আমার মাই ফেভারিট বাবাটা মরে যাচ্ছে—–

আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৩
0

জাকারিয়া চৌধূরী :

এই পৃথিবীতে একমাত্র বাবাই এমন এক ব্যক্তি যে নিজের চেয়ে নিজের সন্তাকে এগিয়ে যেতে দেখতে চায়।
যতই দুঃখ আসুক না কেন, দুঃখের ছায়া কখনই বাচ্চাদের উপর যে পড়তে দেয় না সে হলো বাবা।
যদিও বাবার রাগ আমাদের কাছে রাগ বলে মনে হয় কিন্তু বাস্তবে তা হলো বাবার ভালবাসা।
বাবার ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ।
অনুশাসনের দ্বিতীয় নামটি কেবল বাবা।

সেই আমার আব্বার সামনে যেতেই তিনি তার হাতটা বাড়িয়ে দিলেন ঠিক শিশুরা যেভাবে কোলে উঠবার আবদার করে।

ভাবলাম কথাটা বললে এখনি বলতে হবে। গতকাল ভোরে বাবা আমার চোখের সামনে মরে যাচ্ছিল। আমি কখনো রোগীর হাত ছাড়ি না। কিন্তু সে সময় ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি ভীষন ভয় পেয়েছিলাম।

আমার বয়সের সাথে সাথে বাবা মায়ের কানেক্টিভিটি খুব কম ছিল। মা আমার কোলে মারা গেলেন, আমি বুঝতে পারলাম না বিষয়টা যাতনার। যারা একা একা বেড়ে উঠে তাদের অনুভূতি থাকে না হয়ত !!
সংসার কি বুঝলাম না। সেজন্য সংসার গড়ে তুলতে পারলাম না।

গতকাল ভোরে চোখের সামনে যখন বাবাটা মরে যাচ্ছিলো, আমি বুঝতে পারছিলাম কি করব !! কার নাম ধরে জোড়ে ডাক দেব !! আমার মনে হয়েছিল, আমি উপগ্রহ থেকে ছিটকে পরা কোনো মহাকাশচারী….
সিসিইউ’র ডাক্তারকেও বাইরে বের হয়ে যেতে ইশারা করলাম। উনি চলে গেলেন।

আব্বার কানের মুখ নিয়ে বললাম, পিতামাতার যত্ন কিভাবে নেয় আমি কখনো দেখিনি, শিখিনি। সংসার কিভাবে করে আমি আজতক জানিনা। বাবা, নি:সংগভাবে বড় হওয়া শিশু আর চৈত্রের পুড়ে যাওয়া দাবানলে জ্বলন্ত লাকড়ির পার্থক্য নাই। দুটোই এক সময় সতেজ থাকে, এক সময় নিস্তেজ হয়, পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। আপনার কাছে ক্ষমা চাইবার অধিকারও কি আমার আছে ? আমি আপনার জন্য,কিছু করিনি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি চলে গেলে, এ অনন্ত নক্ষত্রবীথিতে আমি পুরোপুরি একা হয়ে যাব। বাবা, আমার খুব ভয় করছে। পুরনো ভয়টা যেন ফিরে এলো…. বাবা আমার হাতে খুব অল্প একটু চাপ দিয়ে হাসিমুখে চোখ বন্ধ করলেন। আমি তার হাত ধরে কাদতে শুরু করলাম….

* একেবারে শৈশবে আব্বা আমাকে ‘মাই ফেভারিট’ শব্দটার উচ্চারন শেখাতেন। আমি বলতাম, মাইফা বাড়ি।
বাবার সাথে আজ রাতের কথোপকথন বেশিরভাগই আমার মনের সাথে আমার বলা কথা। বাবার সাথে কথা বলেছি খুবই কম। তবুও তো কথা হলো, দেখা হলো। সেটাই কম কিসে !!!