র‌্যাবের অভিযানে সিরিয়াল কিলার “ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল” গানের মডেল বাউল সেলিম গ্রেফতার

আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২২
0

“ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল” গানের বাউল মডেল মোঃ হেলাল হোসেন @সেলিম ফকির @ বাউল সেলিম @ খুনি হেলাল’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

র‌্যাবের অভিযানে বাউল ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ানো সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামী ও “ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল” গানের বাউল মডেল মোঃ হেলাল হোসেন @সেলিম ফকির @ বাউল সেলিম @ খুনি হেলাল’কে গ্রেফতার করেছে

আনুমানিক ৬ মাস পূর্বে জনৈক ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউল মডেল সম্পর্কে র‌্যাবের নিকট তথ্য প্রদান করে যে, উক্ত মডেল সম্ভবত বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামী। এরই প্রেক্ষিতে বর্ণিত বিষয়ে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে ঘটনারসত্যতা সম্পর্কে র‌্যাব নিশ্চিত হয়। ফলশ্রুতিতে,র‌্যাব উক্ত আসামীকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর অভিযানে গত ১২ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন এলাকা হতে মোঃ হেলাল হোসেন @ সেলিম ফকির @ বাউল সেলিম @ খুনি হেলাল(৪৫), পিতাঃ মৃত নুরুল ইসলাম, বগুড়া’কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত তার অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।

গ্রেফতারকৃত জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে,সে ২০০১ সালের বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামী। গ্রেফতারকৃত আরও জানায় যে, সে আরও ০২টি হত্যা মামলার আসামী। ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলারআসামী বলে সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।
১৯৯৭ সালে বগুড়াতে চাঞ্চল্যকর বিষ্ণু হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।গ্রেফতারকৃত হেলাল ২১ বছর বয়সে উক্ত হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী ছিল। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয় বলে জানা যায়। এভাবেইসে বিভিন্ন অপারাধমূলক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হতে শুরু করে এবং এলাকায় দূধর্ষ হেলাল নামে পরিচিতি পায়।

গ্রেফতারকৃত আরও জানায় যে, ২০০০ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ধারালো দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাতে মারাত্মক জখম হয় এবং বাম হাত পঙ্গু হয়। এই ঘটনার পর হতে সে বিভিন্ন নামে যেমনঃ দূর্ধর্ষ হেলাল, হাত লুলা হেলাল হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে।

গত ২০০১ সালে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎ (২০), সদর, বগুড়া’কে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়

হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভিকটিমের পরিবার বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা হত্যা মামলা দায়ের করেন;যার নাম্বার মামলা নং-০২(১০)২০০১; ধারা-৩০২/৩৪। উক্ত মামলায় বিজ্ঞ আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন।

২০০৬ সালে বগুড়াতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রবিউল নামক এক ব্যক্তিকেকতিপয় দুর্বৃত্ত কর্তৃকদেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গ্রেফতারকৃত হেলাল উক্ত হত্যাকান্ডের একজন চার্জশীটভুক্ত আসামী।

গ্রেফতারকৃত হেলাল ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়েরকৃত একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়। একই সাথে ২০০১ সালের বিদ্যুৎ হত্যা মামলার বিচারকার্যও চলমান থাকে।২০১৫ সালেই উক্ত চুরির মামলায় সে জামিনে মুক্ত হয় এবং একই দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় বিজ্ঞ আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। এছাড়াও,২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমনআইনে মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত হেলাল ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করে এবং এলাকায় মুদি দোকানদারী শুরু করে। পরবর্তীতে হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে পড়লে এলাকায় তার কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে ২০১০ সালে দায়েরকৃত চুরির মামলায় ২০১৫ সালে জামিন প্রাপ্তির দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলে সে সু-কৌশলে এলাকা ত্যাগ করে এবং ফেরারি জীবন যাপন শুরু করে। প্রথমে সে বগুড়া থেকে ট্রেনযোগে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসে। পরবর্তীতে কমলাপুর হতে ট্রেনযোগে সে চট্টগ্রামে চলে যায় এবং সেখানকার আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করে।

সেখান থেকে ট্রেনযোগে সিলেটের শাহজালাল মাজারে চলে যায়। সিলেটে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও কিছুদিন অবস্থান করে। জানা যায় যে, বিভিন্ন সময়ে সে বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করত।

সে কিশোরগঞ্জ ভৈরব রেলস্টেশনেনাম-ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করে।আনুমানিক ৫ বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত হেলাল নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশ@ গামছা পলাশ এর একটি গানের শুটিং চলাকালে রেললাইন এর পাশে বাউল গান গাচ্ছিল। তখন শুটিং এর একজন ব্যক্তি তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে বহুল জনপ্রিয় “ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল” শিরোনামের গানের বাউল মডেল হিসেবে তাকে দেখা যায়।

সে প্রায় ৭ বছর যাবৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারী জীবন যাপন করছে এবং গত প্রায় ৪ বছর যাবৎ কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে একজন মহিলার সাথে সংসার করে আসছে। বিভিন্ন রেলস্টেশনে সে বাউল গান গেয়ে মানুষের নিকট হতে সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত।

গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।