আমাদের পথ একটি আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলন : মির্জা ফখরুল

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
0

বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন , ”আজকে নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। মূল্যস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে। মানুষ চাল কিনতে পারেন না। ওএমএস বন্ধ করেছে। এখন কার্ডের মাধ্যমে চাল বিক্রি করতে চায়। এর মাধ্যমে যাতে নতুনভাবে দুর্নীতি করতে পারে। আসলে এরা দুর্নীতিবাজ সরকার। তারা আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ নিয়ে যে চুক্তি করেছে তাতে কোনো লাভ হয়নি। উল্টো আদানিকে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। সুতরাং এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সেই জন্য আমাদের একটি পথ। সেটি হলো আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলন।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের অর্থনৈতিক চাল-চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ বিদ্যুত-জ্বালানি-পরিবহন-খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে জনগনের ত্রাহি অবস্থা, জনজীবন বিপর্যস্ত। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সবকয়টি সূচকই আরো দূর্বল ও প্রকট হয়ে উঠেছে।”

‘‘ বর্তমান বাংলাদেশে চারিদিকে শুধু হাহাকার, নাই আর নাই। সমগ্র দেশশটিই যেনো এক ‘নাই’ এর রাজ্যে পরিণত হয়েছে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের যাতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। একথায় দেশের অর্থনীতি এক মহাসংকটে নিমজ্জিত।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ গত আগস্টে সরকারি হিসেবেই মূল্যস্ফীতি দেখানো হয় ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। বর্তমান মূল্যস্ফীতি কমছে দেখানো হলেও খাদ্যবর্হিভূত মূল্যস্ফীতি এখনো প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি রয়েছে। জানুয়ারি মাসে এই হার ছিলো ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।”

‘‘ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। চাল-ডাল-ডিম এর আকাশছোঁয়া এমনকি ব্রয়লার মুরগীর দাম দুই‘শ টাকার উপরে। অথচ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো(বিবিএস) সাধারণ মূল্যস্ফীতি দেখাচ্ছে ৮ মধমকি ৫৭ শতাংশ আর খাদ্য মূলস্ফীতি ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ যার সঠিকতা নিয়ে খোদ অর্থনীতিবিদরাই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।”

বিদ্যুত ও গ্যাসের মূল্য বারবার বৃদ্ধি, দেশের রিজার্ভ তলানি নেমে আসা, নজিরবিহীন ডলার সংকট, ডলারের বিনিময়ে টাকার অভূতপূর্ব অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা, অপরিনামদর্শী ভ্রান্তনীতি, লাগামহীন দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার, ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি পাওয়া, ঋণ প্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা, অর্থনৈতিক আয় বৈষম্য, সুশাসনের অভাব এবং গণতন্ত্র না থাকার কারণে দেশে ‘অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ সরকার তাদের চিরাচরিত ডেনিয়েল সিনড্রোম থেকে বেরিয়ে এসে আইএমএফের কাছে পাঠানো পত্রে বিরাজমান অর্থনৈতিক দুরযোগের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠিন শর্তে আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। বলতে গেলে তারা এখন ব্যাংক থেকে ধার করে এবং আইএমএফের ঋণের ওপর ভর করেই চলছে।”

দেশের অর্থনৈতিক সংকটের সরকার কেনো স্বীকার করছে না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকারের না দেখার প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা জনগনের দ্বারা নির্বাচিত নয়, তারা ভোট করে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। যদি নির্বাচিত হয়ে আসতো তাহলে তাকে পার্লামেন্টে জবাবদিহি করতে হতো। জনগনের সামনে জবাবদিহি করতে হতো।”

‘‘ এখানে তারা(সরকার) সবসময় একটা মিথ্যা প্রচারণা করে, ভয়-ভীতি-ত্রাস সৃষ্টি করে, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা সার্বক্ষনিকভাবে একটি মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে গোয়েবেসের মতো। যারা ফ্যাসিস্ট হয়, যারা ডিক্টেটর হয় তাদের জন্য এই প্রচারণা জরুরী হয়-এটা মিথ্যা ধারণার মধ্যে জনগনকে রাখতে চায়।”

তিনি বলেন, ‘‘ বর্তমান গোটা ব্যবস্থায় লাভবান হচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যারা এই সরকারের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত তারা ব্যবসা-বানিজ্যে বিভিন্ন জায়গায় লাভবান হচ্ছে এবং সো-কল্ড পলিটিশিয়ানস যারা এই সরকারের সঙ্গে জড়িত তারা লাভবান হচ্ছে।”

‘‘ সাধারণ মানুষ. খেটে খাওয়া মানুষ তারা সেই ভুক্তভোগী থেকেই যাচ্ছে।”

‘সরকার সরে না গেলে সংকট যাবে না’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ এই সরকারকে সরে যেতে হবে। এই সরকার সরে গেলেই দেশে যে ট্রাষ্ট- এটা সৃষ্টি হবে। তখন এইগুলো সমস্যা সমাধানের জন্য যোগ্য যারা ব্যক্তি কাজ করতে পারেন তাদের নিয়ে এসে সমস্যা সমাধান অত্যন্ত দ্রুত করা সম্ভব হবে।”

‘‘ সরকার সরে যাওয়া ছাড়া এটা সম্ভব হবে না। এই সরকারকে রেখে এটা করা যাবে না। কারণ এরা এতো বেশি দুর্নীতি পরায়ন হয়ে যাবে, এরা সেন্ট্রাল ব্যাংককে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে, এরা পুরো ইকোনমি সিষ্টেম, মনিটরি সিষ্টেম সব কিছু নষ্ট করে ফেলেছে।ব্যাংকগুলো ভয়াবহভাবে ব্র্যাংকক্রাফট হয়ে যাচ্ছে প্রায়। ভুল ধারনা, ভ্রান্ত ধারণা মধ্যে সরকার দে্শের অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করছে।হু্ইজ ইজ নট ট্রু। অনলি ওয়ে এই সরকারে চলে যাওয়া।”

‘আইএমএফ ঋণ প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দেশের অবস্থা আজ এমন শোচনীয় অবস্থায় যেতো না। অনেকে মনে করেন, আইএমএফের ঋণে সংকট কাটবে না। এই ঋণ বরং আলিগার্কদের পেটে যাবে, কষ্ট বাড়বে সাধারণ জনগনের।”

‘‘ ব্যাংকি ও রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং নীতি সংস্কার করে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার না করলে, শক্তভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে ব্যর্থ হলে যে সূত্র হতেই ঋণের টাকা আসুন নানা কৌশললে শেষ পর্যন্ত অলিগার্করাই বরং তা লুন্ঠন করে দেবে।”

সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য আর্থিক খাতে সংস্কার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণ, কর শুল্ক, আর্থিক খাত, ব্যাংকিং সেক্টার, বাজেট ব্যবস্থাপনা, বানিজ্য নীতির সংস্কার করা আবশ্যক বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ এখন প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসন এবং প্রকৃত অর্থেই জনগনের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার। বিএনপি আশা করে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আর্থিকথাতে কার্যকর সংস্কার সাধণে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্র্রতিষ্ঠার জন্য আইএমএফ বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়াবে।”

‘‘ আমরা সরকার পরিবর্তনে ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছি… নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সমগ্র জনহন নির্বিগ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশনায়ক তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা বাস্তবায়নে কাংখিত জাতীয় সরকার গঠন করবে। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপির নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে আগামী দিনে দেশের চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দুরীভূত করা সম্ভব হবে, ইনশাল্লাহ।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।