জোট বেধে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে: মান্না

আপডেট: মে ২৭, ২০২৩
0

নাগ‌রিক ঐক‌্যর সভাপ‌তি মাহমুদুর রহমান মান্না ব‌লেছেন, সময় এসেছে, জোট বেধে আন্দোলন করে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে।

শ‌নিবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মায়ের ডাক’র ব্যানারে ‘গুম বন্ধ কর, গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দাও’ শিরোনাম সামনে রেখে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।

গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি’র নেতৃত্বে মানববন্ধনে আরো উপ‌স্থিত ছিলেন গুমের শিকার মো. সোহেল এর মেয়ে সাফা, গুমের শিকার মো. কাউসার এর মেয়ে মিম, গুমের শিকার মো. পারভেজ এর মেয়ে রীদী, গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সবুজ’র স্ত্রী জিনিয়া পারভিন, গুমের শিকার চৌধুরী আলমের ভাই, গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের মেয়ে অরোয়া ইসলাম। আরো উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী ফরিদা আক্তার, মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন, ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শহীদুল আলম, মানবাধিকার কর্মী মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমুখ।

নাগ‌রিক ঐক‌্যর আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে এই সরকারের তো সমর্থন নাই, বিদেশের সমর্থনও চলে গেছে। বিদেশিদের কাছে এই সরকার ফ্যাসিস্ট অবৈধ সরকার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। নির্বাচন যাতে নিজেদের মতো হয়, নিজেদের মতো করতে পারে, সরকারের সেই কাজে যারা বাধা দেয় বা বিরোধিতা করে তাদেরকেই গুমের শিকার হতে হয়। বিদেশি চাপে এই সরকার বর্তমানে বিপদে আছে। র‌্যাব দিয়ে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে গুম করা হতো সেটা বন্ধ হয়েছে। সামনে সময় এসেছে, জোট বেধে আন্দোলন করে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ব‌লেন, গুম হওয়াদের উদ্ধারের জন্য আজও তাদের ছেলেমেয়েদের চোখের পানি ঝরাতে হয়। যাদের ভাই, বাবা, গুম হয়েছে তাদেরকে আজও কাঁদতে কাঁদতে দাবি জানাতে হয় এই অবৈধ সরকারের কাছে। বছরে শত শত মানুষ গুম হচ্ছে সরকারের কোন পদক্ষেপ নাই। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, বিচারবহির্ভূত হত্যার কারণেই র‍্যাব নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে আর এতেই গুম খুন বন্ধ হয়ে গেছে। এই গুম খুনের সাথে রাষ্ট্রীয় বাহিনী যুক্ত। গুমের বিষয়ে সরকার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারে নাই। রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুমের সাথে যুক্ত। নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা আসবে। রাষ্ট্রের উপরও নিষেধাজ্ঞা আসছে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দিন ফুরিয়ে গেছে। এখন ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে।

চিত্রশিল্পী শহীদুল আলম বলেন, বলা হয় এটা স্বাধীন দেশ কিন্তু এই দেশ এখনো স্বাধীনতার ছোঁয়া পায়নি, সে দেশে আমরা বসবাস করছি। আমি নিজেও গুমের শিকার হয়েছিলাম। রাষ্ট্রীয় বাহিনী বলেছে, আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার গুমের বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ একটা জিডি পর্যন্ত নেয়নি। পাঁচ বছরে এখন পর্যন্ত চার্জশিট দিতে পারেনি। বিচারক বলেছিলেন, আপনার ভাগ্য ভালো গুম হয়ে যান নাই। আমি সমাজে পরিচিত তাই এই অবস্থা, যারা অপরিচিত তাদের কি অবস্থা! স্বাধীনতা এমনি আসে নাই, ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই দেশে গুম খুন বন্ধ হবে।

ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, গুম হওয়াদের খোঁজে সরকারের কোন পদক্ষেপ নাই। সরকারকে বলি, মায়ের ভালোবাসা চ্যালেঞ্জ করে লাভ নাই। আশা ছাড়ছি না, আইনের কাঠগড়ায় আপনাদেরকে দাঁড়াতেই হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। আন্দোলন চলমান রাখি।

নুর খান লিটন বলেন, গুমের শিকার সবাইকে ফিরিয়ে দিতে হবে। দেশে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। যারা রাষ্ট্র পরিচালকের আসনে আছেন তারা বলেন যে, এরা গুম হয় নাই, কেউ ঋণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কেউ মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এইসব বলে বলে সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে উসকে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা গুমের শিকার কারো কোন সন্ধান পাচ্ছি না। যারা এদেরকে গুম করে রেখেছেন, সেই সমস্ত সংস্থার প্রধানদের বলি, সাবধান হয়ে যান। সমস্ত তথ্য আমাদের কাছে আছে। আগামীতে বিচারের আওতায় আনা হবে।

চৌধুরী আলমের ভাই বলেন, যারা গুম হয়েছে তারা নাকি গ্রেফতার হয়েছে। বিএনপি করি বলেই কি আমাদের অপরাধ। র‍্যাব আমাকে ধরে নিয়ে আমার স্ত্রীর কাছে ফোন করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে। আমি আন্তর্জাতিক আদালতে এই সরকারের বিচার দাবি করছি।

ফরিদা আকতার বলেন, যারা গুম হয়েছে তাদের বাচ্চাদের কান্না কি প্রধানমন্ত্রী শুনতে পায় না? আপনার পরিবারের কেউ যদি এক বছর পরিবার থেকে বাইরে থাকে তখন আপনার কি রকম লাগবে? সে বিবেচনা আপনার নাই এটা আমরা আশাও করি না। তাদেরকে কিভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে আমরা এটা টের পাচ্ছি, এর জবাব আপনাকে দিতে হবেই।