`আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ধুলিসাৎ করে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে নিশ্চিত করতে হবে’

আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২২
0

ডা .জাকারিয়া চৌধুরি

স্লামুআলাইকুম……..

-ওয়ালাইকুম সালাম ভাইয়া।

আপনি কি গাড়িতে ?

-জ্বি ভাইয়া। ঢাকা ফিরছি।

গাড়ি চালায় কে ?

-আমার ছোট ভাই।

ছোট ভাইকে আমার সালাম দিন।


আমি বিরবির করে বললাম ওয়ালাইকুম আসসালাম তারেক রহমান। তারপর ঝাড়া দুই ঘন্টা সাংগঠনিক আলোচনা শুনলাম। আমি যেসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল করলাম তা হলো- উনার বডি ল্যাংগুয়েজ, অন্যকে কথা বলতে দেয়ার মানসিকতা, কেউ অতিরিক্ত সময় নিলে চুপচাপ তাকিয়ে থেকে মনোযোগ দিয়ে শোনা, কারোর কথার মাঝে নাক না গলানোর মত বিরল সব গুন তাঁর পরিপুষ্ট আছে। কাউকে ছোট বড় করে দেখার অসুখ তাঁর নেই।

কেউ কেউ হয়ত ভাবছেন আমি বিএনপি করি, তাই তেলের ড্রাম নিয়ে এসেছি। স্যোয়ার অন গড, আমাকে যারা চেনেন তাদেরকে বলছি। তারেক রহমানকে নিয়ে এটা-ই আমার প্রথম লেখা। এই লেখার প্রেক্ষিত এসেছে ভাগ্যক্রমে আর প্রসঙ্গ এসেছে মি তারেক রহমানের। খুব ভাল, অসম্ভব ভাল ব্যাবহারের কারনে। আমি দেখলাম, এদেশের প্রতিটা থানা উপজেলার নাম, কে কোথায় কোন দায়িত্বে আছেন তিনি প্রায় সবই জানেন। আমি রাজনীতি করি দুই যুগ। দেশের ৬৪ টা জেলার নামই জানিনা।


আট বছর আগের কথাঃ

আমার কাছে একটা ফোন এলো। একজন শ্রদ্ধেয় লোক ডেকেছেন। আপাদমস্তক ভদ্রলোক। আমি গেলাম। সিএনজি থেকে নেমে প্রথম যে দৃশ্যটা দেখলাম তা উল্লেখ না করলেই নয়। যিনি ডেকেছেন তিনি একা একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে পকেট থেকে টাকা বের করে গুনতে চেষ্টা করছেন। স্ট্রিট ল্যাম্পের আলোর কাছে তাঁর চোখ হেরে যাওয়ার মত অবস্থা। আমার দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মত বললেন- চোখে দেখিনা। পাল্টা জিগেস করলাম, এখানে ভাংতি টাকা গুনার প্রয়োজন কি ?

তোমার সিএনজি ভাড়া কত হয়েছে ? আমি সেটা পরিশোধ করব। তাঁর জবাব শুনে আমার আসমান থেকে পড়ার দশা। মনে মনে ভাবলাম, উনি কি এজন্যই এখানে অপেক্ষা করছিলেন ? যাই হোক, আমরা বসলাম। নানান কথার ফাকে তিনি জিগেস করলেন-

তারেক রহমানকে চেনো ?

না, আমার সংক্ষিপ্ত উত্তর।

উনার সম্পর্কে কোনো ধারনা রাখো ?

না, আমার একই উত্তর।

তারেক রহমান সাহেব খুব ভাল মানুষ।

আরবান এরিয়ায় উনার এক্সেপ্টিবিলিটি ৫৬ % ধারনা করি। আমার হাতে এমন কোনো পরিসংখ্যান নেই। অথচ এখনই সেটা ৬৫ % এর উপরে থাকার কথা। দল নয়, ব্যাক্তি তারেক রহমানের কথা বলছি। আমাদের ছেলেরা অনেক বিষয় নিয়েই লিখে। তারেক সাহেবকে নিয়ে লিখে না। কেন জানো ?

না। জানিনা। আমার একই উত্তর।

আমিও জানিনা- তিনি কিছুটা হতাশার সুরে বললেন।

যে বিষয়ে আমার ধারনা নেই সে বিষয় নিয়ে আমি কিছু লিখব না আমি জানি। ফলে আমিও মন খারাপ করে চলে আসলাম। তারপর আট বছর গেল। গত রাতে আমি দুই ঘন্টা তারেক রহমান সাহেবের আলোচনা শুনলাম। আমার অভাবের প্রাথমিক ধাক্কাটা পার হলো।

গভীর রাত। বাসায় ফিরছি। মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। ভাবছি, হায়রে দুর্ভাগা দেশ, হায়রে দুর্ভাগা জাতি। তারেক রহমানকে নষ্টের সাগরে ডুবিয়ে দিলেও তিনি নষ্ট হবেন না। তাঁকে দোষী করার জন্য রাষ্ট্র নাকি ৪৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। যারা এসব করেছে তাদেরকে লক্ষ হাজার কোটি টাকা দিলেও কিছু হবে না। আমি একজন সমর্থক হয়েও তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে আট বছর অপেক্ষা করেছি। তিনি দলের প্রধান। গায়ের জোরে তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। বাট হাউ লং ? খালেদা জিয়া প্রায়ই বলেন শুনি- তিনি এমন পরিবেশে বেড়ে উঠেননি যেখানে সব অশ্লীলতার জবাব দেয়ার প্রয়োজন হয়। আমি গতরাতে সেটা-ই চাক্ষুষ করলাম।

হ্যাঁ, এখন অনেক কথা বলা যায়। আমাদের বয়সও ত কম হলো না। তারেক রহমান আজ শক্ত হয়েছেন। পোক্ত হয়েছেন। তার পিতা জীবন দিয়েছেন দেশের জন্য। মা, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের একমাত্র নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সেও অন্তত তিন বার। তারেক রহমান এক যুগের উপরে দেশের বাইরে… তিনি দলকে দেখেছেন, দেশকে দেখেছেন, দশজন মানুষও আশা করি দেখেছেন। অপরাধ ছাড়াই মেরুদন্ডের হাড় ভেংগে ফেলার যাতনা সয়েছেন। জেল জুলুম সহ্য করেছেন। নষ্ট মানুষে ভরা এই দেশটার দিবারাত্রির কাব্য পর্যবেক্ষন করেছেন। নানান দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রনা, নির্যাতনের মধ্য দিয়েই আল্লাহ তাকে আজকের স্থানে নিয়ে এসছেন। এরচেয়ে বড় আর কি চাই ?

তিনি ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সব শ্রেনীর মানুষ চিনেছেন। আমাদের চলবে। আমাদের মত দেশের জন্য দুইটা তারেক রহমান জন্ম নেবে না। আমরা যদি তারেক রহমানকে নার্সিং করি, তিনি দেশের নার্সিং করবেন। এটাই স্বাভাবিক। এটাই বিশ্বাস। তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান। তাদের রক্ত তারেক রহমানের শিরায় শিরায় বহমান। এটা আল্লাহর তরফ থেকে আমাদের প্রতি রহমত স্বরুপ। শুকরিয়া সব কিছুর জন্য।

এ মুহূর্তে বিএনপি’র সামনে চ্যালেঞ্জ হল, রাষ্ট্র বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে নিজেকে সুসংগঠিত করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করা। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে নিশ্চিত করা। সংগঠনে কোন্দল, অনৈক্য, ব্যক্তিত্বের সংঘাত, পদের প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। কিন্তু সেসবের উর্ধ্বে উঠে দলকে মানুষের জন্য দৃঢ়ভাবে গড়ে তোলা। কারণ বিএনপি’র অনৈক্য থেকে শক্তি সঞ্চয় করছে মহাজোট সরকার। বেগম খালেদা জিয়ার বাড়িয়ে দেওয়া সহযোগিতার হাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতোই দূরে ঠেলেছেন, ততই বিপদের বেড়াজালে পতিত হচ্ছেন। আজকের চ্যালেঞ্জ কিন্তু আন্তর্জাতিক চক্রান্তের। শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া ,তারেক রহমানের দল বিএনপি গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি এনে দিয়েছে, উদার মুসলিম আধুনিক জাতি রাষ্ট্র হিসেবে। উন্নয়ন প্রত্যাশী কটা দেশে এমন চমৎকার মধ্যপন্থার উদার গণতান্ত্রিক দল আছে? নেই। সেজন্যে জঙ্গিবাদের জিগির তুলে আন্তর্জাতিক চক্র বাংলাদেশের মানুষকে ক্রীতদাসে পরিণত করতে চাইছে। রাষ্ট্রকে একটি বাজার-রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে। আমাদের সৈন্যরা শুধু রফতানি হবে আর রাষ্ট্রের নিরাপত্তা দেখবে ভারত।

রাজনীতিঃ বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বগুড়া কমিটির সদস্য হিসেবে যোগদান করে তারেক রহমান তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে সংগঠনের যোগ দেয়ার পূর্বেই তারেক রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারেক তার মায়ের সহচর হিসেবে সারা দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তারেক রহমান মা বেগম জিয়ার প্রচারণা কার্যক্রমের পাশাপাশি পৃথক পরিকল্পনায় দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা চালান। মূলত ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তার অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতির প্রথম সারিতে তারেক রহমানের সক্রিয় আগমন ঘটে ।

২০০২ সালের পর গণ-সংযোগঃ ২০০২ সালে তারেক রহমান দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির একজন জেষ্ঠ্য যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্মপ্রাপ্ত হন। দলের উর্দ্ধতন পর্যায়ে নিয়োগ লাভের পরপরই তারেক রহমান দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সাথে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। মূল সংগঠন সহ সহযোগী সংগঠন যেমন জাতীয়তাবাদী যুব দল, জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ইত্যাদি আয়োজিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে তারেক রহমান কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন ও মাঠপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ও মতামত গ্রহণ করেন। এ সভাগুলোতে তারেক মূলত দলের গঠনতন্ত্র, উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে দীর্ঘ মতবিনিময় করেন। বিস্তারিত মতবিনিময়ের বিষয়বস্তুর মাঝে আরও ছিল প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে দলের করণীয় ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন- অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে সরকারী দল হিসেবে বিএনপির করণীয় প্রসঙ্গে আলোচনা। পরবর্তীতে দেখা যায় যে এই জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মনোবল অসামান্য বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে তারেক রহমান শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিত থেকে বেরিয়ে এসে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।


অভিযোগ ও বিতর্কসমূহঃ
২০০২ সালে ৩৭ বছর বয়সী তারেক রহমানকে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন নেতা হিসেবে দায়িত্ম দেয়ার ফলে কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এই সিদ্ধান্তকে স্বজনপ্রীতি বলে চিহ্নিত করেন। সংসদের তৎকালীন বিরোধী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও এই সিদ্ধান্তর প্রতি নিন্দামুখর ছিল। অবশ্য দলের পক্ষ থেকে বা দলের কোন নেতাকে কখনওই এই সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত করতে দেখা যায়নি কেননা তারেক রহমান সক্রিয় ভাবে দলের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে তার নিয়োগলাভকে যথাযথ প্রমাণে উদ্যোগী ছিলেন।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে ব্যাপক দূর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। দেশের নির্দিষ্ট কিছু সংবাদমাধ্যম ক্রমান্বয়ে তারেক রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ আনতে শুরু করে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যাবহারসহ দূর্নীতির অভিযোগ আনে। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া সহ তারেক রহমানের কার্য্যালয় ঢাকার বনানীস্থ হাওয়া ভবনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অভিযোগ প্রচারিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিযোগ ছিল যে তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে হাওয়া ভবন সরকারের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছে।


সেনা সমর্থিত সরকার কর্তৃক গ্রেপ্তারঃ
১১ জানুয়ারী, ২০০৭ তারিখে নিয়মতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অপসারণ করে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর তৎকালীন চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল (পরে জেনারেল হিসেবে অবসর নেন) মঈন উদ্দীন আহমেদের হস্তক্ষেপে একটি অগণতান্ত্রিক ও অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। ১২ জানুয়ারী উপদেষ্টা পরিষদ নাম্নী একটি মন্ত্রীসভা গঠিত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ প্রচুর মামলা দায়ের করা হয়।

৭ মার্চ, ২০০৭ তারিখে একটি দূর্নীতি মামলার আসামী হিসেবে তারেক রহমানকে তার ঢাকা ক্যান্টমেন্টস্থ মইনুল রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ১৩টি দূর্নীতির মামলা দায়ের করা হয় ও তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়।


আটকাবস্থায় শারীরিক নির্যাতনঃ
গ্রেপ্তারের কিছুদিন পর তারেককে আদালতে হাজির করা হলে তার শারীরিক অবস্থার প্রচন্ড অবনতি সবার নজরে পড়ে। তার আইনজীবিরা আদালতে অভিযোগ করেন যে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তারেক রহমানের উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে চিকিৎসকদের একটি দল পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর আদালতকে জানায় যে তারেক রহমানের উপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ যুক্তিযুক্ত

প্রথমে আইনজীবিরা আদালতে আবেদন জানান যেন তারেক রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দেশ্যে রিমান্ডে পাঠানো না হয়। আদালত সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু পরে দেখা যায় রিমান্ডের পর তারেক রহমানের শারীরিক অবস্থার ক্রমান্বয়ে অবনতি হচ্ছে। এক পর্যায়ে তারেক রহমান আর নিজের পায়ে হেঁটে আদালতে আসতে পারতেননা; তাকে প্রিজন ভ্যানের পরিবর্তে অ্যাম্বুল্যান্সে করে আনা প্রয়োজন হত ও তিনি এজলাসে উপস্থিত হতেন স্ট্রেচারে করে। এই পর্যায়ে আদালত রিমান্ডে নেয়ার আদেশ শিথিল করে তা কমিয়ে ১ দিন ধার্য করেন ও জিজ্ঞাসাবাদকারীদের সাবধানতা অবলম্বনের আদেশ দেন।

অবস্থার অবনতি অব্যাহত থাকলে তারেক রহমানকে কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে ঢাকার শাহবাগস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

২৫ আগস্ট, ২০০৭ তারিখে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে তারেক রহমান তার হাসপাতাল কক্ষে পা পিছলে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। এরপর খবরের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয় ও ধারণা সৃষ্টি হয় যে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনকে গোপন করার লক্ষ্যে এই খবর ছড়ানো হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখা দেয়, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

মুক্তিলাভঃ ২০০৮ এর আগস্টে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলো আদালতে গতি লাভ করে। প্রায় আঠারো মাস ব্যাপী নিপীড়িত অবস্থায় কারান্তরীণ থাকার পর ৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ তারিখে সবগুলো মামলায় তারেক রহমানের জামিনলাভ সম্পন্ন হয় ও তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি লাভ করেন।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগগুলো এই মুহুর্তে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে আছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ আনা হলেও পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় যাবৎ আইনী লড়াই চালিয়েও কোন কর্তৃপক্ষ আদালতের কাছে দূর্নীতির প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সন্দেহ পোষণ করেছেন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ অনেকাংশেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল কিনা।

চিকিৎসা ও বিদেশে অবস্থানঃ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ তারিখে বিশেষ কারাগার থেকে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পুত্র তারেক রহমানকে দেখতে যেন। সেদিন রাতেই তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বর্তমানে লন্ডনের সাউথ ওয়েলিংটন হসপিটাল ও লন্ডন হসপিটালে তার চিকিৎসা চলছে এবং চিকিৎসার সুবিধার্থে তিনি সেন্ট্রাল লন্ডনের এডমন্টনে সপরিবারে বসবাস করছেন।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনীত দূর্নীতির অভিযোগের কোনটিরই কোন প্রমাণাদি এখন পর্যন্ত আদালতে উপস্থাপিত হয়নি। বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাকালীন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারেক রহমান সহ তার কার্য্যালয়ের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছিলেন সেগুলোও এখনও অপ্রমাণিত ও অমীমাংসিত অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। উপরন্তু সরকার পক্ষ হতে দায়ের করা একটি দূর্নীতি মামলা কেন বাতিল করা হবেনা এই মর্মে দেশের উচ্চ আদালত সরকারকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলঃ ৮ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান সংগঠনের জেষ্ঠ্য ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

উক্ত কাউন্সিলে তারেক রহমানের একটি ধারণকৃত বক্তব্য উপস্থিত জনসমাবেশের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়। বক্তব্যটিতে তারেক রহমান জানুয়ারী ২০০৭-এ ক্ষমতায় আসা অগণতান্ত্রিক সরকারের হাতে তার অন্যায় গ্রেপ্তার ও বন্দী অবস্থায় নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি নিশ্চিত করেন যে আপাতদৃষ্টিতে মনে হওয়া বিচার বিভাগীয় ব্যাবস্থার আড়ালে তাকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তারেক রহমান তার শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দেন ও জানান তার চিকিৎসা সম্পন্ন হতে আরও সময় প্রয়োজন। এই বক্তব্য প্রচারিত হওয়ার সময় উপস্থিতদের কেউ কেউ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

উক্ত কাউন্সিলে আরও বক্তব্য রেখেছেন ব্রিটিশ সংসদ সদস্য জর্জ গ্যালোওয়ে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রচারমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমূখ।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, দেশ জনতা ডটকম