দেশের হিন্দু সমাজকে উৎখাতের জন্য পরিকল্পিতভাবে হামলাকারী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের ১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনে বিচারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর পরিকল্পিত হামলা, অঙ্গিসংযোগ, লুটতারাজ, মন্দির ও প্রতিমা ধ্বংস, হত্যা এবং ধর্ষণের মত ভয়াবহ অপরাধের প্রতিবাদ জানাতে আজ (৪ নভেম্বর, ২০২১) রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে বক্তারা এই দাবি জানান। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের খবরেও সমাবেশ থেকে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায় বলা হয়, পৃথিবীর যে কোনো দেশে সংখ্যালঘু মানুষকে টার্গেট করে হামলা করা অমানবিক যা বাংলাদেশের হিন্দু সমাজের কাছে সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের এদেশীয় দোসররা যে ধরণের হামলা চালিয়েছিল বর্তমানে হিন্দুসহ দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে ঠিক একই উদ্দেশ্যে একই ধরণের হামলা চালানো হচ্ছে। কোনো সম্প্রদায় বা মানবগোষ্ঠিকে গণবিতারণ বা নির্মূল করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত আক্রমণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এধরণের অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশে উপযুক্ত আইন রয়েছে, যে আইনের নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন ১৯৭৩। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারী সন্ত্রাসীদের ঐ আইনের আওতায় এনে ট্রাইবুনালের মাধ্যমে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, হিন্দুদের উপর নিয়মিত বিরতিতে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটলেও কোনো ঘটনার বিচার হয় না। বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা অপরাধ সংঘঠিত করতে আরও উৎসাহ পাচ্ছে। ফলে দেশের সংখ্যালঘু জনসাধারণ আস্থা হারিয়ে ফেলছে, দেশের জন্য যা মারাত্মক ক্ষতিকর।
৭১’র পরাভূত শক্তি নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। অপশক্তি সাম্প্রদায়িক হামলার মাধ্যমে বাঙালির ঐক্যকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশবাসীর ঐক্য ও সংহতি নষ্ট করার জন্য তারা পুরাতন কায়দায় ধর্মকে ব্যবহার করছে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈতিক আঁতাতের কারণে অপশক্তি সন্ত্রাসের মহীরুহতে পরিণত হচ্ছে। এরফলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন হচ্ছে।
সমাবেশে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের সভাপতি ড. ময়না তালুকদার, সহসভাপতি রীনা রায়, সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. নীরু বড়ুয়া ও ড. সঞ্চিতা গুহ, কোষাধক্ষ্য পুলক রাহা, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি (হিন্দু) সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, একই সংগঠনের সভাপতি (বৌদ্ধ) মধুমিতা বড়ুয়া চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক দিপালী চক্রবর্তী, বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য পিন্টু সাহা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সুমনা গুপ্ত, সুশাসনের জন্য প্রচারাভিজানের (সুপ্র) কোষাধক্ষ্য মনজু রানী প্রামানিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ শেষে সংগঠনের সদস্যরা কালীপূজা উপলক্ষে মা কালীর মুখোশ পরিধান করে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্তরে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল থেকে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ; ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার; সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের বিচার কর করতে হবে ইত্যাদি শ্লোগান দেওয়া হয়।