলেন, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার। এই প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রনে কর বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এছাড়া তিনি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ও ক্ষতিকর পন্যের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য মিডিয়াকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান।

নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, তামাক ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে সকলকে তামাক নিয়ন্ত্রনে এগিয়ে আসা জরুরী। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সকল প্রকার তামাকজাত পন্যের মূল্য তুলনামূলক কম এবং সহজলভ্য। পরিশেষে তিনি তামাকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মিডিয়াকে আরো বেশী সম্পৃক্ত হবার আহবান জানান।

সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রনে কর বৃদ্ধির পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট কর আরোপ জারুরি। এতে একদিকে যেমন তামাকজাত পন্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে অপরপক্ষে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বর্তমানে যত্রতত্র খুচরা সিগারেট বিক্রি হওয়ার কারনে প্যাকেটে উল্লিখিত মূল্যের থেকে অধিক মূল্যে তামাকজাত পন্য বিক্রয় হয়। কিন্তু এই অতিরিক্ত মূল্যের উপর সরকারের কোনো রাজস্ব আয় হয়না বরং তামাক কোম্পানির লভ্যাংশ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি তিনি প্রতিবছর তামাক কোম্পানি যে বিশাল অংকের কর ফাঁকি দেয় সেটি নিয়ন্ত্রণে কর আদায় পদ্ধতিটি আধুনিক ও যুগোপযোগী করার দিকে আলোকপাত করেন।
নুরুল ইসলাম হাসিব বলেন, তামাক কর কাঠামোর জটিলতাগুলো চিহ্নিত করে পৃথিবী অনেক দেশ তামাক নিয়ন্ত্রনে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারি। তামাক কোম্পানীগুলো নানা কৌশলে তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। এবিষয়ে আরো অধিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমের সাথে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করারও আহবান জানান।
হেলাল আহমেদ বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবৈধ হস্তক্ষেপে একাধিকবার দাবি জানানোর পরও তামাকের মতো একটি ক্ষতিকর পন্যের উপর আশানুরূপ কর বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া, পাঠ্যপুস্তকে তামাককে অর্থকরী ফসল হিসাবে উপস্থাপন করার ফলে তামাকের পক্ষে ইতিবাচক তথ্য প্রচার হচ্ছে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা তথা সরকারের সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার সাথে সাংঘর্ষিক।

আমিনুল ইসলাম বকুল বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সরকারের পাশাপাশি সাধারন জনগনকেও বিভিন্ন বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদান করছে। ফলে তামাকের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতির সঠিক তথ্য সাধারন জনগনের কাছে পৌছায়না। এক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কোম্পানির বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য প্রচারে মিডিয়াকে আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানান।

নাসির উদ্দীন শেখ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জনগনের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে অন্যান্য পন্যের মূল্য বৃদ্ধি হলেও তামাকজাত পন্যের মূল্য সেই তুলনায় বাড়েনি। তামাকের উপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের পাশাপাশি বড় অংকের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে তামাক ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তিনি তামাকের কর আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি না পাওয়ার পিছনে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপকে দায়ী করে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারের আহবান জানান।
এছাড়াও অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, টিসিআরসি, নাটাব, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, ডাস, এইড ফাউন্ডেশন, মৃত্তিকা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত ছিলেন।