আ’লীগের ১০টি গ্রুপ ৫০ হাজার কোটি টাকা পরিকল্পিতভাবে লুট করেছে—- মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মার্চ ৯, ২০২৩
0

ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে সরকারের বিদ্যুত আমদানির চুক্তি ‘দেশবিরোধী’ অভিহিত করে অবিলম্বে এই চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার সকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ আদানির চুক্তি বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে একটা ভয়ংকরভাবে অসম চুক্তি, একটা দুরভিসন্ধিমূলক চুক্তি। এই কথা শুধু আমরা বলছি না, এটা প্রথম এসেছে ওয়াশিংটন পোস্টে। চুক্তির সব কপি এখন প্রত্যেকটি মিডিয়া হাউজের কাছে আছে এবং যারা বিদ্যুত খাত নিয়ে কাজ করে তাদের কাছে আছে। এটা এখন ওপেন সিক্রেটে চলে এসেছে।”

‘‘ আজকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রশ্ন উঠেছে যে, কিভাবে তারা(সরকার) এরকম চুক্তি করতে পারে। আদানির সঙ্গে এই চুক্তি এই দেশ বিরোধী, এই চুক্তি জনগন বিরোধী। আমি এই ফোরাম থেকে বলছি, এই চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুখাতে যে ইমুনিটি আইন করা হয়েছে সেই আইন বাতিল করতে হবে।”

কেনো এই ধরনের চুক্তি সরকার করছে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকারের বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কোনো দয়া-মায়া নেই, দায়বদ্ধতা-জবাবহিদিতা নেই। তারা চুরি করবে, বিদেশে টাকা পাঠাবে, বিদেশে তারা প্রসাদ তৈরি করবে, ব্যবসা করবে, বিলাসী জীবনযাপন করবে আর আমাদের সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিয়ে যাবে।”

‘‘ এটা কেনো করছেন সরকার? তারা করছেন টাকা দিয়ে ভবিষ্যতে আবার নির্বাচন কিনে নেবেন। তারা বিভিন্ন সংগঠনগুলো যারা নির্বাচন চালায় তাদেরকে তারা পরিস্কার ক্যাশ টাকা দিয়ে দেবেন। মানতে চায় না নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রিজাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে ওই পর্যন্ত কিন্তু খাম চলে যায়, পুলিশের কাছে খাম যায়, বিজেবির কাছে খাম যায় এমনকি স্ট্যাকিং ফোর্স যারা থাকে তাদের কাছেও খাম যায়। এটা সত্য, ঘটেছে ২০১৮ সালে।”

তিনি বলেন, ‘‘ এখন আবার নতুন কৌশল হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন খবর-টবর শুনি। উনারা বলছেন যে, আগের মতো তো পারা যাচ্ছে না পুলিশ দিয়ে, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে…। নতুন কৌশল কি? বিডিপি-আনসার দিয়ে করানো হবে।”

‘‘এখন যারা নির্বাচনের খবর রাখেন এবার যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো হয়ে গেছে সেই নির্বাচনে হঠাত দেখা গেলো কাউন্টিং করতে করতে একজন চেয়ারম্যা্ন এগিয়ে আছেন তারপর দেখা গেলো আরেক এগিয়ে চলে গেলো। ওখানে দেখা যাচ্ছে যে ফলাফল লিখছেন ওইটা বদলে দিচ্ছে। তার একজন ভিক্টিম কুমিল্লার সাক্কু। আমার এলাকায় একজন চেয়ারম্যান ২৫ বছর ধরে আছেন, তাকে এভাবে ১৯ ভোটে হারিয়ে দিলো। এই হচ্ছে নতুন নতুন কৌশল।”

গুলশানে লেকশোর হোটেলে এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) এর উদ্যোগে ‘মহাবিপর্যয়ে বিদ্যুত খাত : গভীর খাদে অর্থনীতি’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা সভা হয়।

এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন এ্যাবের মহাসচিব প্রকৌশলী হাছিন আহমেদ।

‘পরিকল্পিতভা্বে ওরা লুট করছে’

মির্জা ফখরুল ‘‘ এই সরকার পরিকল্পিতভাবে এই বাংলাদেশকে লুট করছে, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে জনগনের সম্পদ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। খুব বড় বড় কথা বলে যে, মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, সিঙ্গাপুর বানিয়ে ফেলেছে, মালয়েশিয়া বানিয়ে ফেলেছে। আরে মালয়েশিয়ায় যদি পত্রিকায় এরকম কয়েকটা খবর বেরুতো তার পরের দিন মালয়েশিয়ার ওই মন্ত্রিসভার কল্লাটা যেতো। এটা বাস্তবতা।

‘‘ প্রতারনা ছাড়া ওদের(সরকার) কোনো কৌশল নাই। আজকে প্রায় বক্তৃতায় বলেন যে, জনগনই হচ্ছে দেশের মালিক। সেই জনগনকে আপনি গত ১৪ বছর ধরে প্রতারনা করে আসল অধিকারটা কেড়ে নিয়েছেন- ওই যে একটা দিন ভোট দেয়ার অধিকারটা। ২০০৮ সাল থেকে শুরু করেছো এই প্রতারণা। ২০১৪ সালে ১৫৪জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেছো। একটা সরকার কি করে এতো অনৈতিক কাজ করতে পারে, একটা সরকার কি করে সংসদে মিথ্যা কথা বলে- ভাবা যায় না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই সরকার তারা জনগন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নই শুধু না, জনগনের ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।”

‘১০টি গ্রুপ ৫০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ১০টি গ্রুপ সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী, তারা ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। তারা হলেন, সামিট, ইউনাইটেড, এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল, বাংলা ক্যাট, ওরিয়ন, আরপিএসএল, এফবিসিএল, মোহাম্মদী গ্রপ, হোসাফ গ্রুপ, ডরিন। এরা সবাই এই শাসক গোষ্ঠির সঙ্গে জড়িত।”

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থায় চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ আপনি যদি হাসপাতালগুলোতে যান সাধারণ মানুষে যে কি কষ্ট আপনি চিন্তা করতে পারবে না। আমি কিছু দিন আগে আমার এক আত্বীয়কে দেখতে পিজি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। দেট ইজ বেস্ট হসপিটাল ইন দ্যা কান্ট্রি। ওখানে দেখি যে কেবিন সেই কেবিনে চেয়ার একটা ছিলো দেয়ালের সঙ্গে লাগানো। আমি বসতে গেলে আমার আত্বীয় বললেন, ওই চেয়ারে বইসের না, ওর একটা পায়া ভাঙা।”

‘‘ এটা কষ্টের কথা, দূঃখের কথা। এমন দেশ বানিয়েছি যে, আমরা সাধারণ মানুষেরা ৫০ বছর পরে তারা একটা চিকিতসার সুযোগ পাবে না।”

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিতে মানুষের চরম দুরাবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

‘এই দেশ ডীপ স্টেট তৈরি গেছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। নিরবকে আগে, গতকাল মুন্না(মোনায়েম মুন্না ও এসএম জাহাঙ্গীর) গ্রেফাতার করা হয়েছে। কোনো ওয়ারেন্ট নাই, গোলমাল নাই। আজকে গোটাকে দেশ একটা ডীপ স্টেট তৈরি করে ফেলেছে। সার্বেলেন্স।”

‘‘ঘর থেকে বেরুলে আপনি ধরা পড়ছে। বাসায় বসে কথা বললে ধরা পড়ছে। আবার একটা আইন করার প্রস্তাব দিয়েছে ডাটা প্রটেকশন ল। এই আইন হলে ইউ আর ফিনিসড। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর কথা বলেছি। আজকে এরকম ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট মানুষকে নির্যাতনকারী এই সরকার ক্ষমতায় দখল করে আছে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে পদত্যাগ করার জন্য। এছাড়া এই দেশ বাঁচতে না। এজন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

এ্যাবের সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে যুগ্ম মহাসচিব কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক সাংসদ আবদুস সোবহান, শাম্মী আখতার, এ্যাবের আশরাফ উদ্দিন বকুল, শাহজাহান আলী, গোলাম মাওলা, মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, একেএম জহিরুল ইসলাম জহির, নিয়াজ উদ্দিন ভুঁইয়া, শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, ‍সুমায়েল মুহাম্মদ, মাহবুবুল আলম, মো. হানিফ বক্তব্য রাখেন।