আ,লীগ ‘অসুর শক্তি’ হয়ে দেশের সব কিছু ধবংস করছে –মীর্জা ফখরুল

আপডেট: আগস্ট ৩১, ২০২১
0

আওয়ামী লীগ ‘অসুর শক্তি’ হয়ে দেশের সব কিছু ধবংস করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সোমবার রাতে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে দুই অসুর শক্তি বাংলাদেশে ওপরে চেপে বসে্ছে। একটি হচ্ছে করোনা, আরেকটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ নামে সেই অসুর শক্তি। আওয়ামী লীগ আমাদের সমস্ত শুভ অর্জনগুলো, যে ভালো জিনিসগুলো আমরা অর্জন করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলাম সেগুলোকে তারা অসুরের মতো ধলে-পিষে ধবংস করে দিচ্ছে।”

‘‘ আজকে আওয়ামী লীগ এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছে যেখানে কোনো সুস্থ কোনো অবস্থা বিরাজ করতে পারছে না। সত্য নির্বাসিত হয়েছে, এখানে অসত্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, অন্যায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং মানুষকে হত্যা-গুম-খুন-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ এখানে সৃষ্টি করেছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সেই অন্যায়কে পরাজিত করবার জন্য, ন্যায় ও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য আজকে আমাদের অবশ্যই শ্রীকৃষ্ণ যে পথ দেখিয়েছেন যুদ্ধ-লড়াই, অর্জুনকে তিনি যে উপদেশ দিয়েছিলেন রথ যাত্রার, সেই যাত্রায় আমাদেরকে বেরুতে হবে। সেই যাত্রার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে এই অসুরকে পরাজিত করতে হবে, আওয়ামী লীগকে পরাজিত করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”

‘‘ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আজকে ‍যুবকদেরকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে অর্জুনের মতো, পঞ্চপান্ডবের মতো আজকে সেই ন্যায়ের ‍যুদ্ধে আমাদেরকে জয়ী হতে হবে-এটাই হবে আজকে জন্মাষ্টমীর সবচেয়ে বড় শপথ।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ মুখে বলে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা কিন্তু কাজে তারা ….। আজকে তারা দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর সম্পত্তি দখল করে আছে, তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোকে বিনষ্ট করেছে, তাদের প্রতি অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো সেই একই কাজ করে যাচ্ছে।”

‘‘ আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, বাংলাদেশে মানুষ নিসন্দেহে সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করেন না, সাম্প্রদায়িকতা বিরুদ্ধে”আমি তারা লড়াই করে একটা সুন্দর অবস্থা তৈরি করতে সমসময় অগ্রনী ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু এটাকে বার বার ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করেছে আজকে যারা ক্ষমতা জোর করে দখল করে নিয়ে আছেন সেই আওয়ামী লীগ। তারা সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করেছে শুধু আজকে নয় সেই ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত একই কাজ তারা করে যাচ্ছে।”

হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমরা একটা বৈরী সময়ে জন্মাষ্টমী পালন করছি। আমরা জন্মাষ্টমী পালন করেছি যতদূর মনে পড়ে আমাদের গুলশানের অফিসের হল ঘরে। আমাদের সকলের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি পালন করেছি এবং অনুষ্ঠানটি শেষ হয়েছে মিষ্টিমু্খের মধ্য দিয়ে। আজকে দুর্ভাগ্য আমাদের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান করার কারণে আমরা সবাইকে মিষ্টিমুখ করাতে পারছি না। কিন্তু আমাদের ভালোবাসা সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।”

‘মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তিনি আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কটুক্তি করছেন, অন্যায় কটুক্তি করছেন।”

‘‘ আমি খুব পরিস্কার করে বলতে চাই যে, আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন কিনা তা প্রমাণ করতে হবে। আপনি আজকে যে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়েছেন এই মন্ত্রণালয়ে সৃষ্টি করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি সৃষ্টি করেছিলো। আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের আপনি অপমান করছেন। তারজন্য আপনাকে অবশ্যই জাতির সামনে জবাবদিহি করতে হবে।”

তিনি বলেন, ‘‘ আসলে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাতেও বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ একদলীয একটা শাসনব্যবস্থা, এক ব্যক্তির একটা শাসনব্যবস্থায় তারা বিশ্বাস করে সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছে।”

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উতসব জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে গীতা পাঠ করেন রাজধানীর স্বামীবাগের ইসকনের শ্রীমান তেজো গোবিন্দ দাস ব্রম্মাচারী।

হিন্দু-বৌদ্ধ,খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও অমলেন্দ্র দাস অপুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুন্ড, অর্পনা রায় দাস, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুণ রায় চৌধুরী, কামাক্ষা চন্দ্র দাস, তরুন দে, জয়দেব রায় ও পার্থ দেব মন্ডল এবং রামকৃষ্ণ মিশনের কালী কৃষ্ণানন্দা মহারাজ বক্তব্য রাখেন