মানুষ হাহাকার করছে আর প্রধানমন্ত্রী ‌‌`আলিফ লায়লার ‘ রাজত্ব চালাচ্ছেন—রিজভী

আপডেট: জুলাই ৭, ২০২২
0

দেশ ও দেশের জনগণ মাফিয়া শাসনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘সারাদেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে আবারও প্রমাণিত হয় বাংলাদেশের কোন শাসন নেই। এখানে মাফিয়া শাসন চলছে। মাফিয়া শাসনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে দেশের জনগণ। কারণ যারা সরকার বলে নিজেদের দাবি করেন তারা গণবিরোধী অনির্বাচিত নিশিরাতে সরকার। এখানে কোনো আইন-কানুন চলে না।’

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অর্পন বাংলাদেশ নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে আর্থিক অনুদান অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, পদ্মা সেতুতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে যে সেখানে কোনো সেলফি তুলতে পারবে না। সেখানে নেমে কোনো কাজ করা যাবে না। এর জন্য জরিমানা করা হচ্ছে। এদিকে আবার দেখলাম প্রধানমন্ত্রী তার পুত্র ও কন্যাসহ সেলফি তুলছে। ছবি তুলছে। আনন্দ করছে। একটি দেশ দুইটি আইন। যারা জোর করে ক্ষমতায় আছেন, তাদের আসলে আইনের প্রয়োজন হয় না। যদি গণতান্ত্রিক-নির্বাচিত সরকার হত, তাহলে আইনের শাসন নিশ্চিত হত। আইনের সরকার থাকলেই আইনের শাসন থাকে। এখানে আইনের শাসন নিশ্চিত হবে না। কারণ সরকার হচ্ছে মাফিয়া ধরনের সরকার। তারা যখন যা চায় তখন তাই করে।’

ঈদের সময় সারাদেশে তান্ডব চলছে উল্লেখ করে বিএনপি এই মুখপাত্র বলেন, এমনিতেই বাসের ভাড়া, পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন এলাকায় যেতে ভাড়া যা তার দ্বিগুণ-তিনগুণ লাগে। মাফিয়া সিন্ডিকেট করে আওয়ামী লীগের লোকেরা দ্বিগুণ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। ঘরমুখো সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত। সরকারের দ্বারা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত। মাফিয়া সিন্ডিকেটের দ্বারা এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত দেশ মুখফুটে কেউ কথা বলতেই সাহস পাচ্ছে না। ঘরমুখো মানুষের কাছ থেকে নিষ্ঠুরভাবে বেশি ভাড়া আদায় করছে। শুধু তাই না- কোরবানি হাটগুলোতে আপনারা দেখেছেন সিন্ডিকেট করেছে আওয়ামী লীগের লোকেরা। সকল জায়গায় – জনদুর্ভোগের সাথে জড়িত আওয়ামী লীগের লোকেরা।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য তিনি বলেন, এখন এত লোক শুটিং হয় কেন? কয়দিন আগেই না বললেন ঘরে ঘরে আলো পৌঁছে দিয়েছেন। আপনার (প্রধানন্ত্রীর) প্রতিটি কথার সাথে বৈপরীত্য, প্রতিটি বক্তব্য দ্বিচারিতামূলক। কয়েকদিন আগেই বলেছেন, আমাকে বৈধ বলুক আর অবৈধ বলুক, আমার ক্ষমতা চায়, আমার ক্ষমতা দিতে হবে। এই কথা তো ফেরাউনরা বলে, হিটলাররা বলে, নম্রুদরা বলে, মুসোলিনিরা বলে। আপনার কিসের ক্ষমতা চায়? ক্ষমতা উৎস তো জনগণ। কোথায় জনগণ? জনগণকে আপনি সৎ ছেলের মত পরিত্যাগ করেছেন। তাকে ত্যাজ্য করেছেন। জনগণের সাথে আপনি সৎ মায়ের ভূমিকা পালন করছেন।

এখন লোডশেডিং হবে, কিছু করার নেই- প্রধানন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, সব শেষ করার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর জন্য যে জ্বালানি দরকার সেই জ্বালানি এখন নেই। তেল আমদানি করতে পারছেন না। গ্যাস ফুরিয়ে আসছে। এত মেগা প্রজেক্ট করলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে এত হইচই করলেন। এত রং-তামাসা করলে- এই হচ্ছে আপনার উন্নয়ন। সারাদেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখে, গরমে ছোটফোট করিয়ে, সারাদেশকে ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে রেখেছেন। নিত্যপণ্যের দাম প্রতিদিন হুহু করে বাড়ছে। মধ্য আয়ের-নিন্ম আয়ের মানুষ এখন বাজারে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। আর আপনি প্রধানমন্ত্রীত্ব করছেন সুখে, প্রধানমন্ত্রীত্ব করছেন আরব্য উপন্যাসের আলিফ-লায়লার মত রাজকীয় প্রাসাদে বসে। এটা মানুষ আর সহ্য করবে না। আপনার কথা যে মিথ্যা, প্রতিটি প্রতিশ্রুতি যে জনগণের সাথে ভন্ডামি করেছেন, মিথ্যাচার করেছেন। ক্ষমতায় আসার পরদিন থেকে প্রতিটি পদে পদে প্রমাণিত হয়েছে।

এ সময় বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন,অর্পন বাংলাদেশের সভাপতি বিথিকা বিনতে হোসাইন,বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটায়োরী,ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ওমর ফারুক কাউসার,স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।