অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তারেকের নেতৃত্বেই ‘ক্ষমতার পরিবর্তন’ আসবে—মির্জা ফখরুল

আপডেট: মার্চ ৭, ২০২২
0

অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তারেকের নেতৃত্বেই ‘ক্ষমতার পরিবর্তন’ আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার দুপুরে তারেক রহমানের কারাবন্দি দিবসের এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র, একই সঙ্গে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি- এই জিনিসগুলোকে সামনে নিয়ে জিয়াউর রহমান সাহেব রাজনীতি শুরু করেছিলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই পতাকা তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এখন সেই পতাকা তারেক রহমানের হাতে।”

‘‘জনাব তারেক রহমান সাহেব একজন ব্যক্তি নন। তিনি হচ্ছেন একটা রাজনীতির প্রতীক, তিনি হচ্ছেন একটি দর্শনের প্রতীক। আমরা বিশ্বাস করি শুধু নয়, আমরা এখন আস্থাশীল যে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে তারেক রহমানের নেতৃত্বে ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ-সক্রিয় অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা এই দেশকে মুক্ত করতে সক্ষম হবো।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ বাংলাদেশকে যদি সত্যিকার অর্থেই একটা সুখী-সমৃদ্ধ-গণতান্ত্রিক দেশের পরিণত করতে হয় তাহলে এখানে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আমাদের জনগনের ঐক্য সৃষ্টি করা।

‘‘ সেই ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে অবশ্যই আমাদের বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে।”

তিনি বলেন, ‘‘ এখন আর সময় ক্ষেপন করার সময় নেই। আসুন আমরা সবাই নিজেদেরকে সংগঠিত করি, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করি, সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ করি।”

‘‘ একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে আমরা অবশ্যই যেন তাদেরকে পরাজিত করতে পারি সেই জন্য উদ্যোগ নেই-এই আহবান জানাচ্ছি।”

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে নসরুল হামিদ মিলনায়তনে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম ও বাংলাদেশ ছাত্র ফোরামের যৌথ উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৬তম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

‘সেনা সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের বাসা থেকে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। এরপর থেকেই বিএনপি এই দিনটি কারাবন্দি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

তারেক টানা ১৮ মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে চিকিতসার জন্য স্বপরিবারে লন্ডনে যান। বর্তমানে তিনি সেখানেই রয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তারেক রহমানকে তারা(আওয়ামী লীগ) ভয় পায়- এটা বাস্তব। কেনো ভয় পায়? তারেক রহমানের যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে সেই সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে আজকে সারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে শুরু করেছেন। এটা তারা অতীতেও দেখেছেন। যথন তিনি দলের সিনিয়র যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব নেন এবং যখন তিনি তৃনমূল পর্যায়ের সংগঠন গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন তখন থেকে তাদের মনে হয়েছে যে, এই মানুষ যদি দেশে থাকে তাহলে তাদের কোনো অবস্থান থাকবে না।”

‘‘ সেই কারণে তারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার,যত মিথ্যা মামলা একটার পর একটা দিয়ে যাচ্ছে…।”

‘এক-এগারো চক্রান্তের অংশ

ফখরুল বলেন, ‘‘ তারেক রহমানের গ্রেফতার কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলো না। এটা ছিলো দীর্ঘকালে যে সুগভীর চক্রান্ত যে বাংলাদেশের সেই শক্তির উত্থান যেন না ঘটে যেই শক্তি বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা স্বাধীন-সার্বভৌম-গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করতে পারে যার স্বপ্ন আমাদেরকে দে্খিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার যে রাজনৈতিক দর্শন ছিলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এই দর্শনই হচ্ছে বাংলাদেশের যারা শত্রু, বাংলাদেশেকে যারা সবসময়ে একটা নতজানু রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় অথবা ফেইল্ড স্টেট হিসেবে দেখতে চায় তাদের এই দর্শনই হচ্ছে বড় একটা শত্রুর মতো।”

‘‘ জিয়া্উর রহমান এই দর্শন আনার ফলে তিনি একই শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন এবং তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা্ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারনাটাকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিলো। প্রকৃতপক্ষে তারেক রহমান সাহেব গ্রেপ্তার, পরবর্তিতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতার এবং সেই সময়ে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার, পরবর্তিকালে দুই বছরের চক্রান্তের মধ্য দিয়ে দুই বছরে নির্বাচনে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা এই সবই ছিলো চক্রান্তের অংশ। ১/১১ যে ঘটনার হয়েছিলো সেই ঘটনা হয়েছিলো শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে শুধু নয় এটা ছিলো সমগ্র বাংলাদেশী জাতির বিরুদ্ধে। মূল লক্ষ্যটি ছিলো এখানে এই জাতিকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ডি-পলিটিসাইজড একটা স্টেট হিসেবে তৈরি করা।”

‘মন্ত্রীদের মিথ্যাচার’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এরা(মন্ত্রীরা) উন্নয়নের কথা বলে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা বলে কিন্তু এতো মিথ্যা কথা বলে যে মিথ্যাগুলো সত্যে পরিণত করতে চায়। কয়েকদিন আগে তারা বলেছে যে, এখানে নাকী কুঁড়ে ঘর শুধু কাব্যের মধ্যে, দারিদ্য নাকী খুঁজে পাওয়া যায় না বাংলাদেশে।”

‘‘ অথচ পরিসংখ্যান বলছে, ডাটা বলছে যে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের পরিমান-এটা শুধু আমাদের কথা নয়, আন্তর্জাতিক পর্য়ায়ে যে সংস্থাগুলো আছে তাদের জরিপে বলছে যে, বাংলাদেশে দারিদ্রের পরিমান শতকরা ২% আরো বেড়েছে। অর্থাত মানুষ ২% আরো গরীব হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে কাদের? অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের। তারা এতো বেশি অর্থশালী হয়েছে, তারা এতো বেশি লুট করেছে, তারা এতো বেশি ডাকাতির মধ্য দিয়ে অর্থ-সম্পদকে বিদেশে পাঠিয়ে ব্যবসা তৈরি করেছে যে, তাদের একেবারে গ্রামের ইউনিটের নেতা থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত তারা এখন দারিদ্র্য দেখতে পায় না।”

‘‘ দূ:খ হয়, কষ্ট হয় যে, আমরা যারা ১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধ করেছিলাম, আমরা যারা পরবর্তিকালে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিলাম ১৯৯০ সালে, তারা আজকে তাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে এই দেশ এই জাতি হারিয়ে ফেলেছে এবং সেই স্বপ্নগুলো মানুষের ছিলো, সেই আকাংখা ছিলো সবগুলোকে চুরমার করে দিয়েছে তারা। লক্ষ্য একটাই তারা চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে এবং তার জন্যে তারা আজকে গণতন্ত্র বলুন, জনগনের ভোটের অধিকার বলুন সমস্তগুলোকে ধবংস করে দিয়ে এখানে একদলীয় শাসনব্যবস্থার জন্য তাদের মতো করে একটা নির্বাচন করতে চায়। সেই কারণে তাদের মতো করে ইসি গঠন করে, সার্চ কমিটি করে সব কিছু প্রতারনার মধ্য দিয়ে করতে চায়।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের দাবিগুলো খুব পরিস্কার- গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাকে মুক্তি দিতে হবে। দেশনেত্রীকে মুক্তি দেয়ার পরে এই সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে এবং সেই নিরপেক্ষ সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মধ্য নিয়ে যে নির্বাচন পরিচালনা করবেন সেই নির্বাচনে জনগনের একটি পার্লামেন্ট ও সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।”

‘‘ তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই এই মুহুর্তে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ করা উচিত, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত।”

বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহিরউদ্দিন স্বপন, শ্যামা ওবায়েদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, ওবায়দুর রহমান চন্দন, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।