‘আমরা ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’

আপডেট: জুন ১, ২০২১
0

গাজী জাহিদুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।সাতক্ষীরার শ্যামনগরে দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা যার চারপাশে পানি আর পানি, পূর্বে কপতোক্ষ ও পশ্চিমে খোলপেটুয়া বিশাল নদী। গাবুরার মানুষ প্রতিকূল আবহাওয়ার সাথে লড়াই করে যুগযুগ ধরে কোন মতেই বেঁচে আছে। কিন্তু তাদের প্রাণের একটি দাবি ‘আমরা ভাসতে চাই না, বাঁচতে চাই, ত্রান চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’।

প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, বুলবুল ও আমপানের ক্ষত শুকিয়ে উঠতে না উঠতেই ঠিক এক বছর পরে আবারও গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তা-বে ও জলচ্ছ্বাসে পাউবো’র বেড়িবাঁধ উপচে ও ভেঙ্গে গাবুরা ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে ছোট বড় কয়েক শ’ চিংড়ি মাছের ঘের। চিংড়ি ও সাদা মাছ পানিতে ভেসে যেয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এতে বিপদে পড়েছে ক্ষুদ্র প্রান্তিক মাছ চাষিরা। আর দেখা দিয়েছে গোটা ইউনিয়নে তীব্র খাওয়া ও রান্নার পানির সংকট। যুগযুগ ধরে টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মাণের প্রাণের দাবি দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরাবাসীর। কিন্তু কে শোনে কার কথা। যখন দুর্যোগ শুরু হয় তখনই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মতৎপরতা শুরু হয়। কাজের কাজ কিছুই হয় না।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (১ জুন) গাবুরা ইউনিয়নের পার্শ্বেমারী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তার খার সাথে কথা হলে তিনি আক্ষেপের সাথে বলেন, আবহাওয়া সংকেত পাওয়ার পরে এলাকার মানুষকে সজাগ থাকার জন্য প্রচার শুরু করি। ২৬ মে সকাল ১১টার দিকে পূর্ণিমার পূর্ণ জোয়ারে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদীতে ৩/৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। জোয়ারের পানি পাউবো’র বেড়িবাঁধের কানায় কানায়। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি ও প্রচ- বাতাসে ঢেউয়ের আঘাতেই পাউবো বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ শুরু করে। স্থানীয়দের সাথে নিয়ে পানি আটকাবার চেষ্টা করি। কিন্তু সম্ভব হয়নি।

গাবুরায় ৩নং ক্লোজার, গাগড়ামারী, লেবুবুনিয়া ক্লোজার কপোতাক্ষ নদীর জোয়ারের তোড়ে বাঁধ ভেঙে হু হু করে জোয়ারের পানি ভিতরে প্রবেশ করে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। চারিদিকে পানি আর পানি। পরদিন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গাগড়ামারী ও লেবুবুনিয়া বাঁধ বাঁধার পর ৩নং ক্লোজার লেবুবুনিয়া বাঁধ কয়েকবার ভেঙ্গে যায়। ৬ দিন পর মেম্বার আবিয়ার ও সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম এর উদ্ধোগে স্থানীয়দের সহায়তায় মঙ্গলবার বেড়িবাঁধ বাঁধা সম্ভব হওয়ায় জোয়ারের পানি ওঠা নামার পথ বন্ধ হয়েছে। এতে পানিবন্দি ৪০ হাজার মানুষ স্বস্তির নিঃশাস ফেলেছে।

স্থানীয়রা জানান, সিডর, আইলা ও আমপানের কথা মনে উঠলে গা শিউরে ওঠে। আমপানের ধাক্কা সামলিয়ে ওঠার আগেই আবারো ইয়াসের আঘাত। পাউবো কর্তৃপক্ষের দায় সারা কাজের ফলে বারবার কপাল পোড়ে গাবুরাবাসীর। সরকার আসে, সরকার বদলায় শুধুই কেবল আশ্বাসের বানী দিয়ে যায়।